আইপিএলের ‘ভবঘুরে’ একাদশ

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সুনীল নারিন, কাইরেন পোলার্ড এবং বিরাট কোহলির মত তারকারা পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই এক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলে যাচ্ছেন। এমন কি লাসিথ মালিঙ্গা, শচীন টেন্ডুলকারের মত বড় তারকারা খেলেছেন একই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে।

একই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে পুরো ক্যারিয়ারে না খেলার ঘটনা অহরহ আইপিএলের ইতিহাসে। অনেক ক্রিকেটার আছেন যাযাবরের মত এক ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলে বেড়িয়েছেন। তাই বলে পাঁচটি ফ্রাঞ্চাইজিতে খেলা! হ্যাঁ অনেক ক্রিকেটারই আছেন যারা আইপিএলে পাচটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন।

আইপিএলে কমপক্ষে পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন এমন ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে খেলা ৭১ তৈরি করেছে একটি একাদশ। দেরি না করে চলুন দেখে নেই।

  • পার্থিব প্যাটেল

এই একাদশের উইকেট রক্ষক হিসেবে থাকবেন আইপিএলে পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলা পার্থিব প্যাটেল। এছাড়াও ওপেনার হিসেবে থাকবেন তিনি। চেন্নাইয়ের প্রথম আইপিএল শিরোপা জেতার সময় ছিলেন চেন্নাই দলে। ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের আইপিএল শিরোপা জয়ী দলেও ছিলেন তিনি। এই দুই মৌসুমে টপ অর্ডারে দ্রুত রান তুলে আইপিএল শিরোপা জেতাতে ভূমিকা ছিলো পার্থিব প্যাটেলের।

  • ব্রেন্ডন ম্যাককলাম (অধিনায়ক)

আইপিএলের প্রথম ১১ টি মৌসুমে খেলেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককলাম। এইসময়ে তিনি খেলেছেন মোট পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে।

আইপিএলের প্রথম মৌসুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে প্রথম ম্যাচেই ৭৩ বলে ১৫৮ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি। আর অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে স্মরণীয় আর কিছু করতে পারেননি এই তারকা ব্যাটসম্যান।

  • অ্যারন ফিঞ্চ

এই একাদশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে অ্যারন ফিঞ্চের। তিনি আইপিএলের আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন। ২০১০ সালে রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে যাত্রা শুরু করেন অ্যারন ফিঞ্চ। আর শেষ হয় ২০২০ আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে।

এই মৌসুমে কোনো দলই তাঁকে দলে ভিড়ায়নি।  তিনি ২০১৩ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের অধিনায়কত্ব করেছিলেন এবং ২০১৬ সালে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে ৪০ গড়ে রান করেছিলেন। কিন্তু এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি এখন আর আইপিএলে নেই।

  • রবিন উথাপ্পা

রবিন উথাপ্পা এখন পর্যন্ত আইপিএলে পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সময়।

২০১৪ সালে কলকাতার আইপিএল শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা ছিলো তাঁর। এই মৌসুমে কলকাতাকে শিরোপা জেতানোর বছরে ৪৪ গড়ে ব্যাটিং করেছিলেন রবিন উথাপ্পা।

এবারের আইপিএলে তাঁকে দেখা যাবে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে।

  • মানিশ পান্ডে

মানিশ পান্ডে প্রথম নজরে আসেন ২০০৯ সালে আইপিএলে। রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ডেকান চার্জাসের হয়ে।

আইপিএলের মানিশ পান্ডের সেরা মৌসুম ছিলো ২০১৪ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। এই মৌসুমে কলকাতার আইপিএল শিরোপা জেতাতে মিডল অর্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

  • যুবরাজ সিং

ভারতের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। ২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিলো তাঁর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যতটা সফল ছিলেন তাঁর ঠিক বিপরীত ছিলো তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ার। আইপিএল ক্যারিয়ারে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিতে স্থায়ীভাবে খেলতে পারেন তিনি।

আইপিএলে তিনি খেলেছেন মোট ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজিতে। আইপিএলে তাঁর সেরা ইনিংস ছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে ২০১৬ সালের আইপিএল ফাইনালে ২৩ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। যা হায়দ্রাবাদকে তাঁদের প্রথম আইপিএল শিরোপা জেতাতে ভূমিকা রাখে।

  • দীনেশ কার্তিক (উইকেটরক্ষক)

দীনেশ কার্তিক ভারতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া একজন ক্রিকেটার। আইপিএলেও বিভিন্ন দলে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি । এখন পর্যন্ত আইপিএলে মোট ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন দীনেশ কার্তিক।

২০১৩ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল শিরোপা জিতেছেন। কার্তিকের আইপিএলে সেরা মৌসুম ছিলো ২০১৮। এই মৌসুমে কলকাতার হয়ে ৪৯.৮০ গড়ে এবং প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি।

দলে উইকেটরক্ষক হিসেবে তাঁকে রাখাটাই সবচেয়ে বেশি যুক্তিসংগত। যদিও, তিনি ছাড়া উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে পারেন – এমন আরো তিনজন আছেন।

  • থিসারা পেরেরা

শ্রীলঙ্কান এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার আইপিএলে খেলেছেন মোট ছয়টি আইপিএলে ফ্রাঞ্চাইজিতে। কিন্তু সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট ছাড়া অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি তিনি।

আইপিএলে তাঁর সেরা মৌসুম ছিলো ২০১৩ মৌসুম। এই মৌসুমে ২৩.৩০ গড়ে রান করেছেন এবং ২৫.১৫ গড়ে শিকার করেছেন ১৯ উইকেট।

  • ইরফান পাঠান

২০০৭ সালে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে ভূমিকা ছিলো বাঁহাতি পেসার ইরফান পাঠানের। ইরফান পাঠান আইপিএলে খেলেছেন পাঁচটি ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে।

তবে আইপিএলে তাঁর সেরা সময় কেটেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে থাকাকালীন সময়ে। পাঞ্জাবে থাকাকালীন সময়ে তাঁর ব্যাটিং এবং বোলিং গড় ছিলো যথাক্রমে ২৫.১২ এবং ২৪.৮০।

এছাড়াও গুজরাট লায়ন্স এবং রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টে খেলার সময় কোনো উইকেটই শিকার করতে পারেননি তিনি।

  • ইশান্ত শর্মা

ভারতের টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন ইশান্ত শর্মা। তিনি সাদা বলের ক্রিকেটে বেশ অনিয়মিত। আইপিএলেও কোনো দলের আস্থাভাজন ছিলেন না কখনই।

আইপিএলে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ছয়টি ফ্রাঞ্চাইজিতে। ২০১৩ সাল থেকে মাত্র এক মৌসুমে আইপিএলে ছয়টির বেশি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন তিনি। ২০১৯ মৌসুমে দিল্লী ক্যাপিট্যালসের হয়ে খেলেছিলেন ১৩ ম্যাচ। ১৩ ম্যাচে শিকার করেছিলেন ১৩ উইকেট।

  • প্রবীন কুমার

ভারতের হয়ে ছোট্ট ক্যারিয়ারে নিজেকে বেশ ভালোভাবে প্রমাণ করেছিলেন প্রবীন কুমার। জাতীয় দলের মত আইপিএলেও বেশ অনিয়মিত ছিলেন তিনি।

আইপিএলে খেলেছিলেন পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে। এই সময়ে তিনি মোট ম্যাচ খেলেছেন ১১৯ ম্যাচ। এই ১১৯ ম্যাচে শিকার করেছেন ৯০ উইকেট।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link