বিস্ময় থেকে বিপর্যয় ও একজন রদ্রিগেজ

আপনার হামেস রদ্রিগেজের কথা কি মনে আছে? মনের কোণে নিশ্চয়ই সেই ভলিতে করা গোলটা ভেসে উঠেছে। বছর দশক আগে বিস্ময় বালক হয়ে পদার্পণ করেন তিনি বিশ্ব ফুটবলের রঙিন মঞ্চে। সবাই ধরে নিয়েছিল ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম তারকা হবেন তিনি। শাসন করবেন গোটা বিশ্ব। হয়েছে তার উলটো।

২০১৪ বিশ্বকাপের গোলেন্ড বুটও নিজের দখলে করেছিলেন। এরপর দখল করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের চুক্তি। বিশ্বের অন্যতম সফল ও শক্তিধর ক্লাবে জায়গা করে নেন তরুণ হামেস রদ্রিগেজ। স্বপ্নের যাত্রায় ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমাঠে যে তিনি জায়গা করতে পারছিলেন না।

কেননা তখন থেকেই যে রিয়ালের মিডফিল্ডে চলছে লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুসদের উত্থানের শুরু। সাথে ইস্কো ছিলেন, সামি খাদিরা ছিলেন। ১০ নম্বর জার্সি গায়ে চাপিয়েও তাই হামেস থেকে যাচ্ছিলেন সাইড বেঞ্চে। অগ্যতা নিজেকে মেলে ধরতে ধারে চলে গেলেন জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানে দিনকাল তার ভালই যাচ্ছিল, মন্দের ভাল আরকি।

কেমন একটা থমকে যাওয়া পরিস্থিতি। উন্নতির গ্রাফ নেই। হামেসের জীবন আর ক্যারিয়ার যেন থেমে যায় একটি বিন্দুতে। সেখান থেকে তাকে পরিত্রাণ দেন কার্লো আনচেলত্তি। তাকে যুক্ত করেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এভারটনে।

সেখান থেকে ক্যারিয়ার জড়তা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার শুরুই করেছিল। তারপর আবার পরিবর্তন আসে এভারটনের ডাগআউটে। আনচেলত্তির জায়গায় রাফা বেনিতেজ আসলে, সেই বেঞ্চ গরম করবার কাজেই সর্বাধিক সময় ব্যবহৃত থাকেন হামেস রদ্রিগেজ।

তাইতো খানিকটা বাধ্য হয়েই এভারটন ছাড়তে হয়। তবে তার বিপক্ষে অভিযোগ ছিল তিনি অনুশীলনে খুব একটা সময় দেন না। ফিটনেস নিয়েও তার তেমন কোন আগ্রহ নেই। গা ছাড়া ভাবে তিনি চলেন। ঠিক সে কারণেই তাকে ধরে রাখার চেষ্টাও করেনি এভারটন। হামেসের ঠিকানা হয় কাতারের ক্লাব আল রায়য়ান। সবাই ধরে নিয়েছিল আরও এক সম্ভাবনাময় তারকা অকালেই ঝড়ে গেল।

ইউরোপ ছেড়ে গেলেই যে ক্যারিয়ার গ্রাফে নিম্নমুখী হয়। অর্থকড়ির হিসেব যদিও কমে না। তবুও হামেসের মত সম্ভবনা হারানোর পথ ধরেই এগিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে খুঁজে পান ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও পাওলো-তে। কি অভাবনীয় অধ:পতন!

সবার চোখে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া হামেস আবার ফিরেছেন। তিনি পরিণত হয়ে ফিরেছেন কলম্বিয়ার জার্সি গায়ে। দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অধীনে দল অপরাজিত থাকার ধারা রেখেছে অব্যাহত। কোপা আমেরিকাতে ব্রাজিলকে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার দল। গ্রুপের তিন ম্যাচের দুই ম্যাচেই তিনি হয়েছেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ।

ব্রাজিলের সাথে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তো গোলও করেননি তিনি। এমনকি গোলেও নেই তার কোন অবদান। তবুও পুরো ম্যাচ জুড়েই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডকে রেখেছিলেন খোলসবন্দী। তাছাড়া প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বল ছো মেরে কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অগ্রগামী।

স্রেফ নিজের ইচ্ছাশক্তির বলে, তিনি নিজেকে যেন বদলে ফেলেছেন। হয়েছে আরও বেশি কর্মঠ। এবারের কোপা আমেরিকাকে যেন তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে। তাইতো নিজেকে নিঙড়ে দিচ্ছেন। হামেস রদ্রিগেজ কি পারবেন শেষ অবধি আবারও ইউরোপে ফিরতে? সময় হয়ত জানে এই প্রশ্নের উত্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link