মেসি চাঁদ, রোনালদো চাঁদের আলো?

কি দারুণ এক সময়! ফুটবল ইতিহাসের দুই সেরা তারকা একজন আরেকজনের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাতে অবশ্য বিনোদন আর আনন্দের কমতি হচ্ছে না। বরং ফুটবলটাকে উপভোগ করবার উপলক্ষ্য মিলেছে, ফুটবলের উন্মাদনায় সামিল হওয়া মিছিলে জনস্রোত হয়েছে। লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নিজেদের মধ্যে ১২টি ব্যালন ডি’অর ভাগ করে নিয়েছেন। এই একটা যুগের সাক্ষী হতে পারাও তো চরম সৌভাগ্যের।

তবে সবকিছুর একটা পরিসমাপ্তি অবধারিত। নশ্বর এই পৃথিবীতে মহাকালের এই দ্বৈরথও ক্ষণস্থায়ী। তাইতো সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে মেসি এগিয়ে গেলেন, বসে পড়লেন সর্বকালের সেরাদের সেই সিংহাসনে। খোদ রোনালদোও স্বীকার করে নিয়েছেন সর্বকালের সেরাদের একজন এখন মেসি।

সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগ্যানের কাছে মনখুলেই বিভিন্ন আলাপ করছেন ক্রিশ্চিয়ানো। তেমনই এক আলাপে তিনি মেসিকে সর্বকালের সেরা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তবে তিনি এটা বিশ্বাস করেন, তাঁর জন্যই মেসি হতে পেরেছেন বিশ্বসেরা। তিনি মনে করেন মেসি ও তাঁর মধ্য়ে চলা দ্বৈরথটাই নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

রোনালদো বলেন, ‘আমি তাঁর জন্য খুশি, এতগুলো বছরের কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিভা সে বার্সেলোনায় দেখিয়েছে তার পেছনে আমাদের প্রতিযোগিতাই প্রভাবক ছিল। যদি আমি না থাকতাম কিংবা আমাদের ব্যালন ডি’অর প্রতিযোগিতা না থাকত তাহলে সে আজকে যেখানে আছে সেখানে হয়ত থাকত না। আমি সবকিছু জিতেছি। আর আমার গ্রেটনেস মেসিকে বিশ্বকাপ জিততে অনুপ্রাণিত করেছে।’

এই দুই ফুটবলার নিজেদেরকে ছাপিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে তাদের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে। স্প্যানিশ লা লিগার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী দলের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন তাদের ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময়ে। ফুটবল পাগল গোটা বিশ্ব মত্ত থাকতো, ‘কে সেরা?’ এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে। কূল-কিনারা ছাড়া সেই বিতর্কের অবসান অবশেষে হয়েছে। পাঁচ বারের প্রচেষ্টায় মেসি জিতে নিয়েছেন বিশ্বকাপ।

বিপরীতে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদো। অবশ্য এই ধারা বেশ কিছুদিন ধরেই অব্যাহত ছিল। যার ফলশ্রুতিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে সম্পর্কের অবণতি ঘটে এবং তিনি বর্তমান ক্লাবহীন এক যাযাবর। তবে মেসি সেদিক থেকে খানিক এগিয়ে। অবশ্য বয়সের ফারাকও রয়েছে দুই বছরের। মেসি সেরা সেই বিতর্ক নেই। মেসির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও কোন ধোঁয়াশা নেই। বর্ণিল যুগের অবশেষে সমাপ্তি হতে চলেছে।

তবে রোনালদো মনে করেন তিনি আর তাঁর সমর্থকরা এখন নিস্তার পাবেন, কোন রকম বিতর্কে আর জড়াতে হবে না কাউকে। তিনি বলেন, ‘আমি এখন নিজের একান্ত সময়গুলো উপভোগ করতে পারব। আমার ভক্তদের সর্বকালের সেরা বিতর্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। মেসির বিশ্বকাপ জেতা? সেটা তো অবধারিতই ছিল। দেশটির রয়েছে বর্ণাঢ্য ফুটবল ঐতিহ্য। আমি একাই পর্তুগালকে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে দিয়েছি। লুইস ফিগো ও ইউসেবিওদের মত তারকারাও কোন কিছু অর্জন করতে পারেনি।’

বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় পর্তুগালের ফুটবলের সাথে যুক্ত হয়েছিল। সত্যিকার অর্থেই আন্তর্জাতিক কোন অর্জনের আনন্দে তাঁরা ভাসাতে পারেনি পর্তুগালকে। তবে রোনালদো পেরেছেন। তিনি ইউরো জিতেছেন, সেই সাথে ইউয়েফা ন্যাশন্স লিগও তিনি জিতেছেন পর্তুগীজদের হয়ে। তিনি তাঁর দেশের ফুটবলটাকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এখন বিশ্ব দরবারের যেকোন দলই পর্তুগালকে বেশ সমীহ করে থাকে।

দিনশেষে, রোনালদো মনে করেন মেসির এমন অতিমানবীয় সব অর্জনের পেছনে তাঁর নিজের অবদানও রয়েছে। চোখে হাত বুলাতে বুলাতে ক্রিশ্চিয়ানো মরগ্যানকে বলেন, ‘পিয়ার্স, আপনি নিশ্চয়ই জানেন চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। আমি খুশি মেসির এই উজ্জ্বল মুহূর্তে। আমার কাজ শেষ, এখন সময় সর্বকালের সেরা হিসেবে অবসর নেওয়ার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link