চিলে নির্বাচকদের কান নিয়ে গেছে

একটা উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল সকলে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কারা যাচ্ছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। দল ভারতের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার আগের দিন জানা গিয়েছিল ১৫ জন সদস্যের নাম। সেবার অবশ্য নানামুখী ঝামেলায় জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট।

তাই নির্বাচকরা শেষ অবধি অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু বদলেছে দৃশ্যপট। সামনের মাসেই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দল। তাইতো টি-টোয়েন্টি ও প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য দল ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে বেশ আগেভাগেই। প্রায় বিশ দিন আগেই দল ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এদফা সময় নেওয়া যেত।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর চলমান। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি মাত্র ক্ষুদ্রতম সংস্করণের টুর্নামেন্ট আয়োজন। বিপিএলের পারফরমেন্সের উপর ভর করেই জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বাছাই করা হয়। নতুন খেলোয়াড়দের উঠে আসার সুযোগ দেওয়ার জন্যই বিপিএল আয়োজন।

কিন্তু নির্বাচকদের যেন বিপিএল শেষ হওয়া অবধি ছিল না ধৈর্য। কিংবা বলা যেতে পারে, অব্যবস্থাপনার আরও একটি উদাহরণই যেন সৃষ্টি করল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাবেক নির্বাচক প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম দিন থেকেই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপুরা।

এর আগে নিজেদের শেষ অ্যাসাইন্টমেন্ট হিসেবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলটি ঘোষণা করে গেছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নুরা। সমস্যা সেটা নয়। সমস্যা হচ্ছে বেশ আগেভাগেই বিপিএলের সম্ভাব্য পারফর্মার ধরে নিয়ে জাতীয় দলে তাদের সুযোগ করে দেওয়া।

টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে এনামুল হক বিজয়, নাঈম শেখরা ভাল ছন্দে ছিলেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে দুইজন ব্যাটারই খেই হারিয়েছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন তানজিদ হাসান তামিম। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টে তানজিদ তামিমের উপর ভরসা করেছিল নির্বাচক প্যানেল।

কিন্তু সেই একই খেলোয়াড় বিপিএলে কেমন করে সেটি দেখার অপেক্ষা করতে যেন সকলেই ছিলেন নারাজ। খেলোয়াড়দের ছুড়ে ফেলে দেওয়ার রীতি তো আর নতুন নয়। অন্যদিকে, ফিনিশারের অভাবে দলে এক ঝাঁক ওপেনারদের আনাগোনা। সৌম্য সরকারকে খুব সম্ভবত ফিনিশার বিবেচনা করেই দলে নিয়েছেন নির্বাচকরা। অথচ সেই জায়গাটায় অনায়াসে সুযোগ পেতে পারতেন জাকের আলি অনিক।

এবারের বিপিএলে ক্রমাগত ভাল করে যাচ্ছেন জাকের। ইনিংসের শেষের দিকে দুর্দান্ত সব ইনিংসের উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যার অধিকাংশই দলের জন্যে বেশ কার্যকর। অন্যদিকে, বহুদিন বাদে ক্রিকেট ময়দানে নেমে ঝলক দেখাচ্ছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ব্যাটে-বলে সমানতালে নিজের সেরাটাই যেন দিয়ে চলেছেন সাইফউদ্দিন।

এদের কারও জন্যই অপেক্ষা করেনি সদ্য সাবেক নির্বাচক প্যানেল। তারা যা করেছেন তা হচ্ছে, ‘দায় সারা’। কোন মতে সংখ্যাতত্ত্ব বিবেচনায় নিয়ে একটা দল ঘোষণা করতে পারলেই যেন মিলবে নিস্তার। সেই ধ্যান-ধারণা থেকেই এত আগেভাগেই একটা দল ঘোষণা করেই খালাস। সময় ফুরিয়েছে, শেষ ফাইলটা তাই দ্রুত বন্ধ করা চাই।

এতে করে সত্যিকারের পারফর্মারদের সাথে করা হয় অবিচার। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথেও তো অবিচার করা হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টের জন্য একটা জমাট রসায়নের দল তো করা চাই। সেদিকেও যেন নজর নেই।

চিলে কান নিয়ে গেছে শুনেই নির্বাচকরা দৌড়ান ভক্তদের পছন্দের খেলোয়াড়দের পেছনে। তাতে করে পারফর্মার হন নিরুৎসাহিত। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link