আইসিসি ইভেন্ট আর মোহাম্মদ শামির সাফল্য—দুটো যেন সমান্তরাল সত্য। ২০২৩ বিশ্বকাপে ছিলেন দুর্দান্ত, এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে নামার আগে ফিরলেন বড় এক ইনজুরি কাটিয়ে। ছন্দে ফেরাটা সহজ ছিল না, দীর্ঘ বিরতির ছাপ থাকারই কথা। কিন্তু শামির গল্প তো আর গড়পড়তা ক্রিকেটারদের মতো নয়, তাঁর প্রত্যাবর্তন মানেই নতুন কোনো শোকেসে পুরনো জাদুর ঝলক।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দুবাইয়ে ম্যাচটা ছিল তাঁর জন্য সত্যিকারের পরীক্ষা। দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকা একজন পেসারের জন্য প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা সহজ কিছু নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ যে সিরিজে ফিরেফিলেন, সেখানে বলার মত কোনো পারফরম্যান্স ছিল না।
কিন্তু, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হতেই শামি যেন নিজেকেই মনে করিয়ে দিলেন—তিনি এখনও বিশ্বমানের, এখনও ব্যাটারদের দু:স্বপ্ন হয়ে উঠতে পারেন। প্রথম স্পেলেই সুইংয়ের জাদুতে এলোমেলো করে দিলেন বাংলাদেশি ব্যাটারদের। নতুন বলে সিম পজিশন আর নিখুঁত লেংথের মিশেলে উইকেট নেওয়ার ধরণটা ছিল ক্লাসিক শামি স্টাইল।
শুরুটা করেন বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকারকে বোকা বানিয়ে। ভেতরে ঢোকা এক নিখুঁত ডেলিভারি — বল ব্যাট ছুয়ে চলে গেল উইকেটের পেছনে। এরপর এল মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট, শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরলেন তিনি। শামির স্যুইংয়ের জবাব খুঁজে পাচ্ছিলেন না বাংলাদেশি ব্যাটাররা।
এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, তিনি ২০২৩ সালের আহমেদাবাদের ফাইনালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র দু’টি। টপ অর্ডারের পর বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডারও ছেটে ফেললেন। মাঝখানে আউট করেন জাকের আলীকে, যিনি স্বপ্ন দেখাছিলেন বাংলাদেশকে।
শামি আসলে আলাদা এক চরিত্র। ইনজুরি তাঁকে পিছিয়ে দিতে পারে, ছন্দ নড়বড়ে করতে পারে, কিন্তু তাঁর বোলিংয়ের ধার কমায় না। দুবাইয়ে তিন উইকেট নেওয়ার দিনে পুরনো সেই ভয়ংকর শামিরই দেখা মিলল, যার সামনে একসময় বিশ্বকাপের ব্যাটাররা নতজানু হয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এমন শামিকে পেয়ে নিশ্চয়ই ভারত এখন আর জাসপ্রিত বুমরাহকে মিস করবে না।
অনেকগুলো মাইলফলকও করে ফেললেন এর মধ্যে। ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছে যান জাকের আলীকে। আইসিসি ইভেন্টে তাঁর উইকেট ৬০ টি, ওয়ানডে ফরম্যাটে। এই কীর্তি ভারতের অন্য কারো নেই। সত্যি, আইসিসি ইভেন্টের সাথে তাঁর সম্পর্কটা অন্যরকম!