তাঁকে এভাবে দেখাটা বিস্ময়কর, চমকপ্রদ ও কুৎসিৎ। যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা দায়। আগের সময়টার যেন স্রেফ ছায়া হয়েই থাকলেন কুলদ্বীপ যাদব।
পুরনো অস্ত্রে যেন মরচে পড়েছে। আগের সেই এক্স ফ্যাক্টরটা নেই। পুরনো দিনের নায়িকাদের এখন দেখলে যেমন করে বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে – তেমন একটা অনুভূতি দিলেন কুলদ্বীপ। হঠাৎ করে কি হল তাঁর, যাতে এমন দুর্দশা নেমে এল?
একটু পেছনে ফিরি। কুলদ্বীপের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভাল সময় ছিল ২০১৭-১৮। ওই সময় নিয়মিত জাতীয় দলে খেলছেন। ইন্ডিয়ানি প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিটা ম্যাচেই মাঠে নামছেন প্রায়। তিনি ছিলেন ভারতের সবচেয়ে বৈচিত্রময় বোলার। লেগ ব্রেক, গুগলি, দুর্বোধ্য ফ্লাইট – অস্ত্রশালাটা বেশ সমৃদ্ধ ছিল তাঁর। সেটা এতটাই যে, ব্যাটসম্যানরা ভেবেই কুল পেত না, খেলবে আর কখনো। বিশেষ করে তাঁর অ্যাকশনটা আরো বিপদ ডেকে আনতো ব্যাটসম্যানদের জন্য।
সমস্যার শুরু হল ২০১৯ সালের আইপিএল। যখন লোকে বলাবলি করতে লাগলো, বলকে দিয়ে যেটা করাতে যাচ্ছেন কুলদ্বীপ – সেটা আর হচ্ছে না। কুলদ্বীপ নিজেও বুঝতে পারছিলেন না। বিশ্বকাপ দুয়ারে ছিল। হাতে নতুন কিছু করে ফেলার জন্য বড় সময়ও ছিল না। ফলাফল, বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁকে নিয়ে ছেলেখেলা করলো জনি বেয়ারস্টোরা। আর বিশ্বকাপের পর তিনি দলের বাইরে।
এখন তিনি নিজের অ্যাকশন নিয়ে কাজ করার সময় পেলেন। তবে, এখানেও একটা গোল বাঁধলো। অ্যাকশন নিয়ে কাজ করলেন বটে, কিন্তু সেটা কোনো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেলেন না।
আইপিএলে সুযোগ পেলেন। আর সেটা ‘ডিজাস্টার’ হিসেবে প্রমাণিত হল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কারো জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করার সুযোগ কোথায়। কলকাতা নাইট রাইডার্সও অপেক্ষায় থাকেনি। একাদশে নিয়েছে বরুণ চক্রবর্তীকে। কারণ, বরুণের নিয়ন্ত্রন কুলদ্বীপের চেয়ে বেশি।
অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুলদ্বীপকে রাখা হয়েছিল স্রেফ ব্যাক আপ হিসেবে। অক্ষর প্যাটেলদের সরিয়ে মূল দলে তাঁর জায়গা হয়েছে খুব কম। তাই নিয়মিত ঝালাই না করায়, অস্ত্রগুলো মরচে ধরিয়েছেন কুলদ্বীপ।
কুলদ্বীপের অধ:পতনের একটা বিকল্প ব্যাখ্যাও আছে। ব্যাখ্যাটা দিয়েছেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন। তিনি বলেন, ‘ওর মধ্যে কোনো উন্নতি আসেনি, আগে যা ছিল এখনো তাই আছে।’ খুব ভুলও না, রহস্য বোলারদের এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ – রহস্য যতদিন আছে ততদিনই ব্যাটসম্যানদের বুকে ভয় আছে!
অথচ, মহেন্দ্র সিং ধোনির অধীনে কি দুর্দান্তই না ছিলেন কুলদ্বীপ। ক্যাপ্টেন কুলের নেতৃত্বে ৪৭ টা ম্যাচ খেলৈ নেন ৯১ টি উইকেট। তাঁর সাথে বেশ জমে গিয়েছিল যুজবেন্দ্র চাহালের জুটি। চাহাল ধোনির অধীনে কুলদ্বীপের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলৈ নেন ৮১ উইকেট। তবে এই ‘কুলচা’ জুটি এখন অতীত হওয়ার পথে।
ভারতের জন্য এ যেন এক মধুর সমস্যা। নিজেদের পাইপলাইনের মান দেশটির ক্রিকেট এমন এক অবস্থানে নিয়ে গেছে যে, এখানে কারো অপেক্ষায় থাকার সুযোগ নেই। ভারতও হয়তো তাই কুলদ্বীপের ফেরার অপেক্ষা করবে না!
তবে, দোষারোপের খেলা অবশ্য চলছেই। অনেকেই বলছেন, টিম ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে না কুলদ্বীপকে। তবে, এই দোষারোপের খেলা কুলদ্বীপের নিজের খুব বেশি উপকারে আসছে না।
তো, এখন কি করতে হবে কুলদ্বীপকে? ফিরে যেতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটেই। সেখানে থেকেই আবারো ফিরতে হবে নিজেকে শুধরে নিয়ে। না ফিরতে পারলে, এক কালের রহস্যময় কুলদ্বীপের অন্তর্ধানটাও একটা রহস্য হয়েই টিকে যাবে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে।