ব্যক্তিগত বিরোধের দলীয় প্রভাব: তামিম-সাকিব কেস স্টাডি

তিনটা বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে চাই।

১.

ব্যাটিংয়ে সাকিবের সবচেয়ে পছন্দের বা স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা হল ‘নাম্বার থ্রি’। বলছি না, শুধু সিনিয়র বলে তাঁকে তাঁর পছন্দের জায়গাতেই নামাতে হবে। তখন এটা হবে এক ধরনের অন্যায় আবদার ৷

কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে সাকিবকে আমার তিনে দেখতে চাওয়াটা তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নয়, বরং তাঁর সাফল্যের জন্য। তিন নম্বরে সাকিবের ব্যাটিং পরিসংখ্যান এক কথায় ঈর্ষণীয়। তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ গড় ও সর্বোচ স্ট্রাইক রেটও তিনে ব্যাটিং করেই।

তা ছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন না! ৮৬ গড়ে টুর্নামেন্টে ৬০৬ রান সাকিব সংগ্রহ করেছিলেন তিনে নেমেই। তারপরেও তাঁর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বারবার নড়াচড়া করা বা নিজের পছন্দের পজিশনে প্রুভেন পারফর্মার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সে জায়গাটায় না খেলানো বা থিতু না করানোর সিদ্ধান্তটা প্রশ্নের যথেষ্টই অবকাশ রাখে।

হ্যাঁ, নানা সময় নানা কারণও দেখানো হয়েছে ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। কখনো নতুন কাউকে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের পজিশনে সুযোগ করে দেওয়া বা কখনো ডানহাতি-বামহাতি কম্বিনেশনের দোহাই দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক, ক্যাপ্টেন ও কোচের অনেক পরিকল্পনা থাকে যেগুলো চিরাচরিত হয় না। তবে এক্ষেত্রে তাঁদের পরিকল্পনার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, এসব আসলে ধোপে টেকার মতো কোনো পরিকল্পনা নয়।

২.

সাকিব-তামিমের সম্পর্কে ফাঁটল এখন সবারই জানা। তাই বলে তামিম অধিনায়কত্বের দাপটে ইচ্ছা করেই শত্রুতাবশত সাকিবকে তাঁর পছন্দের পজিশনে খেলাচ্ছেন না, এমনটা আমার কাছে আর পাঁচটা-দশটা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতোই মনে হয়। তামিম তো দূরে থাক, আমাদের সিনিয়র-জুনিয়র কোনো ক্রিকেটারই এতটা শিশুতোষ বা বেকুব বলে আমি বিশ্বাস করি না। এরকম হীন মানসিকতা থাকলে তাঁরা এতদূর আসতে পারতেন না বলেও বোধ করি। আর ফ্যাক্টও কিন্তু এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দিচ্ছে।

সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজেও এক জন অতিরিক্ত ওপেনার একাদশে থাকায় সাকিবকে চারে খেলানো হয়েছিল। আর তখন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দলের দায়িত্বে ছিলেন লিটন কুমার দাস। ভারতের বিপক্ষে সে সিরিজে তিন ম্যাচের দুটোতেই চারে ব্যাটিং করেন সাকিব।

বাকি একটাতে খেলেন তিনে, শান্ত একাদশে না থাকার বদৌলতে। তাই ওই বন্ধুত্বে ছেদ, সাকিব-তামিমের প্রতিকূল সম্পর্কের জন্য নয়, আজকে সাকিবকে পাঁচে খেলানোটা কোনো ট্যাকটিক্যাল পরিকল্পনারই (সেই লেফট-রাইট কম্বিনেশন মানা বা ডানহাতি অফির বিপক্ষে বাঁ-হাতি ব্যাটারকে মোকাবেলা না করানোর মতো) একটা অংশ বলে বিশ্বাস।

৩.

গত কয়েক দিন ধরেই একটা কথা শুনছি, সাকিব-তামিমের সম্পর্কে টানাপোড়েনের প্রভাব না কি দল বা মাঠে পড়বে না। অনেকেই এ কথা বলছেন, স্বয়ং তামিমও এ ব্যাপারে সকলকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু এটা কতটা সম্ভব, আমি সন্দিহান।

একটা সাজঘরে দুই জন লিডিং ক্যারেক্টার একে অপরের সাথে কথা বলেন না, এ-রকম পরিস্থিতির প্রভাব একটু হলেও দলে পড়বে, সেটা তাঁরা যতই অস্বীকার করুন না কেন! একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আবারও ঘুরেফিরে আসছে সাকিবের তিন নম্বরে ব্যাটিং করার প্রসঙ্গ।

২০১৯ বিশ্বকাপের প্রাক্কালে গোটা টুর্নামেন্টে সাকিব তিন নম্বরে ব্যাট করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে সায় ছিল না প্রধান কোচের। সাকিব অধিনায়কের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করেন এবং পরে অধিনায়ক গিয়ে কোচকে কনভিন্স করেন। বাকি ইতিহাস তো সবারই জানা!

এখন দলের অধিনায়কের সাথে যদি সাকিবের কথা বলা তো দূরে থাক, মুখ দেখাদেখিও না করার মতো সম্পর্ক থাকত, তা হলে কী এমনটা সম্ভব হত ?

তাই যতই মুখে মুখে বলুক, ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব পেশাদার কাজকর্মে পড়বে না, বাস্তবতা হল সূক্ষ্মভাবে বা পরোক্ষভাবে তা আসলে পুরোপুরি সম্ভব হয়ে ওঠার নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link