শচীন টেন্ডুলকারের শহর মুম্বাই থেকেই উঠে আসা তাঁর। শচীনের মতোই স্কুল ক্রিকেটে রেকর্ড রান করে আলোড়ন তুলেছিলেন। কিন্তু সময় গড়াতেই যেন ব্যাটের সেই ধার হারিয়ে ফেলেছিলেন পৃথ্বী শ। জাতীয় দল তো বটেই জায়গা হারিয়েছিলেন দিল্লী ক্যাপিটালসের একাদশ থেকেও। তবে একাদশে ফিরতেই দারুণ ব্যাটিং করে বুঝিয়ে দিলেন এখনো ফুরিয়ে যাননি এই তারকা।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, এ দল কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে দিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব এই তারকার। সবাই ভেবেছিলেন শচীনের শহর থেকেই উঠে এসেছেন তাঁর উত্তরসূরী। জাতীয় দলে সুযোগ পেতেও তাই অপেক্ষা করতে হয়নি।
দুর্দান্ত টেকনিকের পাশাপাশি উইকেটের চারপাশে শট খেলার সক্ষমতা বাকি তরুণ ব্যাটারদের চাইতে আলাদা করে তুলেছিল শ’কে। পাওয়ার প্লেতে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের বোলিংকে এলোমেলো করে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া দলের প্রয়োজনে বড় ইনিংস খেলতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন এই তরুণ।
ফলে জাতীয় দলে শুরুর দিনগুলো মন্দ কাটেনি শ’র। টেস্ট কিংবা ওয়ানডে দলে যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিয়মিত রান পেয়েছেন। কিন্তু দুই বছর আগে হুট করেই ব্যাটে রানখরা শুরু হয়ে এই ওপেনারের। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও পার করেন বাজে এক মৌসুম।
তবে গত মৌসুম থেকেই যেন নিজেকে বদলানোর মিশন শুরু করেন এই তারকা। ব্যাটিং টেকনিকে খানিকটা পরিবর্তন আনেন, অতিরিক্ত ঝুকিপূর্ণ শট খেলার প্রবণতা কমান। তাতেই বাজিমাত, রঞ্জি ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফি কিংবা সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফি সবখানেই হেসেছে শ’র ব্যাট। রঞ্জিতে যেমন খেলেছেন ৩৭৯ রানের ইনিংস, তেমনি মুস্তাক আলী ট্রফিতে ব্যাট করেছেন ১৮১ স্ট্রাইকরেটে।
সবাই ভেবেছিলেন এবারের আইপিএল দিয়েই হয়তো জাতীয় দলে পুনরায় ফিরবেন এই তরুণ ওপেনার। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই হারিয়ে ফেলেন পুরনো ছন্দ। যশস্বী জয়সওয়াল কিংবা ঈশান কিষাণরা যেখানে নিয়মিত রান পেয়েছেন, সেখানে শ’য়ের ব্যাটে যেন উল্টো সুর। মৌসুমের প্রথম ছয় ইনিংসের মাঝে দুবার ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগে, সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ১৫ রানের।
দিল্লী ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং স্বয়ং বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন শয়ের রানখরায়। বাদ পড়েছিলেন একাদশ থেকে, সবাই ভেবেছিলেন আরো এক প্রতিভা বোধহয় প্রস্ফুটিত হবার আগেই হারিয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেট থেকে। একমাস বাদে তাই একাদশে সুযোগ পাবার পর তাঁকে নিয়ে উচ্চাশা ছিল না কারোরই।
তবে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে শ যেন রানে ফেরার প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন। দিল্লীর টুর্নামেন্ট আগেই ফুরিয়ে গেলেও শয়ের জন্য ছিল ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখার লড়াই। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে তাই খানিকটা ধীরেস্থিরভাবেই ব্যাট করেছেন।
এরপর খানিকটা সেট হতেই দেখা মিলেছে পুরনো পৃথ্বী শ’র। উইকেটের চারপাশে দারুণ সব স্ট্রোকের পসরা সাজিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। স্যাম কুরানের বলে ফেরার আগে সাত চার এবং এক ছক্কায় খেলেছেন ৩৮ বলে ৫৪ রানের দারুণ এক ইনিংস।
শ জানেন জাতীয় দলে ফেরার পথটা এখন আগের চাইতে বহুগুণ বেশি কঠিন। তবে ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে কাজটা কঠিন বটে, অসম্ভব নয়।