বাবর দ্য গ্রেট

নান্দনিকতা, আভিজাত্য, আগ্রাসন – সব তাঁর ব্যাটিং থেকে ঠিকরে বের হয়। যোগ্যতাও তাঁর কম নয়। বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, জো রুট ও কেন উইলিয়ামসনের সাথে সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের সাথে তাঁর নাম উচ্চারিত হওয়া উচিৎ কি না – সে নিয়ে চলে রীতিমত তর্ক-বির্তক।

নান্দনিকতা, আভিজাত্য, আগ্রাসন – সব তাঁর ব্যাটিং থেকে ঠিকরে বের হয়। যোগ্যতাও তাঁর কম নয়। বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, জো রুট ও কেন উইলিয়ামসনের সাথে সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের সাথে তাঁর নাম উচ্চারিত হওয়া উচিৎ কি না – সে নিয়ে চলে রীতিমত তর্ক-বির্তক। আর সেই বিতর্কটা সব সময় অযৌক্তিকও নয়। কারণ, তিনি সেই গুটিকয়েক ব্যাটসম্যানদের একজন যারা ধারাবাহিকভাবে বোলারদের ওপর আধিপত্ত ধরে রেখে পারফর্ম করতে পারেন।

পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে নান্দনিক ব্যাটসম্যানের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। সেই তালিকায় সর্বশেষ আলোচিত সংযোজন তিনি। যোগ্যতাও কম নয়, সেটা যে ফরম্যাটই হোক না কেন। টি-টোয়েন্টিতে যৌথ ভাবে ১৫০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেছেন সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে। ওয়ানডেতে পাকিস্তান দলের হয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি।

তিনি হলেন বাবর আজম, পাকিস্তান ক্রিকেট তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বে তাঁর আগমণ হয়েছিল ‘নেক্সট বিগ থিঙ’ হিসেবে। লাহোরে জন্ম নেওয়া বাবর বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে বরাবরই বড় নাম ছিলেন, ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে তাঁর উত্থান।

২০১০ ও ২০১২ – অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে দু’টি বিশ্বকাপ খেলেন তিনি। দু’টোতেই তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আকমল ভাইদের ফার্স্ট কাজিন তিনি, তবে, তিন ভাইদের মত তিনি প্রতিভা থাকার পরও হারিয়ে ফেলেননি।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি টানা তিন সেঞ্চুরি করার পর ঠাঁই পান সাদা পোশাকে। এখন যেকোনো ফরম্যাটেই তাঁকে মিসবাহ উল হক কিংবা ইউনুস খানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর এখন ‍নিজের মানটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, কোহলি আর বাবর একই ঘরানার ব্যাটসম্যান কি না – সেই আলোচনা হয়।

তিন নম্বর পজিশনে তিনি বিশ্ব সেরা। ২০১৯ সালে তিনি এক পঞ্জিকাবর্ষে পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে এক হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছান। তিনি খেলেন ১৯ ইনিংস। আগের রেকর্ডটা ছিল ‘বড়ে মিয়া’ খ্যাত জাভেদ মিয়াঁদাদের। তিনি ১৯৮৭ সালে হাজারি ক্লাবে পৌঁছান ২১ ইনিংস খেলে।

কিংবদন্তি মিয়াঁদাদকে সেই বছর আরো একদিক থেকে পেছনে ফেলেন বাবর। বিশ্বকাপের মঞ্চে সেবার বাবর করেন ৪৭৪ রান, যেকোনো বিশ্বকাপ আসরে কোনো পাকিস্তানির সর্বোচ্চ রান। আগের সেরা মিয়াঁদাদ ১৯৯২ বিশ্বকাপে করেছিলেন ৪৩৭ রান।

বাবরের উত্থান পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণের বাইরেও আলাদা একটা গুরুত্ববহন করে। বাবর এমন একটা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছেন, যখন পাকিস্তানের ভেন্যুগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক রকম নির্বাসিত। এমন সময় পরবর্তী প্রজন্মকে ক্রিকেটমুখী করার জন্য প্রয়োজন একজন নায়কের।

আর সেই নায়কের শূণ্যস্থানটাই পূরণ করেছেন বাবর। তবে, এটাও ঠিক যে – বিশ্বসেরাদের কাতারে উঠতে আরো অনেক অর্জনকে পায়ের নিচে আনতে হবে ‘বাবর দ্য গ্রেট’-কে!

বাবরের সেরা ইনিংসগুলো কোনো কারণে যদি মিস করে ফেলেন, তাহলে খুঁজে বের করে হাইলাইটস দেখুন। দেখতে গেলেই লক্ষ্য করবেন, এই ভদ্রলোকের ব্যাটিং দেখাটা অন্যরকম এক আকর্ষণের ব্যাপার। গ্রেসফুল ব্যাটিং, পারফেক্ট টাইমিং, সুইট টাইমার অব দ্য বল – এমন পরিপূর্ণ প্যাকেজ একজনের মধ্যে আজকাল আর দেখা যায় না। আর সেটা সব ফরম্যাটেই – টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি – সব খানেই বাবর ছাড়িয়ে যেতে চলেছেন সবাইকেই!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link