দ্যুতি কিংবা গতি

১৬১ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করা কি চাট্টিখানি কথা? তবু সে গতিতে বল করে বিশ্ব রেকর্ডটা এখনও নিজের দখলে রেখেছেন পাকিস্তানের গতি দানব শোয়েব আখতার। কি দুর্দান্ত গতি! কি ভয় ধরানো রিভার্স সুইং। ব্যাটারের প্যাড জোড়া না থাকলে নির্ঘাত এতদিনে ২৪৭ ওয়ানডে উইকেটের পাশে কয়েক জোড়া ভাঙা হাড্ডিও লেখা হয়ে যেত তাঁর নামের সাথে।

বিরল এক রেকর্ড হত তখন। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে উঠে আসা শোয়েব আখতার ব্যাটারদের জন্য ছিলেন যমদূত। উপমহাদেশ হোক কিংবা ‘সেনা’ কন্ডিশনে সব খানেই ত্রাস ছড়িয়েছেন শোয়েব আখতার। অভিষেকের পর প্রথমবার দেশের বাইরে খেলতে গিয়েই আলো ছড়িয়েছিলেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান টেস্টে তিনি নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। তাও দক্ষিণ আফ্রিকার মত এক অপরিচিত কন্ডিশনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে। সে টেস্ট ম্যাচটা পাকিস্তান জিতেছিল ২৯ রান ব্যবধানে। তারপর তিনি রীতিমত উড়তে থাকেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্ণিল আকাশে।

তবে তাঁর লম্বা রান আপের জন্য প্রায়শই তিনি সমালোচনার শিকার হয়েছেন। তবুও সে লম্বা রান আপকে ছেঁটে ছোট করেননি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ায় তিন ওভার করেই হাঁপিয়ে উঠতেন। তবুও তাঁর আগ্রাসনে যেন বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি কখনও। তিনি নিজেকে একেবারে নিংড়ে দিয়ে বল করতেন। তাতে তাঁর উইকেট শিকারে যে খুব ব্যঘাত ঘটেছে এমন তথ্য খুব একটা মেলে না।

তবে এত কঠোর পরিশ্রমেও যে ইনজুরি তাঁকে একেবারেই ছুঁয়ে যায়নি তা নয়। মাঝে মধ্যেই ইনজুরি আক্রন্ত হয়েছেন শোয়েব। তাছাড়া মাঠের বাইরে বিতর্কেও ছিলেন তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তবে মাঠের খেলায় তিনি দুর্দান্ত, দুর্দমনীয়। শুধু যে তাঁর গতিতেই তিনি পরাস্ত করতেন প্রতিপক্ষকে তাও নয়। শুধু কি আর এক গতি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা যায়? নেওয়া যায় ১৯৮ টি টেস্ট উইকেট?

নিশ্চয়ই না। শোয়েবের ঝুলিতে অসামান্য গতি ছাড়াও ছিল দুর্ভেদ্য স্লোয়ার আর অপ্রতিরোধ্য রিভার্স সুইং। অসাধারণ দুই স্লোয়ারে তিনি ২০০৫ সালে তিনি কাবু করেছিলেন লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট এবং ইয়ান বেলকে। সেই দুর্ভেদ্য স্লোয়ারে কাবু করেই ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে সহয়তা করেছিলেন শোয়েব।

আর রিভার্স সুইংয়ের এক অনন্য উদাহরণ হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১ রানে পাঁচ উইকেট নেওয়ার ম্যাচটি। সেদিন শোয়েব আখতার তাঁর পকেটে পুরেছিল রিকি পন্টিং, মার্ক ওয়াহ, স্টিভ ওয়াহ ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের উইকেট। ২০০২ সালে তরুণ এক ক্রিকেটার বাঘা-বাঘা সব খেলোয়াড়দের উইকেট নিজের করে নিয়েছিলেন রিভার্স সুইংয়ের কল্যাণে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কেবলমাত্র তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন শোয়েব। সে তিন ম্যাচেও তিনি ব্ল্যাকক্যাপদেরকে জানিয়ে দিয়ে এসেছিলেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। সেই তিন ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগার যথাক্রমে ৬/১১, ৫/৪৮ এবং ৬/৩০। ব্ল্যাকক্যাপসদের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই তিনি নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট।

দ্বি-পাক্ষিক সিরিজেই তাঁর প্রতিভার প্রদর্শন সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বিশ্ব মঞ্চেও আলো ছড়িয়েছেন, নিজের প্রতিভার আলো। ২০০৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে একহাত দেখে নিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। মাত্র ৩৬ রান খরচায় তিনি নিয়েছিলেন চার উইকেট। আর সেই  ম্যাচের ফলাফল শেষ অবধি পাকিস্তানের পক্ষেই এসেছিল।

আতঙ্ক ছিল শোয়েব প্রতিপক্ষের। তবে তিনি আশীর্বাদ ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের। তাঁর রৌদ্রজ্জ্বল দিনে পাকিস্তান হেসেছে। যতদিন ছিলেন দলে একটা বাড়তি ভরসা জুগিয়েছেন দলকে। আর নিজের গতি তারতম্য সেই সাথে সুইং দিয়ে তিনি পাকিস্তানের পেস আক্রমণের ধারাক হয়েই ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link