একটি জায়গায় দেখছিলাম ভারত-পাকিস্তান মিলিত সর্বকালের সেরা একাদশ কেমন হবে সেই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। সেসব দেখে আমারও মনে হলো, ব্যাপারটা করলে কেমন হয়?
এই ধরণের লেখা বরাবরই আমাকে আকৃষ্ট করে তার প্রধান কারণ হলো, এই ধরণের লেখা লিখতে গিয়ে নিজেকে বেশ ক্রিকেট প্রত্নতাত্ত্বিক মনে হয়। সময়ের অতল খনিতে গিয়ে গবেষণা করে এই ধরণের দল তৈরি করার মজাই আলাদা।
দ্বিতীয় আরেকটি কারণ হলো, এই ধরণের লেখায় পাঠ প্রতিক্রিয়া চটজলদি পাওয়া যায়। এবং সেইসব প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চাঙ্গের ক্রিকেট আলোচনার শরিক হবার একটা সুযোগ থেকে যায়। আশা করা যায় এই লেখাও লিখে হতাশ হবো না। পাঠকরা হতাশ হবেন কিনা, সেটা অবশ্য তাঁরাই জানেন।
ভারত-পাকিস্তান মিলিত টেস্ট একাদশ তৈরি করতে গিয়ে একটি প্রশ্ন খচখচ করছিলো। দলটি বানানোর ভিত্তি কি হবে? একে অপরের বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স নাকি সার্বিক বিচার? অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁরা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে দারুন খেললেও, সার্বিক বিচারে ততটা সফল নন।
আবার অনেকে এর ঠিক উল্টো। শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, যে দলটি সার্বিক সফলতার বিচারেই তৈরি হোক। কারণ এই দল তো আর ভারত পাকিস্তান ম্যাচ খেলতে নামবে না। বরং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধে খেলবে।
প্রথমেই চলে আসি ওপেনার নির্বাচনে। দুই দেশেই অসংখ্য ভালো ভালো ওপেনার রয়েছেন। পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার, আমির সোহেল, রমিজ রাজা, মাজিদ খান তো ভারতের সুনীল গাভাস্কার, বীরেন্দ্র শেবাগ, বিজয় মার্চেন্ট, সৈয়দ মুশতাক আলী।
অনেক ভেবে যে দুজনকে নিলাম, আশা করি তাঁদের নাম দেখে পাঠক ভ্রু কোঁচকাবেন না। হানিফ মোহাম্মদ এবং সুনীল গাভাস্কার। আনোয়ার ও শেবাগকে দলে রাখতে না পেরে আমি নিজেই হতাশ।
এরপর মিডল অর্ডার। সবথেকে কঠিন ৩ থেকে ৫ নির্বাচন। দুই দলেই এতো ভালো ভালো মিডিল অর্ডার ব্যাট এসেছেন। ভারতের রাহুল দ্রাবিড়, বিজয় হাজারে, শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বিরাট কোহলি-তো পাকিস্তানের জহির আব্বাস, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ইনজামাম উল হক, মোহাম্মদ ইউসুফ আর ইউনুস খুন। কাকে ছেড়ে কাকে দেখি।
কাজেই এ অবস্থায় যা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়, অর্থাৎ পরিসংখ্যান, তারই দ্বারস্থ হলাম। অত:পর ভারতের সর্বকালের দুই সর্বোচ্চ মোট রানের মালিক এবং পাকিস্তানের একমাত্র দশহাজারি ব্যাট ইউনুস খানকেই বেছে নিলাম।
মিয়াঁদাদের আগে ইউনুস কেন এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই আসবে। তার দুটো কারণ, এক জাভেদ দেশের মাটিতে যতটা সফল (৬১.৩৮ গড়) বিদেশে ততটা নন (৪৫.৮০ গড়) । ইউনুস সেখানে বিদেশেও ৫১.২৭ গড় বজায় রেখেছেন ৭১ টেস্টে। দেশে ও আরবে হওয়া ম্যাচগুলির কথা নাহয় বাদই দিলাম।
ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ডে গড় ৫০ এর ওপর। অস্ট্রেলিয়ায় ৪৯.৬৪। জাভেদ সেখানে ইংল্যান্ডে ৪৬। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্টইন্ডিজে ৪০ এরও নিচে। ইউনুসকে নেবার দ্বিতীয় কারণটি হলো, পাকিস্তানের দেশপ্রেমী আম্পায়ার। জাভেদের বহু বড়ো ইনিংসে আম্পায়ারের সামান্য অবদান রয়েছে। ইউনুস সেখানে বেশির ভাগটাই খেলেছেন নিরপেক্ষ আম্পায়ারের জমানায়। ছ’নম্বরে একজন অলরাউন্ডার থাকবেন। দুই দলেই অসংখ্য ভালো ভালো অল-রাউন্ডার ছিলেন।
ইমরান খান, মুশতাক মোহাম্মদ, আব্দুল হাফিজ কারদার পাকিস্তানের। ভিনু মানকড়, কপিল দেব ভারতের। কিন্তু এতোজনের মধ্যেও দুইজন নিজেদের জন্যে একটি করে সু-উচ্চ বেদির ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। দু’জনের একজনকেও বাদ দেওয়া অসম্ভব। ইমরান ও কপিল। ইমরান ছ’নম্বরে। কপিল সাতে।
উইকেট কিপিংয়ের মামলায় ধোনির ছায়া পেরিয়ে অন্যদের কাছে পৌঁছানো কঠিন। কিন্তু তবুও লতিফ, ওয়াসিম বারি, মঈন খান, ইমতিয়াজ আহমেদ, সৈয়দ কিরমানিদের উপেক্ষা করা যায় না। শেষমেশ যদিও আমার দলে ধোনিই থাকুন।
ফাস্ট বোলিংয়ের মামলায় পাকিস্তানের মনি-মাণিক্যের সামনে ভারতের পেস বোলিং সিন্দুককে নিছক সিটি গোল্ড ঠাসা মনে হয়। তবু জাভাগাল শ্রীনাথ ও জহির খানের নামটা হাওয়ায় ভাসুক।
জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ শামিও থাকুন আলোচনায়। তবে প্রথম এগারোয় পাকিস্তানের কাউকে সরিয়ে আসাটা মুশকিল। ওয়াসিম আকরাম তো থাকছেনই। সাথে শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনুস, ফজল মাহমুদ ও সরফরাজ নওয়াজ। আমার পছন্দ এখানে ফজল মাহমুদ।
হামাগুড়ি দেওয়া টেস্ট দল পাকিস্তানের অভিভাবক-সম ছিলেন তিনি। লাখনৌতে পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্টেই ভারত বধ, ওভালে ইংরেজ বিজয়, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম জয়-সবেতেই ফজল সাহেবের ১০ এর অধিক উইকেট ছিল।
ওয়াকার ইউনুসরা পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিং কাব্যের শক্তি-সুনীল হতে পারেন, মাইকেল মহাসুধন কিন্তু ফজল মাহমুদ।
বাকি রয়ে গেলো একটি স্পিনারের জায়গা। আব্দুল কাদির, সাকলাইন মুশতাক, মুশতাক আহমেদ, ইয়াসির শাহ, অনিল কুম্বলে, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, হরভজন সিং, ভারতের স্পিন চতুষ্টয় আর সুভাস গুপ্তে-দুই দলেই ভালো স্পিনারের অভাব নেই।
কিন্তু দলের অধিনায়ক যেহেতু ইমরান, এবং স্পিনারের সাফল্য অনেকাংশে অধিনায়কের ওপর নির্ভরশীল, কাজেই এই দলে আমি নেবো আব্দুল কাদিরকে। পিচ যদি আরেকটি স্পিনার দাবি করে সেক্ষেত্রে প্রসন্ন, সাকলাইন বা অশ্বিন আসতে পারেন।
কুম্বলে, গুপ্তে, চন্দ্র বা বেদি নন কারণ, একই দলে দুটি লেগস্পিনার বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে।
তাহলে দলটা দাঁড়ালো এরকম
- সুনীল গাভাস্কার
- হানিফ মোহাম্মদ
- রাহুল দ্রাবিড়
- শচীন টেন্ডুলকার
- ইউনুস খান
- ইমরান খান (অধিনায়ক)
- কপিল দেব
- মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক)
- ওয়াসিম আকরাম
- ফজল মাহমুদ
- আব্দুল কাদির
- রিজার্ভ: রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভিনু মানকড়, জাভেদ মিয়াঁদাদ আর রশিদ লতিফ। বিশেষ সদস্য ও দলের ম্যানেজার-পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক এবং ভারতের হয়েও খেলা আব্দুল হাফিজ কারদার।