রবিনহো, নায়ক থেকে খলনায়ক!

পায়ের জাদুতে অতীতের সাম্বা যুগ ফিরিয়ে আনতে জানতেন, ইউরোপিয়ান ঘরানার সাথে তাঁর নান্দনিকতা দারুণ ভাবে মিলে যেত। ‘নেক্সট পেলে’ বলা হত তাঁকে একটা সময়। না, রবসন ডি সৌজা ওরফে রবিনহোর ব্যাপারটা ঠিক ব্রাজিলের অন্য আরো শত শত ‘নেক্সট পেলে’র মত নয়। মাত্র ১৮ বছর বয়সে যখন ব্রাজিলে পেলেরই সাবেক ক্লাব স্যান্তোসে খেলেন, তখন পেলে নিজের মুখেই কথাটা বলেছিলেন।

এখানেই শেষ নয়, ব্রাজিলের হয়ে যখন অল্প কিছুদিন স্বর্ণ সময়ে ছিলেন, তখন রীতিমত রোনালদো ফেনোমেনোনের নাম ভুলিয়ে দিয়েছিলেন সমর্থকদের মন থেকে। সেই রবিনহো ৩৬ বয়সে সেই স্যান্তোসেই ক্যারিয়ারটা শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন ক্লাবটি থেকে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন মাসে মাসে ২০৭ পাউন্ড। বাংলাদেশি মূল্যমানে সেটা মোটে ২৩ হাজার টাকার মত!

অথচ, একটা সময় দলবদলের বাজারে কি চড়া দাম ছিল তাঁর!

২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে তিনি যখন ব্রাজিলের তুরুপের তাস ছিলেন, তখন দলবদলের বাজারে তাঁকে নিয়ে টানাটানি তো হবেই। ২০০৮ সালে চেলসির চোখে ধুলা দিয়ে যখন রবিনহোকে ম্যানচেস্টার সিটি দলে টানে তখন ট্রান্সফার ফি ছিল ৩২.৫ মিলিন পাউন্ড, তখন ব্রিটেনের দলবদলের বাজারে আগের সব রেকর্ড ভেঙে যায়। তখন সপ্তাহের বেতনই ছিল তাঁর এক লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড।

সিটিতে আসার আগেই রবিনহো খেলে এসেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে, সেটাও আবার ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে আলোচিত তারকাবহুল ‘এল গ্যালাকটিকো’-তে। তিন মৌসুম খেলে দলটার হয়ে পারফরম্যান্সও নেহায়েৎ মন্দ নয়।

যদিও, সেখান থেকে ক্যারিয়ারের গ্রাফ যেমন হওয়ার কথা ছিল রবিনহোর, আদৌ তা হয়নি। সিটিতে প্রথম মৌসুমে ১৪ গোল করে আলোচিত হন। তারপরও পরের মৌসুমে কোচ রবার্তো মানচিনির সাথে গণ্ডগোলে খেলতে পারেন মাত্র ১০ টি ম্যাচ।

২০১০ সালে চলে আসলেন সিরি ‘এ’। গন্তব্য এসি মিলান। ক্লাবটির হয়ে পাঁচ মৌসুমে ১০৮ ম্যাচ খেলে ২৫ গোল করার পরই রবিনহোর চূড়ান্ত পতন শুরু হয়।

২০১৫ সাল থেকে তিনি কখনো স্যান্তোস, কখনো চীনা লিগ কিংবা তুরস্কের লিগে খেলছেন। পায়ের সেই হারানো জাদুটাও আর নেই। পারফরম্যান্সও খুব আহামরী কিছু নয়। বিশেষ করে শুরুর রবিনহোর ছিটেফোটাও খুঁজে পাওয়া দুস্কর ছিল।

রবিনহো ও স্যান্তোসের কথায় একটা ব্যাপার পরিস্কার যে, ৩৬ বছর বয়সী এই ‘নিজেকে হারিয়ে ফেলা’ তারকা কৈশোরের ক্লাবেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান। পারিশ্রমিকটাও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। যদি, মূল দলে জায়গা করে নিতে পারেন – তাহলে ১০ ম্যাচ পর তিনি মাসে ৪১ হাজার পাউন্ড পারিশ্রমিক পাবেন বোনাস-সহ।

তবে, যাই হোক না কেন জীবনের কলঙ্ক তাতে কোনো ভাবেই মুছবে না। মিলানে থাকতেই তিনি ক্রীড়াবিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন।

সময়টা ২০১৭ সাল। তখন লাইমলাইটের অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন এক সময়ের ‘সম্ভাব্য সুপারস্টার’। তাঁকে ন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইতালির আদালত। যে নিকৃষ্ট ঘটনায় জড়িত থেকে তিনি এই সাজা পান সেটা অবশ্য ২০১৩ সালের ঘটনা।

মিলানের এক নৈশক্লাবে এক ২২ বছর বয়সী এক আলবেনিয়ান নারী ধর্ষিত হন। সেই ঘটনায় রবিনহো-সহ আরো পাঁচজন জড়িত ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরই রবিনহোর সাজা ধার্য্য হয়। যদিও, যখন এই রা আসে তখন রবিনহো খেলছিলেন ব্রাজিলে। আর ব্রাজিলের আইন বলে, তাঁর দেশের নাগরিককে কোনো ভিনদেশি কোর্ট দন্ডাদেশ দিতে পারে না।

তাই, জেলে যেতে হয়নি রবিনহোকে। রবিনহো পুনরায় সেই রারে বিরুদ্ধে আপিলও করেন। সেই নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা এখনও চলছে। ফলে, এটুকু নিশ্চিত যে অন্তত ২০২২ সাল অবধি জেল এড়িয়ে যেতে পারবেন রবিনহো। তবে, এর পর কি হবে, জানা নেই!

অথচ, কি অমিত প্রতিভা নিয়েই না ফুটবলের ময়দানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। এসেছিলেন নায়ক হতে, কিন্তু ফুটবলের পাতায় নিকৃষ্ট খলনায়ক হিসেবে ঠাঁই হল তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link