সৈকতের বুকে অর্জনের গর্জন

কয়েক দিন আগেই মিরপুর স্টেডিয়ামে সৈকত ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি খুবই রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, এলিট প্যানেলের নতুন তালিকা কবে প্রকাশ করা হবে।

দুয়ারে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলেই হয়তো তার রোমাঞ্চটা বেশি ছিল। সেদিন বলছিলেন, ‘গত বছর তো মার্চের মাঝামাঝিই তালিকা প্রকাশ করে ফেলেছিল। এবার যে কেন এখনও কিছু জানাচ্ছে না!’

শুধু তার নয়, অপেক্ষাটা আসলে গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ছিল। একদিন-দুইদিন নয়, অনেক দিনের অপেক্ষা।

টেস্ট ক্রিকেটে এত এত বছরের বিচরণে এলিট প্যানেলে কোনো আম্পায়ার ছিল না বাংলাদেশের। মনে আছে, এটা নিয়ে একটা স্টোরি করেছিলাম ২০২০ সালে। বিশাল সেই স্টোরিতে নানা বাস্তবতা, সম্ভাবনা-সীমাবদ্ধতা, অনেক পারিপার্শ্বিকতা উঠে এসেছিল। তবে একটা ব্যাপার একরকম নিশ্চিত ছিল, এলিট প্যানেলে কেউ জায়গা পেলে, সেটি হবেন সৈকত ভাই।

বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ম্যাচে দাঁড়িয়েছেন এই দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে। আরও বেশ কিছু ‘প্রথম’ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হওয়ার ইতিহাস গড়াটাও তার অবধারিতই ছিল।

২০০৬ সাল থেকে তিনি ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলের অংশ। মূল আম্পায়ারদের একজন হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করছেন ২০১০ সাল থেকে। একটু একটু করে এগিয়েছেন। কিন্তু এলিট প্যানেল তখনও দৃষ্টিসীমার বাইরে ছিল।

বিসিবির এডুকেশন ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম তখন খুব ভালো ছিল না। সৈকত ভাইয়ের মতো যারা ভালো করছিলেন, তাদেরকে আইসিসিতে তুলে ধরা, লবিং বা সুপারিশের তেমন উদ্যোগও বিসিবির ছিল না। তবে পরে বোর্ড এসব অনুধাবন করতে পারে এবং কিছু ব্যবস্থা নেয়। তাতে সৈকত ভাইয়ের পথও কিছুটা সুগম হয়।

আইসিসি আম্পায়ারদের ‘ইমার্জিং’ তালিকায় ছিলেন তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই। এই প্যানেলের তালিকা প্রকাশ করে না আইসিসি, আম্পায়াররাই জানেন এসব। এখান থেকেই ক্রমে এলিট প্যানেলে ঢুকতে হয়। সেখানেও তালিকার নিচের দিক থেকে একটু একটু ওপরে উঠেছেন তিনি।

এবার এলিট প্যানেল থেকে মারাইস ইরাসমাস অবসরে যাওয়ার পর সৈকত ভাইয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আরও। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম ‘এলিট’ আম্পায়ার।

এখনও পর্যন্ত ১০ টেস্ট, ৬৩ ওয়ানডে ও ৪৫ টি-টোয়েন্টি পরিচালনা করেছেন তিনি, সবকটিই দেশের সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে ১১৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বাংলাদেশের আর কোনো আম্পায়ারের ৭০ ম্যাচের অভিজ্ঞতাও নেই।

আম্পায়ার হিসেবে মাঠের ভেতরে-বাইরে দক্ষতা যথেষ্টই আছে তাঁর। সমানভাবে আছে আম্পায়ারিংয়ের প্রতি ভালোবাসা ও নিবেদন।
একটা সময় খানিকটা তাচ্ছিল্যের সুরে বা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলা হতো ‘বাংলাদেশের আম্পায়ার’। সৈকত ভাই, মুকুল ভাইদের হাত ধরে সেই ধারা অকেটা বদলেছে। আশা করি এলিট প্যানেলেও মাথা উঁচু করেই টিকে থাকবেন সৈকত ভাই। তার পথ ধরে ভবিষ্যতে এখানে থাকবে বাংলাদেশের আরও প্রতিনিধি।

একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের আম্পায়ার এলিট প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন, এমনিতে এটি বড় কিছু নয়। সাধারণ প্রক্রিয়াই হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের নানা বাস্তবতার কারণেই সৈকত ভাইয়ের এই অর্জন একটি মাইলফলক, ইতিহাস ও নিশ্চিতভাবেই দারুণ এক উদাহরণ।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link