অনুশীলনে একদিন খানিকটা মন খারাপ নিয়েই বসে আছেন ইয়াসির আলি রাব্বি। কাট শটটা খুব একটা ভালো খেলতে পারেননা তিনি। রাব্বি তাই দারস্থ হলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্সের কাছে। বলেই ফেললেন, ‘কোচ, আমার কাট শটটা আসলে ঠিক মন মত হচ্ছেনা।’
ব্যস, জেমি সিডন্সও কাজ শুরু করে দিলেন রাব্বির কাট শট নিয়ে। নেটে দুজন লম্বা সময় শুধু এই একটি শট নিয়েই কাজ করেছেন। তাও এক-দুই সেশন না, পুরো তিন দিন এই কাট শট নিয়ে কাজ করেছেন ইয়াসির আলি রাব্বি ও জেমি সিডন্স। ফলও মিলেছে হাতে নাতে। সপ্তাহ তিনেক বাদেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে দারুণ একটা কাট করে বাউন্ডারি আদায় করে নেন ইয়াসির আলি রাব্বি।
একটু পুরনো গল্পে ফেরা যাক। ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জেমি সিডন্স। লম্বা একটা সময় তিনি বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন। ২০১১ সালে চুক্তি শেষ হলে বিদায় নেন। তাঁর সময়েই ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দটা খুজে পেতে শুরু করেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা। এক অর্থে বাংলাদেশের ক্রিকেটের আধুনিক হয়ে ওঠাটা শুরু হয় সিডন্সের সময়ে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপটায় আমুল পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন সিডন্স। তাঁর হাত ধরেই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন। এই কয়েকজন ব্যাটসম্যানই গত এক দশক বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সার্ভিস দিয়েছেন।
তবে এখন সময় এসেছে নতুন দিনের, নতুন প্রজন্মের। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন নতুন সব তারকাদের উত্থান হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার জন্য নিজেদের আরো শাণিত করা প্রয়োজন। এবারো দায়িত্বটা পড়েছে সেই পুরনো শিক্ষকের কাধেই। যার হাত ধরে সাকিব, তামিমরা বড় হয়েছেন এবার তাঁর হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে ইয়াসির আলি রাব্বি, আফিফ হোসেনদের মত রাইজিং স্টারদের।
এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি। জেমি সিডন্স দায়িত্ব নেয়ার পর তরুণদের কাছ থেকে ভালো কিছু ইনিংসও দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনেও দেখা যায় তরুণ ব্যাটসম্যানরা তাঁর কাছে থেকে শেখার জন্য কতটা মুখিয়ে থাকে। জেমি সিডন্সও প্রত্যেককে নিয়ে আলাদা ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে দায়িত্ব নেয়ার পর ভালো-খারাপ দুই দিকই দেখেছেন সিডন্স। ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের দারুণ সাফল্য যেমন দেখেছেন। আবার টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটারদসের মুষড়ে পড়ার দৃশ্যও দেখেছেন এই কোচ। তবে এই সময়টায় তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির জায়গা ইয়াসির আলি রাব্বি। এই ব্যাটসম্যানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য দারুণ ভাবে তৈরি করছেন জেমি সিডন্স। রাব্বির ব্যাটিং নিয়েও নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রাব্বির কাট শটের সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন জেমি সিডন্স। ম্যাচে রাব্বির এই শটের দারুণ ব্যবহার করায় নিজের আনন্দের কথাও জানিয়েছেন তিনি। সিডন্স নিজের পেইজে রাব্বির ব্যাটিং এর ভিডিও আপলোড করে লিখেন,’ ঠিক এই কারণেই আমি কোচিংটা ভালোবাসি। হয়তো আমাদের একটু সময় প্রয়োজন কিন্তু আমাদের ক্রিকেটাররা আরো বেশি স্কিলড হচ্ছে। আশাকরি ম্যাচেও দ্রতই এসবের প্রতিফলন দেখা যাবে।’
ওদিকে অনেক কাঠ খর পুড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের পায়ের নিচে মাটি খুজে পেয়েছেন ইয়াসির আলি রাব্বি। লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশ দলের সাথে থাকা রাব্বির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট মাচে। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও অভিষিক্ত হন এই ব্যাটসম্যান।
গত ছয় মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পাওয়াদের একটি এই ব্যাটসম্যান। টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই ধীরে ধীরে নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করছেন রাব্বি। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর হাফ সেঞ্চুরিটি এখন পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ারের বড় বিজ্ঞাপন।
সবিমিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের ভবিষ্যৎ ভাবা হচ্ছে চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটারকে। টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাতে ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও মিডল অর্ডারে ভরসার নাম হয়ে উঠতে পারেন রাব্বি। তিন ফরম্যাটেই মানিয়ে নিতে পারা রাব্বি তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় সম্পদই।
রাব্বিকে নিয়েও স্বপ্নটাও তাই বড়ই। ইয়াসির আলি রাব্বি ও জেমি সিডন্সের এই জুটি বাংলাদেশকে আরো অনেক সাফল্য এনে দিক। রাব্বি, আফিফরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভরসার নাম হয়ে উঠুক।