আইএনএফ ক্লেয়ারফঁতাঁ, চ্যাম্পিয়নদের নেপথ্য কারিগর

ফুটবল অ্যাকাডেমির কথা উঠলে সবার প্রথমেই আসে লা মাসিয়ার নাম। আর সেই নামটার সঙ্গে লিও মেসির নাম এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে ভোলার নাম। বাকি, আয়াক্স, বায়ার্ন, ম্যান ইউ, চেলসি, স্পোর্টিং লিসবোয়াঁ এই নামগুলোও আসে।

দক্ষিণ আমেরিকার নামগুলি দেখতে গেলে আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্স আর রিভারপ্লেটের দুটো অ্যাকাডেমির কথা মনে পড়ে। ব্রাজিলে গ্রেমিও আর সাওপাওলোয় দুটো দারুণ অ্যাকাডেমি আছে। অফ লেট পর্তুগালের বেনফিকা বা ফ্রান্সের লিয়ঁর অ্যাকাডেমির কথা বলতেই হয়।

তবে আজ এসব অ্যাকাডেমির কথা বলতে বসিনি। হয়েছিল কী, ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল হারার পর থেকেই ফ্রান্স ভাবতে শুরু করেছে যে তাদের ইংল্যন্ড বা স্পেনের মত একটা অ্যাকাডেমি করা দরকার যা সঠিক প্রতিভা খুঁজে এনে তাদের লালনপালন করে পেশাদার ফুটবলার হতে সাহায্য করবে।

ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান ফার্নান্দ সস্ত্রে ১৯৭৬ সালে এসে দায়িত্ব দেন স্টেফান কোভাক্সকে। কোভাক্স রুমানিয়ায় বেশ কিছু ফুটবল অ্যাকাডেমি চালিয়েছেন।

সেই মত কোভাক্স কাজ শুরু করেন এবং ১৯৮৪র ইউরো বিজয়ের পরে তা জোরকদমে এগিয়ে শেষমেশ উত্তরমধ্য ফ্রান্সের ক্লেয়ারফঁতাঁ অঞ্চলে স্থাপিত হয় ফ্রান্সের জাতীয় যুব ফুটবল অ্যাকাডেমি। সালটা ১৯৮৮।

তারপর থেকে দেখুন ফ্রান্সের বিশ্ব ও ইউরোপীয় ফুটবলে পারফরম্যান্স। আজকের আগে পর্যন্ত তিনটে বিশ্বকাপ ফাইনাল, দুটো জয়। দুটো ইউরো ফাইনাল, একটা জয় আর একটা নেশন্স লিগ।

সুজনে বলে যে ফ্রান্স দুটো দল যদি বিশ্বকাপে নামায় তাহলে দ্বিতীয় দলটা ন্যূনতম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে দেবে। এবারের অবস্থাই দেখুন, দলে পগবা, কন্তে, বেঞ্জিমা, লুকাস, কিম্পেম্বে নেই। কিন্তু তাতে কী! হাতেম বেন আরফার মত প্রতিভা ফ্রান্স দলে স্থান পান না।

আইএনএফ ক্লেয়ারফঁতাঁ। পুরো নাম, ইন্সতিতুত ন্যাশিওনাল দু ফুতবল দু ক্লেয়ারফঁতাঁ। সেই ১৯৮৮ থেকে দেশের বারোটা জায়গায় তাদের উপ অ্যাকাডেমি স্থাপন করেছে। এবং একে একে নিকোলাস আনেলকা, থিয়েরি অঁরি, উইলিয়াম গালাস, লুই সাহা, আবউ দিয়াবি, মুসা দিয়াবি, হাতিম বেন আরফা, ব্লেস মাতুইদি, অলিভিয়ের জিরু এবং সর্বোপরি কিলিয়ান এমব্যাপে।

১৩ থেকে ১৫ বছরের বাচ্চাগুলিকে কঠোর স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে বেছে নিয়ে ২ বছর নিরবচ্ছিন্ন উন্নতমানের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি পুষ্টি ও খাদ্যাভাসের মাধ্যমে একএকজন ওয়র্ল্ড বিটার তৈরি করে ফেলছে।

শুধুমাত্র ফ্রান্স নয়, আফ্রিকার প্রাক্তন ফ্রেঞ্চ কলোনিগুলি থেকেও প্রতিভা বেছে নিয়ে লালন পালন করে আইএনএফ ক্লেয়ারফঁতাঁ। আলজিরিয়ার ইয়াসিন ব্রাহিমি একটা উল্লেখযোগ্য নাম। তেমনই পর্তুগালের রাফায়েল গুরেরো।

এরপর লাইন দিয়ে এক এক করে ফরাসি ফুটবলাররা এই সেন্টার ফর এক্সেলেন্স থেকে উঠে আসছেন। ফ্রান্স ফুটবল, তৃণমূল স্তরে যে কাজটা করে যাচ্ছে তারই ফল তারা পাচ্ছে হাতে নাতে। আজ জিতুক বা না জিতুক। আইএনএফ ক্লেয়ারফঁতাঁর ঐতিহ্য কিন্তু ইতোমধ্যেই সুস্থাপিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link