‘সাকিবিয়ান, তামিমিমিয়ান, মাশরাফিয়ান বলতে কিছু নেই!’ – তামিম ইকবালের এই একটা কথায় সব কিছু মুছে গেল। ভেঙে গেল গত ১৫-১৬ বছর ধরে গড়ে ওঠা একেকটা ইস্পাতসম ঘৃণার মঞ্চ। যে ঘৃণা বাংলাদেশের সমর্থকদের শিখিয়েছে, তামিম ইকবালকে ভালবাসলে তুমি সাকিব আল হাসানের ভক্ত হতে পারো না। শিখিয়ে গেছে, মাশরাফি বিন মুর্তজার কীর্তি তোমাকে মুগ্ধ করলে তোমাকে সাকিবকে ঘৃণা করতে হবে।
আর এই নেতিবাচকতার মিছিলটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শত্রু। এক কথায় বলে দিলেন, বলে দিলেন, ‘সমর্থন করতে হবে শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। এটাই আমার শেষ কথা।’ ব্যস, তামিমের একটা কথায় তিলে তিলে জমে থাকার ঘৃণার জাল বোনারা মিলিয়ে গেল বাতাসের সাথে, ভেঙে গেল তাসের কেল্লার মত।
তামিম ইকবাল মানেই তো একটা স্টেটমেন্ট। তামিম ইকবাল মানেই তো ড্যান্সিং ডাউন দ্য ট্র্যাক। না এবার তিনি ব্যাট হাতে স্টেপ ডাউন করলেন না, করলেন বুম হাতে। সেই বুম হাতে বলে দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অধ:পতনের সবচেয়ে বড় কারণ। তিনি বলে দিলেন কোনো নির্দিষ্ট একজন তারকাকে বড় করতে গিয়ে বাকিদের ছোট করলে সেই সমালোচনাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপরই এসে পড়ে।
এই কথাটা সরাসরি বলতে পারার লোক তো বাংলাদেশে একজনই। তিনি বিগ হার্টেড। লোকে বলে কলিজাওয়ালা খান। তাঁর মত করে বলতে আর ক’জনই পারেন। তামিম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না। জানিয়ে দিয়েছেন আগেই। বিপিএল ফাইনাল জিতলেন অধিনায়ক হিসেবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় বলে দিল। সেই বিদায় বেলায় তিনি যা করে গেলেন, যা বলে গেলেন – সেটা বাংলাদেশের প্রতিটা ক্রিকেট ভক্তকে অবশ্যই একবার করে হলেও শুনতে হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যারা ভালবাসেন, তাঁরা তামিম ইকবালের কথা শুনবেন। যারা ভালবাসেন না তাঁরা শুনবেন না। কথা শেষ। তামিম ইকবালের শেষ কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সার্বিক সমর্থন যুগিয়ে যেতে হবে।
এই মঞ্চে সাকিব আল হাসানও থাকতে পারতেন। চিটাগং কিংস দল সাকিবকে ড্রাফটের বাইরে সরাসরি নিয়েছিল। সাকিব থাকলে তিনি কি বলতেন, তিনিও কি মুশফিক রা রিয়াদের মত আবেগের সাগরে ভাসতেন? না, জানা গেল না। তামিম ইকবালের বিদায় বেলায় এই আক্ষেপটা নিশ্চয়ই খোদ তামিমেরও থাকবে!