পনেরোর সুখ ছুঁয়েছে মাদ্রিদ

আমরা এখন বলতে পারব, আমাদের অর্ধেক চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিততে পারেনি আর কোনো দল! এটা কোনো দম্ভ নয়, এটা তৃপ্তি, এটা অধিকার, আমাদের অর্জন।

কে ভাবতে পেরেছিলেন, ফাইনালে প্রথম গোলটি করবেন দানি কার্ভাহাল! ডর্টমুন্ডের ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা দুই ডিফেন্ডার, আরও লম্বা ফুটবলারদের মাঝ থেকে লাফিয়ে বল জালে জড়ালেন আমাদের ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির কিংবদন্তি। এবার নিয়ে আমাদের সবশেষ ছয়টি ফাইনালেই খেলা একমাত্র ফুটবলার স্মরণীয় করে রাখলেন তার নিজস্ব ‘হেক্সা’ কিংবা ‘সেইস’।

ভিনির গোলের পর টনি ক্রুসের হাসিটা দেখে মন ভরে গেছে। আমার কাছে ফাইনালের সবচেয়ে মোহনীয় মুহূর্ত সেটি। টনি তখন জেনে গেছেন, তার বিদায়ী ম্যাচের কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি মিলে গেছে!

সেই ভালোলাগা, গর্ব আর তৃপ্তি মিশে ছিল আমাদের মহানায়কের হাসিতে। মাঠ থেকে শেষবার বেরিয়ে যাওয়ার সময় যে উল্লাস আর আবেগের যুগলবন্দী দেখালেন, সেই স্না ই পা র চরিত্রই মিশে থাকল তাতে।

মৌসুমজুড়ে আর কতজনের কথা আলাদা করে বলা যায়! ভিনি, বেলিংহ্যাম, লুনিন, রুডিগার, মঁদি, হোসেলু, ব্রাহিম, শেষ দিকে ভাস্কেস, মদ্রিচ – বলতে হবে আসলে সবার নামই।

তবে সবকিছুর আগে, সবার ওপরে আমাদের কোচ। দলের মূল গোলকিপার ও মূল দুই সেন্টারব্যাককে ছাড়া প্রায় গোটা মৌসুম খেলে, একের পর এক চোটসহ প্রায় ৪০টি চোটের ঘটনা নিয়ে, কোনো জেনুইন গোলস্কোরার ছাড়া খেলেও চার ম্যাচ বাকি রেখে লিগ চ্যাম্পিয়ন, এমনকি ফাইনালে চুয়ামেনিকে ছাড়া খেলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। এসব তো রূপকথার মতো ব্যাপার!

কিংবদন্তি কোচ হওয়ার পরও গত মৌসুম পর্যন্ত তার কৌশল এবং মাঠে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার যেসব সমালোচনা ছিল, সব তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন এই মৌসুমে। ম্যান ম্যানেজমেন্টকেও তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবার।

ফুটবল ইতিহাসে আরও কীর্তিমান কোচ আছেন, ট্রেবলজয়ী কোচ আছেন। কিন্তু এই মৌসুমে এই রেয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে কার্লো আনচেলত্তি যা করে দেখালেন, কোনো এক মৌসুমে একজন কোচের সাফল্যের ক্ষেত্রে এটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। মাইলফলক হয়ে থাকবে। উদাহরণ হয়ে থাকবে। এমন কিছু আর হয় না। হবে কি না, জানি না।

এই মৌসুম শুরুর আগে আমাদের চাওয়া ছিল, কোনোরকমে সম্মানটুকু বাঁচলে হয়। সেই মৌসুমে বিশাল ব্যবধ্যানে লা লিগা ও অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের অনুভূতি আসলে কোনো কিছুতেই প্রকাশ করার মতো নয়…

ম্যাচ শেষে ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, যতবারই এই সাফল্য ধরা দিক, যতবারই শিরোপা জেতা হোক, প্রতিবারই এটা নতুন কিছু, প্রতিবারই এই স্বাদ যেন অনির্বচনীয়।

কার্ভাহালকেই দেখুন না! ১১ মৌসুমের মধ্যে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ফেললেন তিনি। তবু ম্যাচ শেষ হতেই দু’হাতে মুখ ঢেকে হাঁটু ভেঙে মাঠে নুইয়ে পড়লেন কান্নায়। এই কান্নার মতো সুখ আর হয় না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link