দু’টো বিষয় পাকিস্তানে একে অপরের সাথে জড়িত। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে দেশটির ক্রিকেট। এই সম্পৃক্ততা নতুন নয়। বেশ বহুকাল ধরেই চলমান। সেই ধারায় এবার বলি হয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। অন্তত একটু তীক্ষ্ণ নজরে অবলোকন করলেই বিষয়টি যেন আরও খানিকটা স্পষ্ট হয়।
পাকিস্তানে মাস দু’য়েক আগেই বদল হয়েছে সরকার। ঠিক তার পরই বদল এসেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে। সেই পদে যোগ দিয়েছেন মহসিন নাকভি। পাকিস্তানের ক্রিকেটে সরকারের প্রভাব না থাকা বরং বিস্ময়ের। তাইতো সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ সহয়তা পাচ্ছেন নাকভি। শুধু কি তাই? তিনি যে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও।
ঠিক সেখানে আসলে সুপ্ত রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা প্রতিহিংসার কেন্দ্র। খুব হীনমন্যতার পরিচয়ও দিয়েছে সম্ভবত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। অন্তত ক্রিকেটের সাথে সরাসরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জুড়ে দেওয়া বেজায় দৃষ্টিকটু। তবে সেটা যে দেশটির চলমান এক অলিখিত ধারায় পরিণত হয়েছে।
মাত্র একটি সিরিজে শাহীন শাহ আফ্রিদি দিতে পেরেছিলেন পাকিস্তানকে নেতৃত্ব। সেই সিরিজেও চলেছিল নির্বাচকদের নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাতে করে ৪-১ ব্যবধানে লজ্জাজনক এক পরিস্থিতিই সঙ্গী হয়েছিল শাহীন শাহ আফ্রিদির। যদিও তাতে পুরোপুরি তার দোষ রয়েছে কি-না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সে বিষয়টি উল্লেখ করেই শাহীন শাহ আফ্রিদিকে দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি। তার জায়গায় পুনরায় অধিনায়কত্ব পেয়েছেন বাবর আজম। সেখানেই থেমে নেই পিসিবি থেকে প্রকাশ পেয়েছে এক বিবৃতি। শাহীন শাহকে উদ্ধৃত করে সেই বিবৃতিতে শাহীন-বাবর সম্পর্ক অটুট থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে লেখা হয়েছে, ‘পাকিস্তান জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়াটা ভীষণ গর্বের। দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব আমাদের অধিনায়ক, বাবর আজমকে সমর্থন জানানো। আমি তাঁর অধীনে খেলেছি, তাঁর প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান রয়েছে।’
যদিও বেশ কয়েকবার শাহীন বলার চেষ্টা করেছেন যে এই বিবৃতি তার নয়। এমনকি এই বিষয় নিয়ে তিনি বোর্ড চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির সাথে আলাপ করবার কথাও উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকবার। তবে সেই আলাপ যে বেশিদূর অবধি গড়ায়নি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর ঠিক এখানেই সেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গন্ধ খুঁজে পাচ্ছে ভক্ত-সমর্থকরা। লাহোর কালান্দার্স কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছিলেন ইমরান খান। ফ্রাঞ্চাইজিটি শাহীনের মত এক পেসারকে অধিনায়ক করায় সেই প্রশংসা কুড়িয়েছিল বিশ্বজয়ী অধিনায়কের কাছ থেকে। কেননা তিনি মনে করেন যে পেসাররাই সেরা অধিনায়ক।
এ নিয়ে কালান্দার্সের সত্ত্বাধিকারী বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, ইমরান খান আমাদের সাধুবাদ জানিয়েছিলেন শাহীনকে লাহোর কালান্দার্সের অধিনায়ক বানানোয়।’ এছাড়া কালান্দার্স সত্ত্বাধিকারী সামিন রানা আরও বলেন, ‘সে (ইমরান খান) শাহীনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে যা সে (শাহীন) করছে তাই যেন করতে থাকে এবং কখনো যেন নিজেকে পরিবর্তন না করে।’
তাতেই অন্তত প্রমাণ হয় এক সময়কার কিংবদন্তি ক্রিকেটারের গুডবুকেই রয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপত্তি ঠিক সেখানেই আন্দাজ করছেন অনেকেই। কেননা রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে ইমরান বর্তমান পাকিস্তান সরকারের বিরোধী। আর তার সাথে সুসম্পর্ক শাহীনের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
তাছাড়া শাহীন শাহ আফ্রিদিও রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিজের সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে। তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘আমাকে এমন কোনো অবস্থায় ফেলবেন না, যেখানে আমাকে আমার খারাপ দিকটি দেখাতে হয়। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। কেননা, এতদিন যাবত আপনি হয়তো আমার ভাল দিকটিই দেখে এসেছেন। তবে যখন আমার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করবে, তখন আমাকে এমন কিছু করতে দেখবেন যা আগে কখনো করতে দেখেননি।’
শাহিনের সাম্প্রতিক দেওয়া প্রতিক্রিয়াতে অন্তত স্পষ্ট হয় ঘটনা ততটা অগভীর নয় যতটা ভাবা হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের হস্তক্ষেপ আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ক্রিকেটে ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। তেমন আভাস দিয়েছেন খোদ রশিদ লতিফ।
সাবেক এই পাকিস্তানি অধিনায়ক বলেন, ‘এটা পাকিস্তান ক্রিকেটের এক নিয়মিত ঘটনা। যখনই নতুন চেয়ারম্যান আসে তখনই সে অধিনায়ক পরিবর্তন করে। ইমরান খানের আমল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে।’
আর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান যে সরকার দ্বারা প্রভাবিত থাকেন বা থেকেছেন তা তো রীতিমত ওপেন সিক্রেট। এখন দেখবার পালা শাহীন আফ্রিদি কাণ্ডের জল ঠিক কতদূর অবধি গড়ায়।