২০১৩ কি ১৪ সালের কথা। তখন সবে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। ডেভিড ওয়ার্নার নামের এক আমেরিকান লোকের সাথে পরিচয় হল। কথায় কথায় আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম যে নাম নিয়ে কখনও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে কিনা। সে যা বলল তার সার সংক্ষেপ এরূপ, এমন অনেকবারই হয়েছে যে আইডি বা পাসপোর্ট চেক করার সময় তাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে তার নাম ঠিক আছে কিনা। পরে সে জানতে পারে যে তার নামে অস্ট্রেলিয়ায় একজন বিখ্যাত ক্রিকেটার আছেন।
ঘটনাটা বলেছিলাম আমার দুজন বন্ধুকে। এর মধ্যে একজন তো এক কাঠি সরেস। ‘গ্লেন জেমস ম্যাক্সওয়েল’ নাম দিয়ে অ্যাকাউন্টই খুলে ফেলল ফেসবুকে। সে অবশ্য অন্য গল্প।
ছোটবেলা থেকে একটা প্রবাদ শুনে আসছি ‘নামে নামে যমে টানে’। এটা কি শুধু আমাদের এলাকায়ই প্রচলিত কিনা ঠিক জানা নেই। এর মানেটাও ঠিক জানা নেই। তবে জেমস অ্যান্ডারসনের কিছুটা জানা থাকার কথা। কারণ তার নামেই আছেন গোটাদশেক অ্যাথলেট।
আমেরিকাতেই ফিরে যাই আবার। সেখানে এই নামে আছেন একজন বাস্কেটবল ও একজন ফুটবল প্লেয়ার। অস্ট্রেলিয়াতে টেনিস প্লেয়ার, স্কটল্যান্ডে গলফার, ইংল্যান্ডে আছেন প্যারা অলিম্পিক সাঁতারু।
ক্রিকেটই বা পিছিয়ে থাকবে কেন!
অ্যান্ডারসনের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০২-য়ে। তার ঠিক একশো বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একটি টেস্ট খেলেন জেমস হেনরি ‘বিডি’ অ্যান্ডারসন, সে টেস্টে অধিনায়কত্বও করেছিলেন তিনি।
শুধু কি নাম?
বলা হয় একজন মানুষের নাকি পৃথিবী জুড়ে সাতজন ‘লুক-অ্যালাইক’ থাকে। জেমস অ্যান্ডারসনের ক’জন আছে কে জানে! তবে একজনকে তো পাওয়া গেছে। তিনি আমেরিকান অভিনেতা ডেভিড ওয়ালটন। অবশ্য অ্যান্ডারসনের যে চেহারা, তাতে খেলা ছাড়ার পর অনায়াসে অভিনয়ে সুইচ করতে পারবেন তিনি।
সুইচ করার কথা যখন বলছি, সেদিন ক্রিকভিজের এক টুইটে দেখলাম, টেস্টে স্পিনারদের বিপক্ষে খোদ কেভিন পিটারসেনের চেয়েও বেশি রিভার্স সুইপ খেলেছেন অ্যান্ডারসন!
বোলিংয়ের হাত সুইচ করতেও পারদর্শী তিনি। অল্পবয়সে তো প্রোপার বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনই করতেন, নেটে এখনও করেন মাঝেসাঝে। কিংসমিডে এক প্রদর্শনী ম্যাচে ইয়ান বেলকে বাঁ-হাতি স্পিনে আউট করার নজিরও আছে তার।
টেস্ট অভিষেকের সপ্তাহখানেক আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন অ্যান্ডারসন। আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ছিলেন তখনকার ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন।
এক সপ্তাহ পর ইংল্যান্ডের ৬১৩তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় অ্যান্ডারসনের। ক্যাপ তুলে দেন অধিনায়ক নাসেরই।
সে বছরই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তিনে তিন পেয়ে যান অ্যান্ডারসন।ওভালে পাকিস্তানের আব্দুল রাজ্জাক, শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ সামিকে টানা তিন বলে আউট করে প্রথম ইংরেজ বোলার হিসেবে লুফে নেন ওয়ানডে হ্যাটট্রিক।
শচীন টেন্ডুলকারের সাথেও বেশ একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তাঁর। ১৪ টেস্টে মাস্টারকে আউট করেছেন নয়বার। টেস্টে এতবার তাকে আউট করতে পারেনি আর কেউ। এইতো সেদিনও অ্যান্ডারসনের দারুণ প্রশংসা করছিলেন শচীন।
গুণে গুণে খেলে ফেলেছেন ১৫৩ টেস্ট। বল করেছেন তেত্রিশ হাজারের বেশি। ২৬.৮৫ গড়ে পেয়েছেন ৫৮৯ উইকেট। প্রথম ফাস্ট বোলার হিসেবে ছয়শো উইকেট পাওয়া তাই সময়ের ব্যাপার এখন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও হাতছানি দিচ্ছে হাজার উইকেটের মাইলফলক। কাঁটায় কাঁটায় আড়াইশো ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৯৬৪ উইকেট।
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে আছেন বলা যায়। ওয়ানডে খেলছেন না প্রায় পাঁচ বছর। তাই ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতাটা হয়নি। ইংল্যান্ডের কাছে যে প্রতিযোগিতাটা টেস্টে বিশ্বকাপতুল্য, কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি, সেই অ্যাশেজে তার পারফরম্যান্স ঠিক অ্যান্ডারসন-সুলভ নয়।
৩২ টি অ্যাশেজ টেস্টে ৩৪.৫ গড়ে, ৬৭.৭ স্ট্রাইক রেটে নিয়েছেন ১০৪ উইকেট। অ্যাশেজে তার গড় ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে আট বেশি, স্ট্রাইক রেট এগারো। সেদিন এক সাক্ষাৎকারে পড়ছিলাম যে, ২০২১ এর অ্যাশেজ শেষে সম্ভবত বিদায় বলবেন অ্যান্ডারসন। তবে কি সেখানেই সব হিসেব চুকোবেন?