রবিবার শেষ মুহূর্তের গোলে ফুলহামের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে এমন ম্যাচ জয়ের দিনেই আবার বোমা ফাটিয়েছেন ম্যান ইউ এরই ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পিয়ার্স মরগ্যানের এক সাক্ষাৎকারে তিনি ম্যান ইউতে তাঁর অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন।
একই সাথে তিনি মনে করেন, ম্যান ইউ তাঁর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। তাছাড়া কোচ এরিক টেন হ্যাগের উপর তাঁর কোন সম্মান নেই, এমনটিও তিনি সেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। আর এমন সব মন্তব্যের পরেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায় পুরো ফুটবল বিশ্বে।
এ দিকে ফুলহামের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার পর ম্যান ইউ কোচ এরিক টেন হ্যাগ বলেছিলেন, ‘আমরা একসাথে আছি। ক্লাবের ডিরেক্টর, কোচিং স্টাফ, এমনকি ফ্যান-সবার মধ্যে একতাবদ্ধতা আছে। আমরা ঠিক পথে আছি। আমাদের শক্তিশালী একটা ভিত্তি আছে। সবার মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে।’
তবে রোনালদোর সাক্ষাৎকারের খন্ডিত অংশ প্রকাশিত হওয়ার পর এরিক টেন হ্যাগের এমন বিবৃতি আড়ালেই চলে গেছে। নতুন করে গুঞ্জন উঠছে, রোনালদোর এমন মন্তব্যের পর এখন কোন পথে হাঁটবে ম্যানচেস্টার ইউনাটেড? এখন পর্যন্ত ম্যান ইউ থেকে রোনালদোর এমন মন্তব্যের উপরে কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। কারণ পিয়ার্স মরগ্যানকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকার এখনো সম্পূর্নভাবে প্রকাশিত হয়নি।
আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার রাতে এই টক শো-টি সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হবে। ম্যান ইউ ক্লাব কর্তৃপক্ষ সেই পর্বেরই অপেক্ষায় আছে। পুরো ফ্যাক্টটি সম্পূর্নভাবে সামনে আসলেই তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবে। তাই এখন পর্যন্ত রোনালদো ইস্যুতে অফিশিয়ালি কোনো বিবৃতি জানায়নি ম্যানইউ।
গত সোমবার রোনালদোর দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরেকটি ব্যাপার উঠে আসে। সেখানে তিনি দাবি করেন, ক্লাবের প্রি-সিজন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ না করার একমাত্র কারণ ছিল তাঁর কন্যা আর বান্ধবীর অসুস্থতা। তারা হাসপাতালে ছিল, বিধায় সে প্রি-সিজন ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু সে সময়ে নাকি রোনালদোর কথা বিশ্বাসই করেনি ক্লাবের ডিরেক্টররা।
টটেনহ্যামের বিপক্ষে ম্যাচে শেষ মুহূর্তে রোনালদোকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামানোর কথা থাকলেও রোনালদো মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সেটার জন্য পরে রোনালদো দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। কিন্তু পিয়ার্স মরগ্যানের ইন্টারভিউয়ে তিনি কোচকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এরিক আমার প্রতি সম্মান রাখেনি, তাঁর প্রতিও আমার কোনো সম্মান নেই।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ইস্যুর পর রোনালদোর পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে? রোনালদোর এখন যা বয়স, তাতে ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলো তাঁকে নিতে চাইবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ এখানে স্যালারিরও একটা ব্যাপার রয়েছে। তবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, নাপোলি তাঁকে নিতে চাইছে। এ ছাড়া সৌদি আরবের একটা ক্লাব তাঁকে অফার করেছে। তবে সে সব প্রস্তাব এখন পর্যন্ত গুঞ্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
রোনালদোর এমন মন্তব্যের পর, মোটামুটি নিশ্চিতই ম্যান ইউও তাঁকে টানতে চাইবে না। কারণ তিনি কোচের পাশাপাশি ম্যান ইউ বোর্ড নিয়েও তির্যক মন্তব্য করেছেন। গ্লেজার ফ্যামিলিকি নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন উঠিয়েছেন। এ কারণে অনেকের কাছে তোপের মুখেও পড়া শুরু করেছেন রোনালদো।
রোনালদোর এমন বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারের পর তাঁকে নিয়ে আপোস করার আর সুযোগ দেখছেন না ম্যান ইউ-এর সাবেক ফুটবলার রিও ফার্দিন্যান্ড। তিনি বলেন, ‘এখন একটাই উপায়। তাঁকে ক্লাব ছাড়তে হবে। আমার মনে হয় না, ক্লাব আর তাঁকে ধরে রাখতে চাইবে। এমনকি এটাও মনে হয় না, সে ক্লাবে ফিরে আসতে চাইবে।’
ব্রাইটনের সাবেক ফুটবলার গ্লেন মারে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কেউই তাঁকে ক্লাবে পেতে চাইবে না। তাঁর আর ফিরে আসার কোন রাস্তা নেই।’
ইউনাইটে উই স্ট্যান্ড ম্যাগাজিনের সম্পাদক অ্যান্ডি মিটেন বলেছেন, ‘তাঁকে তো জোর করা হয়নি। সে নিজেই এই সামার ট্রান্সফারে অন্য ক্লাবে চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তেমন কোনো ক্লাব আগ্রহ না দেখানোতে সে থেকে গেছে। আমার মনে হয়, ম্যান ইউ সমর্থকরা তাঁকে আর বিবেচনা করছে।’
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য পর্তুগালের ট্রেনিং সেশনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এরই মধ্যে রোনালদোর ভবিষ্যত গন্তব্য নিয়ে একটা অনিশ্চয়তার রেশ তৈরি হয়েছে। কারন এটা এক প্রকার নিশ্চিতই যে, ম্যান ইউ তে তাঁর পথচলার সমাপ্তির ক্ষণ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
আগামী উইন্টার ট্রান্সফারেই সম্ভবত দলবদলে নিজের নাম লেখাবেন রোনালদো। তবে ইউরোপের সেরা ক্লাব গুলো থেকে কোনো অফার আসবে কিনা সেটি নিয়েও শঙ্কা আছে। এখন আপাতত সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা। তবে এর মধ্যে, আরো একটি আগ্রহের বিষয় হয়ে থাকছে, আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবারে তিনি পিয়ার্স মরগ্যানের সাক্ষাৎকারে নতুন কোন বিস্ফোরক নিয়ে হাজির হন।