মহাকালের কাব্যে তুমি চির অম্লান

মঞ্চটা যত বড়, যুদ্ধক্ষেত্রটা যত প্রকাণ্ড সম্রাট ততই গর্জে ওঠেন। তিনি জানেন কোথায় তাঁর প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। যেমন এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। দুবাইয়ের উইকেট। রান তাড়া করার মঞ্চ। বিরাট জ্বললেন। সম্রাটের বিজয়ী পতাকা উড়ল।

সিংহাসন ছেড়ে তিনি নেমে এলেন, যেন সম্রাট নিজের রাজ্য পরিদর্শনে বেরিয়েছেন। ময়দানে উঠলেন, ব্যাট নামের তলোয়ার হাতে নিলেন, আর তার ধারালো ঘায়ে শাসন কায়েম করলেন বাইশ গজে। রান যখন আসছে, বাউন্ডারি যখন ঝরছে—তখন মনে হয়, তিনি যেন রাজদণ্ড হাতে শাসন চালাচ্ছেন, প্রতিপক্ষের হৃদয়ে একের পর এক গেঁথে দিচ্ছেন রাজকীয় শিলালিপি।

এই শাসনই তো বিরাট কোহলি। তাঁর রানের পর রানই তো সাম্রাজ্য পরিচালনা। শটের প্রতিটি শব্দে যেন ঘোষণা হয় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, প্রতিটি রান যেন স্থাপন করে একেকটি সোনার খচিত সোপান। দুবাইয়ের সন্ধ্যায় সেই শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি মাইলফলক এঁকে দিলেন কোহলি — ১৪ হাজার ওয়ানডে রান! সাথে ফিরে এল হারিয়ে যাওয়া এক তকমা – চেজ মাস্টার! সেঞ্চুরি নাম্বার ৫২! চার দিয়ে মাইলফলক ছুলেন, ব্যাট তুললেন, হাত দিয়ে শান্ত থাকতে বললেন, জানিয়ে দিলেন, ‘রিল্যাক্স! আমি আছি! কোত্থাও যাইনি!’

অক্ষর প্যাটেল সাথে ছিলেন। ডাবল নেওয়ার সুযোগ পেয়েও নিচ্ছিলেন না। কোহলি রক্তচক্ষু দেখাচ্ছিলেন। লাভ হচ্ছিল না। কারণ, এদিন সবাই খেলেছেন কোহলির হয়ে, সম্রাটের হয়ে। সম্রাটকে যে করেই হোক জিতিয়ে দিতেই হবে।

ব্যাট হাতে নিজের সাম্রাজ্যকে আরও প্রসারিত করলেন, আরও দৃঢ় করলেন তার ভিত্তি। এলিটতম এক ক্লাবের দরজায় লিখলেন নিজের নাম, যেখানে ছিলেন কেবল শচীন টেন্ডুলকার আর কুমার সাঙ্গাকারা। সময়ের অমোঘ স্রোতে ক্রিকেট যখন নতুন নাম খোঁজে, তখনই কোহলি বলে ওঠেন — ‘আমি আছি, আমি থাকব, আমি চিরকালীন।’ এবার তবে, বলা যাবে – দ্য চেজ মাস্টার ইজ ব্যাক! ভারতকে নিয়ে গেলেন সেমিফাইনালে, ছিটকে ফেললেন চিরকালের চেনা প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে।

আর মাত্র দু’টো ম্যাচ জিতলেই ভারতকে আরেকটবার বলা যাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ভারত হয়ে উঠবে চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন। আর এর কৃতিত্বটা ওই সম্রাটের নামেই লেখা। তিনি ছিলেন, তিনি আছেন বলেই তো অবিচল থাকে ভারতের বিজয়রথ।

বাইশ গজের এই রঙ্গমঞ্চ তাঁর জন্যই তো, এটাই তো তাঁর আপন রাজ্য! যেন বিশ্বতান থেকে বাজল এক রুদ্র ঝঙ্কার, ক্রিকেটের দেবতা বরুণমালা হাতে তাঁকে আহ্বান জানালেন — বিরাট কোহলি এই বাইশ গজ তোমার আপন সিংহাসন। আমার বিজন ঘরের দ্বারের কাছে তুমি চির বিজয়ী। এই জায়গা শুধুই তোমার, মহাকালের কাব্যে তুমি চির অম্লান।

মঞ্চটা যত বড়, যুদ্ধক্ষেত্রটা যত প্রকাণ্ড সম্রাট ততই গর্জে ওঠেন। তিনি জানেন কোথায় তাঁর প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। যেমন এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। দুবাইয়ের উইকেট। রান তাড়া করার মঞ্চ। বিরাট জ্বললেন। সম্রাটের বিজয়ী পতাকা উড়ল। সম্রাটের মুকুটে যোগ হল আরেকটা নতুন পালক। এত পালক কোথায় রাখবেন কোহলি! এই সম্রাটের রাজত্বে নিশ্চিন্তে যারা রাতে ঘুমুতে যান – তাঁরা বড্ড ভাগ্যবান।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link