রোমাঞ্চের রাতে ছয় গোলের ‘অ্যাবসুলুট সিলেমা’!

এমন সব ম্যাচের জন্যেই এই তল্লাটের মানুষ চোখের পাতা এক করে না। এমন সব ম্যাচের অপেক্ষায় কেটে যায় কতশত রজনি। একটা ঘোর, একটা ধুম্রজাল, এক নেশাতুর নয়নে স্রেফ ভেবে যাওয়া- 'ঘটনাটা কি ঘটল!'

‘অ্যাবলুসুট সিনেমা’! রোমাঞ্চের সর্বোচ্চ শিখর, বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া করা ছয় খানা গোল। বার্সেলোনা কিংবা ইন্টার মিলান জেতেনি কোন দল, জিতেছে ফুটবল, জিতেছে কোটি কোটি দর্শক। এমন সব ম্যাচের জন্যেই এই তল্লাটের মানুষ চোখের পাতা এক করে না। এমন সব ম্যাচের অপেক্ষায় কেটে যায় কতশত রজনি। একটা ঘোর, একটা ধুম্রজাল, এক নেশাতুর নয়নে স্রেফ ভেবে যাওয়া- ‘ঘটনাটা কি ঘটল!’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল। এমনিতেই ফুটবল ভক্তদের চাঁদরাতের খুশি। এর মধ্যে উড়ন্ত বার্সেলোনার সামনে আরেক পরাশক্তি ইন্টার মিলান। জম্পেশ লড়াইয়ের আভাস ছিল। কিন্তু মাত্র ৩৬ সেকেন্ডের সেই আভাস সত্য প্রমাণিত হবে, কেউ হয়ত ভাবেনি ঘুনাক্ষরেও।

ম্যাজিকের শুরু একেবারে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই। মার্কাস থুরামের ব্যাকহিল গোল। ওই মুহূর্তই পুরো ম্যাচের পূর্বাভাস দিয়ে দেয়। ৩৬ সেকেন্ডে গোল হজম করার পর বার্সেলোনা যেন একেবারে উন্মত্ত হাতির পালে পরিণত হল। ইন্টারের পাঁচ জনের রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ।

 

আলেসান্দ্রো বাস্তোনি, ইয়ান সোমাররা গোলবার সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছিল ভীষণ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে দেঞ্জেল ডামফ্রিসের দারুণ বাইসাইকেল গোল। ০-২ গোলে এগিয়ে সফরকারী ইন্টার মিলান। ম্যাচের তখন ২১ মিনিট চলমান। ম্যাচ থেকে বার্সা ছিটকে গেছে, যারা ভেবেছিল- তাদের যেন ভুলের ঘোর কাটে, তারা আবার বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই ম্যাচ সেখানেই হচ্ছে না শেষ।

কাতালান ক্লাবটির প্রতি বিশ্বাস আনতে বাধ্য করেছেন ১৭ বছরের এক ছোকড়া। ডানপাশটায় তার জন্যে দুইজনকে প্ল্যান্ট করেছিলেন সিমিওনে ইনজাগি। কিন্তু দু’জন কেন, চার রাখলেও কাজ হবে না লামিনের বিপক্ষে। তিনি ঠিকই নিজের জন্যে জায়গা করে নেবেন। আর তারপর চোয়াল ঝুলে যাওয়ার উপক্রম ঘটাবেন। ২৪ মিনিটে সেই বিখ্যাত বা-পায়ের কার্লার। সাইডবারে লেগে বল চলে যায় জালে, ১-২ তখন স্কোরলাইন।

এরপর দৃশপটে হাজির দ্য মিডফিল্ড মায়েস্ত্রো- পেদ্রি। বক্সের ভেতর উড়িয়ে বল পাঠালেন। রাফিনহার মাথা ঠিকই খুঁজে নিল সে বল। ঠান্ডা মাথায় ফাঁকা জায়গায় বলটা হেড দিয়ে ফেললেন রাফিনহা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ততক্ষণে দৌড় শুরু করে দিয়েছেন ফেরান তোরেস। ব্যাস, ৩৮ মিনিটে ২-২ গোলের সমতায় স্বাগতিক বার্সেলোনা।

প্রথমার্ধেই রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্যে অঢেল রসদ ছিল। দ্বিতীয়ার্ধেও কমেনি সেই রোমাঞ্চের পারদ। দেঞ্জেল ডামফ্রিস আবার এলেন ইন্টারের উদ্ধারকারী ত্রাতা হয়ে। এবারও সেট পিস, কর্ণার থেকে এদফা হেডে গোল করলেন ডামফ্রিস। দুই খানা গোল করে বসলেন ইতালিয়ান ক্লাবের ডাচ রাইটব্যাক। ২-৩ গোল ব্যবধানে এগিয়ে তখন অতিথিরা।

বার্সা দমে যায়নি। বরং দুই মিনিটের মাথায় তারা আবারও ফেরে সমতায়। এবার ব্লাউগ্রানাদের পক্ষে গোলটা আদায় করেন রাফিনহা। বুদ্ধিদীপ্ত কর্ণার ডি-বক্সের বাইরের অঞ্চলে। মাটি কামড়ানো সেই বলটা পাঠানো হয় রাফিনহার জন্যে।

এরপরই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে শট চালালেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। ক্রসবারে বল লেগে তা আবার ইন্টারের গোলরক্ষক সোমারের মাথায় লাগে। দিনশেষে সেটিকে সোমারের আত্মঘাতি গোলের তকমা দেওয়া হয়েছে। এটা বরং অন্যায়। শক্তিশালী এক দূরপাল্লার শট চালিয়েও গোলটা নিজের বলতে পারছেন না রাফিনহা, এটা নিশ্চয়ই দুঃখজনক।

তবে দল সমতায় ফিরেছে, গোল যেভাবেই আসুক। এরপও কিন্তু আক্রমণ থেমে থাকেনি। ইয়ামালের কার্লার চিপ সাইডবারে লেগে ফেরত হয়েছে। বুটের সামান্য অংশের জন্যে ইন্টারের একটা গোল বাতিল হয়েছে অফসাইডে। তবুও দুই দলই শেষ অবধি স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। সফরকারীরা ড্র নিয়ে ফিরছে নিজেদের ডেরায়। স্বাগতিকদের স্বস্তি ঘরের মাঠে অন্তত হারতে হয়নি।

তবে ইনজাগির  লো ব্লক, ওভারলোড রক্ষণকে ভাঙতে বার্সার প্রয়োজন হয়েছে ব্যক্তিগত নৈপুন্য। অন্যদিকে সেট পিস থেকে বার্সার জন্যে হুমকি তৈরি করেছে ইন্টার। অতএব, স্যান সিরো-তে যে ইন্টার এক ছটাক ছাড় দেবে না, সেটা অনুমিত। হ্যান্সি ফ্লিক নিশ্চয়ই সেই ম্যাচের ছক নিয়ে বসেছেন ইতোমধ্যেই। বার্সার যে কাটাতেই হবে দশ বছরের চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপার খরা।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link