স্রোতের জলে গা ভাসিয়ে, আবেগ মুড়িয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের অদ্ভুত আচরণ বেশ দৃষ্টিকটু। একটা দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে সমর্থকদেরও সমান অংশে ভূমিকা থাকে।
বিশ্ব দরবারে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটা সহজ মাধ্যম এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর বিপরীত প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষেই। সেই সুযোগে সংস্কৃতি আর চিন্তাভাবনার প্রসারও ঘটছে দ্রুতগতিতে।
কিন্তু বাংলাদেশের যেন মন নেই সংস্কৃতির প্রসারে। বিশেষ করে ক্রিকেট সমর্থকদের। তারা স্রেফ নিজের রাগটা উগড়ে দিতে পারলেই বাঁচে। দেশের ক্রিকেটারদের চুন থেকে পান খসে পড়লেই শুরু হয় নিন্দার ঝড়। সমালোচনার বালাই নেই, কটাক্ষই যেন মূল অস্ত্র।
সেই একই সমর্থক গোষ্ঠী যেন নতুন এক মিশনে নেমেছে। ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দুই ভিন্ন দলে খেলছে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ও লিটন দাস। এর মধ্যে মুস্তাফিজ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন। লিটনকে এখনও বিবেচনা করেনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাতেই যেন ফুসে উঠেছে এক শ্রেণির ক্রিকেট সমর্থক। যারা কি-না প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট দলগুলোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা পোস্ট গুলোতে বিরুপ মন্তব্য আর রিয়েকশন দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তাতে অবশ্য লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না।
এ কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন, আইপিএলের দলগুলো ভীষণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে। একটি দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকে বেশ কয়েকটি গ্রুপ। এদের কাজের ক্ষেত্র আলাদা। দল বা ফ্রাঞ্চাইজিগুলো কেবলই এক ছাতার কাজ করে। সেখানে যেমন টিম ম্যানেজমেন্ট থাকে, ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট টিমও থাকে।
এই দুই গ্রুপের কাজের ধরণ ভিন্ন। এদের কর্মক্ষেত্রও ভিন্ন। এরা কোন ভাবেই একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। ক্রিকেট মাঠে কোন দলটা খেলবে, সে সিদ্ধান্ত কেবলই টিম ম্যানেজমেন্টের। সেখানে থাকেন হেডকোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচক। তারা কোন খেলোয়াড়কে দলে রাখবে, আর কাকে রাখবে না সেটা কেবলই তাদের সিদ্ধান্ত।
সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে পুরো টিম ম্যানেজমেন্টকে নানান ধরণের ছক কষতে হয়। গোল টেবিল বৈঠকের পরই সেই সিদ্ধান্তের ফলাফল নিয়ে হাজির হয় অধিনায়ক। এখানে সোশ্যাল মিডিয়াতে কাকে নিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, কাকে দলে চাইছে সমর্থকরা সে বিষয়টি মুখ্য নয়।
বরং দলের প্রয়োজন কতটুকু মেটাতে পারবে, সামগ্রিক পারফরমেন্স আর ফর্ম কেমন, কোন ইনজুরি জনিত সমস্যা রয়েছে কি-না, এসব কিছুর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ার রিয়্যাক্ট কিংবা মন্তব্যর মত নিষ্প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কোন ধরণে সুফল বয়ে নিয়ে আসবে না।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের আরেকটু ‘স্মার্ট’ হওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র আবেগের চক্রে নিজেদের ঘূর্ণায়মান গিনিপিগ বানিয়ে ফেললে চলবে না। নেতিবাচকতার বিস্তারে ক্রিকেটটা থমকে যাবে একটা সময়। সে পরিস্থিতিও নিশ্চয়ই কাম্য নয়। ক্রিকেটটা তো আখেরে ভদ্রলোকের খেলা, সমর্থকদেরও তো ভদ্রলোক হওয়া চাই!