৩৩ বছরের অপেক্ষা। এই একটা শিরোপার জন্য একটা শহরের গোটা একটা প্রজন্মের অনন্ত আক্ষেপ। কেউ কেউ তো এই মুহূর্তটার অপেক্ষা করতে করতে দুনিয়া ছেড়েই চলে গেছেন। এবার সেই মুহূর্তটি এল নাপোলসে।
স্বর্গে বসে ফুটবল ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনার চোখেও হয়তো আনন্দের অশ্রু ঝড়লো। ফুটবল ঈশ্বরের প্রিয় নাপোলি যে লিগ শিরোপা জিতেছে কত সহস্র রজনী বাদে। নাপোলির অনেক মানুষেরই হয়তো জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তটা দেখা হয়ে গেছে এদিন।
একবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার লিগ শিরোপা জিতেছে নাপোলি। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে ইতালিয়ান সিরি ‘এ’ শিরোপা জিতেছিল ম্যারাডোনার নাপোলি। ১৯৮৭ ও ১৯৯০ তে সবশেষ নাপোলির দুটি লিগ শিরোপা এসেছিল ফুটবল ঈশ্বরের হাত ধরেই।
গত ছয় মাস সময়কালটা যেন ৩ বছর আগে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া দিয়াগো ম্যারাডোনার জন্যও খুব স্পেশাল। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা তাঁর দেশ আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন। এরপর ৩৬ বছরের অপেক্ষা। ২০২২ সালে কাতারে আর্জেন্টিনার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে।
এবার ম্যারাডোনার স্মৃতিবিজরিত নাপোলির তেত্রিশ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো উদিনেসের বিপক্ষে ম্যাচের পর।
পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই লি শিরোপা নিশ্চিত করেছে নাপোলি। উদিনেসের বিপক্ষে এদিন ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত হত নাপোলির। হলোও তাই। ম্যাচ শেষেই উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় নাপোলস। শিরোপা নিশ্চিতের পর আবেগে ভেসেছেন নাপোলির কোচ, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সকলেই।
নাপোলির এই শিরোপার তাৎপর্য হয়তো বোঝা যাবে নাপোলি কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তির এই কথায়, ‘নাপোলিবাসী এই শিরোপা আপনাদের জন্য। এখানে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা তাদের জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন কারণ তারা এই মুহূর্তটিকে মনে রাখেন। কঠিন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষরা সকল আনন্দে মেতে ওঠার যোগ্যতা রাখেন।’
এই শহরে ম্যারাডোনার মর্যাদা ‘ঈশ্বরতুল্য’, যে শহরে তাঁর নামে ধর্ম আছে, উপাসনালয় আছে, সে শহরের মানুষ এমন আনন্দের ক্ষণে তাঁকে ভুলবে কীভাবে!
নাপোলস শহরের প্রাণের কথাটাই যেন এরপর বললেন নাপোলি কোচ, ‘এই আনন্দে ম্যারাডোনাকে খুব করে মনে পড়ছে।’
হয়তো ম্যারাডোনা স্বর্গ থেকে দেখবেন বলেই নাপোলস শহর আজ উৎসব চলছে। এই উৎসব চলবে আরো অনেকদিন। পুরো শহরের জেগে ওঠার জন্য এমন একটা মুহূর্তের জন্যই খুব করে অপেক্ষা করছিলেন সবাই।