শেন ওয়ার্নের মতো তিনি হাত থেকে কোনো জাদু তৈরি করতে পারতেন না। তিনি মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো ব্যাটসম্যানদের চারপাশে স্পিনের মায়াজাল তৈরি করেননি। তবুও তাঁর নামের পাশে আছে ৬১৯ উইকেট। এই বোলার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
বলা হচ্ছে ভারতীয় কিংবদন্তি অনিল কুম্বলের কথা। তবে উইকেট সংখ্যায় শেন ওয়ার্ন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরন এগিয়ে থাকলেও একটা জায়গায় এগিয়ে আছেন কুম্বলে। এক ইনিংসে প্রতিপক্ষের সবকয়টি উইকেট একাই দখল করার রেকর্ড আছে তাঁর ক্যারিয়ারে। কিন্তু বিরল এই কীর্তি কখনও গড়তে পারেননি বাকি শেন ওয়ার্ন কিংবা মুত্তিয়া মুরালিধরন।
অনিল কুম্বলেকে ছাড়া এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন বোলার এক ইনিংসে দশ উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসে সবার আগে এই মাইলফলক ছোঁয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন জিম লেকার। অন্যদিকে, ২০২১ সালে আজাজ প্যাটেল এক ইনিংসে একাই ভারতের দশ উইকেট শিকার করেছেন।
তবে অনিল কুম্বলের দশ উইকেট তোলার গল্পে এমন একজন রয়েছে যিনি সবসময়ই আড়ালে ছিলেন। আড়ালে থাকা এই ব্যক্তির নাম জাগাভেল শ্রীনাথ – কুম্বলের এই সতীর্থকে অনেকেই হয়তো চেনে না। তবে তিনিই কুম্বলকে দশ উইকেট তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন।
পাকিস্তানের কাছে প্রথম টেস্টে হেরে ভারত তখন চাপের মুখে। দিল্লিতে দ্বিতীয় টেস্টেও পাকিস্তান আধিপত্য বিস্তার করেছিল; অন্যদিকে ভারত তখন হাপিত্যেশ করছিলো একটা উইকেটের জন্য। তখনই ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন অনিল কুম্বলে। একের পর এক উইকেট তুলে নিতে শুরু করেন এই ডান-হাতি বোলার।
একটা সময় পাকিস্তানের প্রথম নয় জন ব্যাটসম্যানই আত্মাহুতি দেন অনিল কুম্বলের হাতে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে ছিলেন ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনুস। এরপরই বোলিংয়ে আসেন পেসার জাগাভেল শ্রীনাথ। দুই টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানের বিপরীতে একজন ফাস্ট বোলার – চেষ্টা করলে হয়তো একটা উইকেট তুলে নিতে পারতেন।
কিন্তু উইকেট তোলা তো দূরে থাক, শ্রীনাথ উল্টো ব্যাটারকে আউটকে থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে শুরু করলেন। কারন তাঁর ওভারে কেউ আউট না হলেই কুম্বলে পারবেন দশ উইকেট শিকার করার কীর্তি গড়তে। পুরো ওভারে শ্রীনাথ লেগ সাইডে কিছুটা বাইরে দিয়ে এবং ওয়াইড লাইনের কাছাকাছি জায়গায় বল করেছেন।
সতীর্থের এই বিশ্বাস রেখেছেন অনিল কুম্বলে। পরের ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আউট করেছেন ওয়াসিম আকরামকে। আর এরই মধ্য দিয়ে এক ইনিংসে দশ উইকেট পাওয়ার স্বাদ লাভ করেন তিনি। সেদিন তাঁর বোলিং ফিগার ছিল এমন – ২৬.৩ ওভার, ৯টি মেইডেন, ৭৪ রানে ১০ উইকেট।
অবশ্য জাগাভেল শ্রীনাথকে কেউই এমন কিছু করতে বলেনি। তিনি নিজ থেকেই এমন বোলিং করেছেন। পরবর্তীতে অনিল কুম্বলে একটি সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারটি বলেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘জাভাগালকে তাঁর সমস্ত দক্ষতার ভুল প্রয়োগ করতে হয়েছে এবং অনেকটা বাইরে বোলিং করতে হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি তাকে এমনটা করতে বলিনি। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমাকে দশ উইকেট পেতে হবে কিন্তু এভাবে কাউকে বল করতে বলাটা বিব্রতকর হত। আমি শুধু নিয়তির উপর ভরসা করেছিলাম।’
হয়তো কারও কারও কাছে মনে হতে পারে জাভাগাল শ্রীনাথ তো বিশেষ কিছু করেনি। কিন্তু আসলে তাঁর সেই ওভারের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায়। যে কোনো পেসারের স্বাভাবিক ছয়টা বল একজন টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানকে আউট করতে যথেষ্ট। শ্রীনাথ সেই চেষ্টা করেননি বলেই কুম্বলে একাই দশ উইকেট তুলে নিতে পেরেছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে এমন অর্জন অনিল কুম্বলের জন্য খুবই বিশেষ। এই বিশেষ অর্জনের পুরোটাই তাঁর নিজের সামর্থ্যের প্রতিফলন। তবে জাভাগাল শ্রীনাথের ছোট এই অবদানকে ছোট করে দেখা যায় না। এক ইনিংসে নয় উইকেট অর্জন করার ক্লাব নেহায়েত ছোট নয় – শ্রীনাথ সে সময় উইকেট পেয়ে গেলে কুম্বলে হয়তো এই ক্লাবের একজন হয়েই থাকতেন।