মোড় ঘুড়ানোর সুপার হিরো

‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবলে যুগে যুগে বহু রথী-মহারথী এসেছেন। অনেকে সুযোগের অভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। কেউ কেউ বড় বড় ক্লাবের হয়ে খেললেও বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন বেঞ্চে। কেউ আবার বদলী হিসেবে অল্প সময়ের জন্য নেমেই করেছেন বাজিমাত।

ফুটবল একটা কৌশলগত খেলা। মাঠে ১১ জন খেলোয়াড় একটি কৌশলকেই অনুসরণ করে খেলেন। তবে, প্রয়োজনবোধে মাঝপথেই কৌশল পাল্টাতে পারেন কোচ। আর সেই কৌশল কাজে লাগাতে কিছু খেলোয়াড় অদল-বদলও হয়। অনেক সময় এই বদলী খেলোয়াড়রাই ম্যাচে ভাগ্য পাল্টে ফেলেন। তারাই তো সুপার সাব। ইতিহাস কাঁপানো সব সুপার সাবদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • ওলে গুনার সোলশায়ার (নরওয়ে)

নরওয়ের এক অখ্যাত ক্লাব থেকে ১৯৯৬ সালে ১.৫ মিলিয়ন ইউরোতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি দেন ওলে গানার সোলসকজার। নরওয়ের এই ফরোয়ার্ড ৩৬৬ ম্যাচে ১২৬ গোলস করেন।

১৯৯৯ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে সাব হিসেবে নেমে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে শিরোপা এনে দেন এই ফুটবলার। সাব হিসেবে নেমে বেশ কয়েক ম্যাচে গোল করেছেন তিনি। ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপার সাব হিসেবে পরিচিত তিনি।

  • অলিভার জিরু (ফ্রান্স)

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের হয়ে নিজের শেষ দুই মৌসুম বেশ দুর্দান্ত পারফরম করেছিলেন ফ্রান্সের ওলিভার জিরু। সাব হিসেবে খেলতে নেমে ৪৫ ম্যাচে ১৯ গোল করেছেন এই তারকা।

এরপর যোগ দেন চেলসিতে। চেলসির হয়েও সাব হিসেবে অসাধারণ পারফরম করছেন তিনি। সাউদাম্পটনের বিপক্ষে সাব হিসেবে খেলতে নেমে দুই গোল করে দলকে জেতান তিনি।

  • জার্মেইন ডিফো (ইংল্যান্ড)

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ওয়েস্ট হামের হয়ে সাব হিসেবে খেলতে নেমে ২৪ গোল করেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে তিনি খেলেছেন কিছু সময়। ২০০৯ সালে তাঁর গোলেই হল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে ইংলিশরা। এরপর তিন মৌসুম টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়েও খেলেন জার্মেইন ডিফো।

  • জাভিয়ের হার্নান্দেজ (মেক্সিকো)

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে পাঁচ মৌসুম খেলেছেন জাভেয়ের হার্নান্দেজ। ‘চিচারিতো’ নামেই তিনি বেশ পরিচিত। খেলার চেয়ে বেশিটা সময় তিনি বেঞ্চ গরম করেছেন। ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে ৫৯ ম্যাচে ১৩ গোল করেছেন সাবে নেমে। অন্যতম সেরা সুপার সাব হিসেবে পরিচিত এই মেক্সিকান স্ট্রাইকার।

  • নুয়ানকো কানু (নাইজেরিয়া)

নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড নুয়ানকো কানু আর্সেনালে প্রায়ই বেঞ্চ গরম করেছেন। প্রথম একাদশে সুযোগ পেতেন না বললেই চলে। ১৯৯০-২০০০ এর মাঝে আর্সেনালের হয়ে সাব হিসেবে নেমে করেছেন ১২ গোল।

আয়াক্স অ্যামস্টারডামের হয়ে  চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও জিতেছেন তিনি। দু’টি প্রিমিয়ারশিপ টাইটেল ও উয়েফা কাপ ও এফএকাপের শিরোপা জিতেছেন এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড।

  • ডেভিড ফেয়ারক্লাউ (ইংল্যান্ড)

ইংলিশ স্ট্রাইকার ডেভিড ফেয়ারক্লাউ সত্তরের দশকে খেলেছিলেন লিভারপুলের হয়ে। বেশিরভাগ সময়ই কাটয়েছেন বেঞ্চে। সাব হিসেবে খেলেছেন ৬২ ম্যাচ। এই ৬২ ম্যাচে করেছেন ১৮ গোল। লিভারপুলের হয়ে সর্বমোট ১০০ ম্যাচে ৩৪ গোল করেছেন ডেভিড ফেয়ারক্লাউ।

  • তোরে আন্দ্রে ফ্লো (নরওয়ে)

৩ লাখ ইউরোতে চেলসির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন নরওয়ের ফরোয়ার্ড তোরে আন্দ্রে ফ্লো। ১৬৩ ম্যাচে নীল জার্সি গায়ে করেছেন ৫০ গোল। এর প্রায় অর্ধেক গোলই তিনি করেছেন সাব হিসেবে নেমে। চেলসি ছেড়ে পরবর্তীতে সাদারল্যান্ড ও লিডস ইউনাইটেডের হয়েও খেলেছেন নরওয়ের এই ফরোয়ার্ড।

  • টিম কাহিল (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফুটবলার টিম কাহিল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এভারটন ও পরবর্তীতে জামশেদপুরের হয়ে খেলেছেন। ফুটবল পাড়ায় এসেছেন খানিকটা দেরীতে। সাব হিসেবেই খেলেছেন অধিকাংশ ম্যাচ।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কিংবা স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপে জাপানের হয়ে ৭০ মিনিটে খেলতে নেমেই গোল করেন। কাহিলের গোলে প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

এই তালিকায় ইদানিংকালে আরো কয়েকটা নাম যোগ হতে বাধ্য। এখানে ম্যানচেস্টার সিটির এডিন জেকো আসতে পারেন, আসতে পারেন বার্সেলোনার থিয়াগো আলকান্তারা, কিংবা লিভারপুলের ড্যানিয়েল স্টারিজ। যদিও ক্লাব পাল্টানোর সাথে সাথে তাঁদের ভূমিকাতেও পরিবর্তন এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link