তিন গোল, তিন শিরোপা। আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরা কেটেছে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার কল্যাণে। সেই ডি মারিয়া দাঁড়িয়ে আছেন আরও একটি শিরোপার সামনে। সম্ভবত এটাই হতে চলেছে তার ক্যারিয়ারের শেষ ফাইনাল।অন্তত আকাশী নীল জার্সিতে আরও একটি ফাইনাল খেলতে পারার সম্ভবনা যে সন্ধে নাগাদ মিলিয়ে যাওয়া আলো।
অবশ্য আলো-আধারীর সাথে মারিয়ার বেশ পুরনো সংযোগ। ক্লাব হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবল, সবখানেই তিনি থেকেছেন স্পটলাইটের বাইরে। কখনো লিওনেল মেসি, কখনো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কখনো আবার নেইমার জুনিয়র সব আলো কেড়ে নিয়েছেন।
অথচ দীর্ঘ একটা ক্যারিয়ারে কতকিছুই না তিনি জিতেছেন, দলকে জিতিয়েছেন। মেসির শ্রেষ্ঠত্বকে পূর্ণতা দিয়েছেন। তবুও কি তিনি প্রাপ্য ভালবাসাটুকু পেয়েছেন? সম্ভবত পাননি। অবশ্য ভালবাসা তো পরিমাপ করা যায় না। তিনি হয়ত ঠিকই আর্জেন্টিনার কোটি কোটি ভক্তদের মনে বিশাল এক আরাম কেদারায় বসে আছেন। পরম মমতায় তাকে আগলে রেখেছেন সকলে।
২০২১ কোপা আমেরিকার পর, ফিনালিসিমা। এরপর ২০২২ সালের সেই স্বর্ণালী বিশ্বজয়ের ট্রফি। আর্জেন্টিনার যতপ্রাপ্তি গেল এক দশকে, তার বিশাল জায়গা জুড়ে বিচরণ অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার। তবুও দিনশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসির হাতে শিরোপার আধিক্যই চোখে পড়ে। ডি মারিয়া অবশ্য কোন এক কোণা থেকে উঁকি দিয়েছেন বটে।
অবশ্য এসব নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ডি মারিয়া খুব একটা ভাবেন না। তিনি চান তার দলের হয়ে শিরোপা জিততে, তিনি চান তার দল জিতুক ম্যাচ। সত্যিকারের নায়করা সম্ভবত এমনই হন। কোন সোরগোলের মধ্যে নিজেকে জড়াবেন না, নিরবে-নিভৃতে নিজের কাজটা করবেন। এরপর আবার ফিরে যাবেন নিজের আপন ভূবনে।
তেমন এক রোমাঞ্চকর রুপকথা শেষবারের মত লেখবার প্রস্তুতিই হয়ত নিচ্ছেন ডি মারিয়া। এরপর তিনি হয়ত জার্সিখানা তুলে রাখবেন। যদি বুট জোড়াও তুলে রাখেন, তাতে সম্ভবত অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বয়সটা যে হয়েছে। এবার বিশ্রাম নেওয়ার পালা। এক জীবনে দলগত অর্জনের প্রায় সবগুলোই জিতেছেন তিনি। শেষবেলায় আরও একটি শিরোপা হয়ত যুক্ত হবে।
তবে তাতে করে আমুল বদলে যাবে না কোন কিছুই। অমরত্ব তিনি পেয়ে গেছেন। আর্জেন্টিনার ফুটবলের ইতিহাসে, গোটা ফুটবলের ইতিহাসেই। তার গোলেই যে কেটেছে আলবিসেলেস্তাদের ২৮ বছরের শিরোপা খরা। তার গোলই তো ৩৬ বছর বাদে বিশ্বকাপ জিততে করেছে সহয়তা। আর কি করতে হবে তার ইতিহাসের অংশ হতে হলে? ১৫ তারিখের ফাইনালে যা কিছু ঘটুক, ডি মারিয়া আর্জেন্টিনার ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল’ হয়ে রয়ে যাবেন চিরকাল।