গত প্রায় দুই দশক দাপিয়ে বেড়ানোর পর এখন বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না তাঁর। মৌসুমের মাঝপথে রোনালদো এখন ক্লাবহীন – এই একটি কথাই বোঝায় কতটা দুঃসময় যাচ্ছে এই তারকার। বাজে পারফরম্যান্স আর আচরণগত কারণে বারবার সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁকে।
এবার রোনালদোর সমালোচনাকারীদের দলে যোগ হয়েছে তাঁরই এক সময়ের সতীর্থ। স্পোর্টিং লিসবনে রোনালদোর সাথে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করেছিলেন মরিয়াস নিকুলায়। এই ফুটবলারই এবার কটুবাক্য ছুঁড়েছেন পর্তুগীজ যুবরাজের দিকে। তিনি বলেন, ‘সে (রোনালদো) কখনোই সামাজিক ব্যক্তিত্ব ছিল না।’
নিকুলায় জানান যে, ‘আমরা সব সময় রোনালদোকে কাছে পেতে চাইতাম। তাঁকে আমাদের সাথে একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসতে বলতাম কিন্তু সে সবসময় নিজের দুনিয়ায় থাকতো। সে একা একাই জিম করতো। কখনো কখনো ম্যাচ শেষে আমরা বাইরে বেড়াতে আসলেও, রোনালদো আসতো নাহ।’
২০০২/০৩ মৌসুমে স্পোর্টিং লিসবনে খেলতেন মরিয়াস নিকুলায়। সে মৌসুমে সব মিলিয়ে রোনালদোর সঙ্গে নয় ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে পর্তুগালের ব্যর্থতার পরে অন্য অনেক পর্তুগিজের মতই হতাশ হয়েছেন নিকুলায়। আর সেই হতাশা থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর উপর সমালোচনার তীর ছুঁড়ছেন সাবেক এই ফুটবলার।
মরিয়াস নিকুলায় বলেন, ‘আমার মনে হয় পর্তুগাল জাতীয় দলও রোনালদোকে আগের মত মেনে নিতে পারেনি। পেপে একমাত্র ফুটবলার যার সাথে রোনালদো মিশে থাকে। ব্রুনো ফার্নান্দেজও খুব সম্ভবত তাঁকে এড়িয়ে যায়।’
চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ফুটবল পাড়া টালমাটাল ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই করতে না পারায় ক্লাব ছাড়তে একটু বেশিই আগ্রহী ছিলেন রোনালদো। এটির জের ধরেই ক্লাবের প্রি-সিজন আয়োজনে যোগ দেননি তিনি। ফলে নতুন কোচ এরিক টেন হ্যাগের চক্ষুশূল হন তিনি।
মৌসুম শুরু হলে আচরণগত এই সমস্যা পারফরম্যান্স দিয়ে পুষিয়ে দিতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। গতি কমে যাওয়া আর ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা ফুটে ওঠে নিদারুণভাবে। মাঠ ও মাঠের বাইরের সবকিছু নিয়েই কারণে-অকারণে ব্যাপক নিন্দিত হতে শুরু করেন এই সুপারস্টার। শেষ পর্যন্ত এসবের জবাব দিতে পায়ার্স মরগ্যানের সাথে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
সেই সাক্ষাৎকারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করেন পাঁচ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেই সাথে তুলে ধরেন তাঁর প্রতি দেখানো অসম্মানের কথা। এই আলোড়িত সাক্ষাৎকারের কারণেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের সাথে রোনালদোর সম্পর্কের ইতি ঘটেছে বলে মনে করেন মরিয়াস নিকুলায়। তিনি বলেন, ‘পিয়ার্স মরগ্যানের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় সে (রোনালদো) যেসব কথা বলেছে সেটিই ইউনাইটেড থেকে তাঁর বিদায়ের কারণ ছিল।’
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এখন ফ্রী এজেন্ট অর্থাৎ কোন ক্লাব চাইলে কোন ট্রান্সফার ফি ছাড়াই দলে ভেড়াতে পারবে তাঁকে। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না বড় কোন ইউরোপীয়ান ক্লাবই। আপাতত তাই বিশ্রাম আর ব্যক্তিগত অনুশীলন করেই সময় কাটছে তাঁর।
রোনালদোর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন মরিয়াস নিকুলায়। সাবেক লিসবন ফুটবলার বলেন, ‘আমি মনে করি সে আল নাসের ক্লাবে অথবা আমেরিকার কোথাও যোগ দিবে। এরপর সম্ভবত ফুটবল থেকে বিদায় নিয়ে হলিউডে যেতে চাইবে।’
অবশ্য আজন্ম হার না মানা মানসিকতার ধারক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এত সহজে হাল ছাড়তে রাজি নন। ক্লাব ক্যারিয়ারে যাই ঘটুক অন্তত ২০২৪ সালের ইউরো টুর্নামেন্ট পর্যন্ত পর্তুগালের সাথেই থাকতে চান তিনি। আপাতত তাই রোনালদোর ভবিষ্যৎ জানতে সময়ের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ভক্ত এবং নিন্দুকদের।