সময়ের কাঁটা থেমে থাকে না। ঘড়ির কাটা কখনও মন্ধ হয় না। এক সময় যে চার তরুণ ব্যাট হাতে ক্রিকেটবিশ্বের রঙ বদলে দিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে। সময়ের পালাবদলে নতুনরা জায়গা করে নিচ্ছে, কিন্তু ফ্যাবুলাস ফোরের রাজত্ব এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন, ইংল্যান্ডের জো রুট রুট কিংবা ভারতের বিরাট কোহলিরা হারিয়ে যাননি। বরং, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সামনে রেখে তাঁরা যেন আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন — ক্রিকেটের মহাকাব্যে তাঁদের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। সময় যত ঘণিয়ে আসছে, ততই যেন প্রতাপশালী হয়ে উঠছে চারজনের ব্যাট।
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেটের ব্যাটিং ব্যাকরণ নতুন করে লিখেছেন এই চারজন। উইলিয়ামসন তাঁর শিল্পিত ব্যাটিং দিয়ে প্রতিপক্ষের শ্বাসরোধ করেছেন, রুট টেস্ট আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই ব্যাটিংয়ের এক নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন।
স্মিথ তাঁর অদ্ভুত ব্যাটিং স্টান্স আর অসাধারণ টেম্পারমেন্ট দিয়ে পরিণত হয়েছেন আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আর কোহলি? তিনি তো এই প্রজন্মের সবচেয়ে আগ্রাসী এবং আবেগী নেতা—যার ব্যাট কথা বলে সেরা মঞ্চে, কঠিন সময়েই।
এবারও গল্পটা ভিন্ন কিছু নয়। স্টিভেন স্মিথ রান পাচ্ছেন নিয়মিত, উইলিয়ামসন ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেই সেঞ্চুরির তীক্ষ্ণ বার্তা দিয়েছেন, রুট তাঁর চিরচেনা ব্যাটিং স্টাইলে ভারতের বিপক্ষে ফিরে পেয়েছেন নিজস্ব ছন্দ, আর কোহলি? তিনি জানেন কীভাবে সঠিক সময়ে ছন্দে ফিরতে হয়। সম্প্রতি তাঁর ব্যাটেও দেখা মিলছে পুরনো ধার, বড় টুর্নামেন্টের আগে যা বেশ স্বস্তির সংবাদ ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য।
তবে বাস্তবতা হলো, এই ফ্যাবুলাস ফোরের সময় ফুরিয়ে আসছে। ২০১১-১২ সালের পর থেকে তাঁদের লড়াই, তাঁদের পারফরম্যান্স, তাঁদের দ্বৈরথ ক্রিকেটবিশ্বকে মোহিত করে রেখেছে। কিন্তু বয়স থেমে থাকে না, নতুনদের জায়গা করে দিতে হয়। তাই হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে তাঁদের শেষ কোনো বড় টুর্নামেন্ট, যেখানে তাঁরা একসঙ্গে রাজত্ব করবেন।
শেষ অধ্যায় সবসময়ই আবেগঘন হয়। শেষ নাচটা হতে পারে সবচেয়ে সুন্দর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কি তবে তাঁদের ওয়ান লাস্ট ড্যান্স? উত্তর লুকিয়ে আছে সময়ের ঝুলিতে, কিন্তু নিশ্চয়ই ক্রীড়াপ্রেমীরা চাইবেন —শেষবারের মতো এই চারজনের উড়ন্ত ব্যাটকে আরও বেশি করে উড়তে দেখতে।
তাঁরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে আদৌ পারবেন কি না, সেই উত্তরও কেবল সময়ই জানে। কিন্তু, সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন যারা তাঁদের বিদায়টা সব সময় মাথা উঁচু করেই হয়।