নেট বোলার থেকে আইপিএলের বিস্ময়

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তখন চলছে ২০২০ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচে হঠাৎ চোখ আটকে গেল স্পিডোমিটারের দিকে। অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনে বোলিং করা এক তরুণের একটি ডেলিভারি ছুঁলো প্রতি ঘন্টায় ১৭৫ কিলোমিটার। যদিও স্পিডোমিটার ভুল তথ্য দিয়েছে কিনা সেটা নিয়ে তখনো সন্দেহ সবার। তবে সেই ডেলিভারি করা মাথিশা পাথিরানাকে সবাই চিনলেন সেখান থেকেই।

সেই স্পিডোমিটার যদি ভুল তথ্য দেয়ও, পাথিরানা যে নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার বা তার আশেপাশের গতিতে বোলিং করতে পারেন তার প্রমাণ তিনি রেখেছিলেন সেই টুর্নামেন্টেই। অনেকটা শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গার মত বোলিং অ্যাকশন হওয়ায় নতুন মালিঙ্গা
হিসেবে পরিচিতি পেতে বেশি সময় লাগেনি পাথিরানার।

স্কুল ক্রিকেটে খেলতে থাকা মাত্র ১৭ বছর বয়সী পাথিরানার ভিডিও দেখেই তাকে পছন্দ করে চেন্নাই সুপার কিংসের টিম ম্যানেজমেন্ট। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি নিয়ে তখনই পাথিরানাকে নেট বোলার হিসেবে নিয়ে আসে চেন্নাই।

সেই নেট বোলার পাথিরানাই কিনা এবারের আইপিএলের সেরা আবিষ্কার। প্রতি ম্যাচেই ডেথ ওভারে চেন্নাইয়ের হয়ে রীতিমতো অবিশ্বাস্য সব স্পেল করছেন পাথিরানা। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে তো চার ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকারে হলেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ও।

নেট বোলার থেকে চেন্নাইয়ের মূল দলের আসার যাত্রাটা খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি পাথিরানার জন্য। শ্রীলঙ্কায় ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ ও দুবাইয়ে টি-টেন লিগ খেলার পর সুযোগ পেয়ে গেলেন চেন্নাইয়ের মূল দলেও। রত্ন চিনতে মোটেও ভুল করেনি চেন্নাইয়ের স্কাউট টিম। ২০২২ সালে চেন্নাইয়ের কিউই পেসার এডাম মিলনের ইনজুরি মূল দলে সুযোগ করে দেয় পাথিরানাকে।

আনকোরা প্রতিভাদের সেরাটা বের করে আনায় জুড়ি নেই চেন্নাই অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনির। প্র‍থম দেখায়ই ধোনি পছন্দ করে ফেললেন পাথিরানাকে। তবে এমন বিরল প্রতিভাকে যে খুব যত্ন করে ব্যবহার করতে হবে সেটাও চেন্নাই ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে রাখলেন ধোনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা খুব বেশি সাড়া জাগানিয়া না হলেও আইপিএলে নিজের অভিষেক মৌসুমেই সরগোল ফেলে দিয়েছেন পাথিরানা। পূর্বসূরি লাসিথের মত ভয়ংকর সব ইয়োর্কার করছেন অনায়াসেই। ডেথ ওভারে পাথিরানাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সব দলের ব্যাটাররাই। মাত্র ২০ বছর বয়সেই হয়ে উঠেছেন চেন্নাইয়ের বোলিং অ্যাটাকের মূল ভরসা।

এমন বিরল প্রতিভাকে যেন খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হয় সে ব্যাপারে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন ধোনি। পাথিরানাকে যেন লাল বলের ক্রিকেটে ব্যবহার না করা হয় সেটিও বলে রেখেছেন।

এমনকি ওয়ানডে ক্রিকেটের থেকেও আপাতত দূরে রাখতে বলেছেন। এমন বোলিং অ্যাকশনে বোলিং করায় বেশ চাপ পড়ে পাথিরানার কাঁধে। তাই পাথিরানাকে ব্যবহার করতে হবে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link