এ যেন ঠিক কুমার সাঙ্গাকারার কাভার ড্রাইভের মতই দৃষ্টিনন্দন। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য থেকেই হয়ত সাঙ্গাকারা ধার করেছিলেন তার কাভার ড্রাইভ। শহর জুড়েই পর্বতের দৃঢ়তা, আকাশে লেপ্টে আছে অদম্য ছুটে চলা।
সাঙ্গাকারা এই মাঠের ধুলো মেখেছেন নিজের গায়ে, পর্বতের কাছ থেকে নিয়েছেন দৃঢ়তার শিক্ষা, আর আকাশের মেঘগুলো দিয়েছে তাকে দুর্বার গতিতে ছুটে চলার দীক্ষা। এই ট্রিনিটি কলেজ মাঠ থেকে উঠে এসে সাঙ্গাকারা বনে গেছেন ধ্রুপদী এক সত্ত্বা।
শুধু যে সাঙ্গাকারার ইতিহাস ধারণ করে আছে এই মাঠ, তা কিন্তু নয়। এই মাঠ লঙ্কান ক্রিকেটের গৌরবময় ইতিহাস আগলে রেখেছে। তাছাড়া এই মাঠে অজি ক্রিকেটের এক বিষাদময় ইতিহাসও স্থান পেয়েছে। ১১০ বছরের পথচলায় এই ট্রিনিটি কলেজ মাঠ ক্যান্ডি লেকের মতই বনে গেছে ইতিহাসের ধারক।
সেই ১৯১৫ সালের দিকে এই ট্রিনিটি কলেজ মাঠের গোড়াপত্তন। তখন অবশ্য এই মাঠের নাম ছিল আসিগিরিয়া স্টেডিয়াম। তবে ট্রিনিটি কলেজের প্রয়োজনেই সৃষ্টি হয়েছিল এই স্টেডিয়াম। সময়ের পরিক্রমায় মাঠটি হয়ে ওঠে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একটা পর্যায়ে তো এটি বনে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু।
প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬৮ বছর পর প্রথমবারের মত টেস্ট ক্রিকেট মাঠে গড়ায় এই আসিগিরিয়া স্টেডিয়ামে। অস্ট্রেলিয়া দলকে আতিথিয়েতা দিয়েছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। দেশটির প্রথম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল এই স্টেডিয়ামটি। অথচ আজ এটি পড়ে আছে অনাদরে, অবহেলায়।
এই মাঠেই প্রথমবারের মত টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। অবিস্মরণীয় সেই জয় মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছয় উইকেটের জয় পেয়েছিল লঙ্কানরা। তবে পরাজয় ছাপিয়ে সেই ম্যাচটি বিষাদের চাদরে ঢেকে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে অন্য কারণে।
ফিল্ডিংয়ের সময় স্টিভ ওয়াহ ও জেসন গিলেস্পির সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনার ভয়বহতা এতটাই ছিল যে হেলিকপ্টার যোগে তাদেরকে চিকিৎসার জন্যে মাঠ থেকে হাসপাতালে উড়িয়ে নেওয়া হয়। সেই সংঘর্ষের ফলে নাক ফেটে গিয়েছিল স্টিভ ওয়াহের। আর পা ভেঙে গিয়েছিল জেসন গিলেস্পির।
এরপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন থেকে আসিগিরিয়ার হারিয়ে যাওয়ার শুরু। ২০০৭ সালে শেষবারের মত এই মাঠে আয়োজিত হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেট। গত ১৮ বছরের লঙ্কান ক্রিকেটের অনাদরে মাঠটি পরিণত হয়েছে সাদামাঠা এক কলেজ মাঠে।
যদিও এখানে স্কুল কিংবা কলেজ পর্যায়ের ক্রিকেট ম্যাচ হরহামেশাই আয়োজিত হচ্ছে, তবুও জরাজীর্ণ গ্যালারি কিংবা স্কোরবোর্ড জানান দিচ্ছে, ইতিহাস সেরা খেলোয়াড় দান করা কিংবা অজি দাপটের গৌরবও নস্যি। ক্যান্ডির সৌন্দর্য ছাপিয়ে, অবহেলায় এই মাঠে নিত্য দিনের সঙ্গী।