লোকেশই সত্যিকারের ক্রাইসিস ম্যান

এই ইনিংসের পর আর কোনো প্রশ্ন থাকল না। আর কোনো আক্ষেপের জায়গা থাকল না। সমালোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়ে, কেবল একটাই শব্দ লেখা রইল — ‘রাহুল আছেন!

লং-অন দিয়ে বল উড়ে গেল সীমানার বাইরে। স্টেডিয়ামে এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা, তারপর বিস্ফোরিত উল্লাস! লোকেশ রাহুল দাঁড়িয়ে রইলেন, চোখে এক অদ্ভুত তৃপ্তি। এই ছক্কাটা শুধু একটা জয় নয়, এটা এক বছর ধরে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর। এটা সমালোচনার জবাব, এটা দায়মোচন, এটা প্রমাণ যে তিনি এখনও ‘দ্য ক্রাইসিস ম্যান’!

দৃশ্যটা কি চেনা লাগছে? চোখের সামনে নিশ্চয়ই ভেসে উঠছে ২০১১ বিশ্বকাপের সেই শেষ মুহূর্ত—ধোনির ছক্কায় ভারত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। আজ ঠিক একইভাবে, ঠিক একই দৃশ্যপটে রাহুলের ব্যাট থেকে ছুটে গেল এক অবিস্মরণীয় শট, যা ভারতকে নিয়ে গেল শিরোপার এক ধাপ কাছে।

তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে, এটা ছিল রাহুলের নিজের জন্য এক মুহূর্ত। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ১০৭ বলে ৬৭ রানের মন্থর ইনিংসের জন্য তাঁকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। গ্যালারি, সোশ্যাল মিডিয়া—সব জায়গায় কেবল একটাই প্রশ্ন, ‘রাহুলের ব্যাট এত স্লো কেন!’ এক বছর পর, সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, আরও একবার চাপের মধ্যে, রাহুল দেখালেন—তিনি শুধু ধীর-স্থির নন, তিনিই আসলে ভারতের আসল ‘ক্রাইসিস ম্যান’।

একটা অস্থির ইনিংস নয়, ৩৪ বলে ৪২ রান। কিন্তু এর প্রতিটি বল ছিল অমূল্য। বিরাট কোহলি ফিরেছেন ৮৪ রান করে, অক্ষর প্যাটেলও বেশিক্ষণ টেকেননি। তখনই ব্যাট হাতে ধীরস্থির দাঁড়িয়ে গেলেন রাহুল, যেন ট্রেনের সামনে হাত বাড়িয়ে দাঁড়ানো স্পাইডারম্যান, যিনি জানেন—এটা তাঁরই দায়িত্ব।

শেষটা তাঁর হাতেই লেখা ছিল। হার্দিক পান্ডিয়া রান তাড়ার গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ডেজার্ট পরিবেশন করার শেষ ছোঁয়াটা দরকার ছিল। এবার আর রাহুল ভুল করেননি, এবার তিনি সময় নিয়েছেন, কিন্তু শেষও করে এসেছেন।

এই ইনিংসের পর আর কোনো প্রশ্ন থাকল না। আর কোনো আক্ষেপের জায়গা থাকল না। সমালোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়ে, কেবল একটাই শব্দ লেখা রইল — ‘রাহুল আছেন! যতবার ভারত বিপদে পড়বে, ততবারই জ্বলে উঠবে তাঁর ব্যাট। আরও প্রতাপ নিয়ে, আরও রূদ্র হয়ে।

Share via
Copy link