হৃদয়ে কাঁপন ধরেছে। বৃদ্ধ জটায়ু জেগে উঠেছেন। অনেক আঘাত আর প্রতিঘাতে জর্জরিত যে ব্যাট, সেই ব্যাটটাই সম্বল। আজও! ওই ব্যাটটাই সর্ব বিপ্লবে গর্জে উঠেছে। যতক্ষণ ওই ব্যাট চলবে, যতক্ষণ বৃদ্ধ জটায়ুর প্রলয় চলবে – ততক্ষণ কারও নিস্তার নাই।
রোহিত শর্মা — এই নামটাই যথেষ্ট, এই নামটাই সব বিজেয়র গল্প লেখে। এই নামটাই পুরনো দেয়ালের গায়ে নতুন ইতিহাস আঁকে। সময় বদলায়, ক্যালেন্ডার উল্টে যায়, সরকার বদলে যায়, প্রিয়তমার চোখের কাজল শুকিয়ে যায়, প্রতিপক্ষরা আসে-যায়, কিন্তু বদলান না রোহিত শর্মা। কারণ তিনি জানেন, তাঁর ব্যাটের শব্দই শেষ কথা। বলটা ব্যাটে লেগে গ্যালারিতে আছড়ে পড়বে, ওটাই শেষ ঠিকানা। এর কোনো নড়চড় হবে না।
তাঁর কাছে পরিসংখ্যানের চেয়ে দলের প্রয়োজনীয়তা বেশি দামি। ইনিংস বড় করা নয়, তিনি চান ইমপ্যাক্ট। তাঁর কাছে ব্যক্তিগত রেকর্ডের চেয়ে দলের জয় বেশি জরুরি। তিনি কারও কথা শুনবেন না। তিনি কারও ধার ধারবেন না। তিনি নিজেকে বদলাবেন না। দল তাঁকে যে ভূমিকা দিয়েছে, সেই ভূমিকাটাই তিনি পালন করবেন।
খোদ সুনীল গাভাস্কারও বলে কয়ে তাঁর অ্যাপ্রোচ পাল্টাতে পারবেন না। ফাইনালে তো আরও নয়। ফাইনাল মানেই রোহিত শর্মার মঞ্চ। রোহিত শর্মার মহাযজ্ঞ, যেখানে বিজয়ের পতাকা উড়বে তাঁরই ইমপ্যাক্টে – সেখানে তিনি বদলে যান কি করে।
তিনটা ডাবল সেঞ্চুরি তাঁর নামের পাশে। সেসব হয়েছে বাসী। রোহিত শর্মা মানেই এখন ওপেনিংয়ে নেমে ঝড় তোলার আসর। সেই আসরটা গোটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জুড়ে অদেখাই ছিল প্রায়। কিন্তু, মঞ্চটা যখন ফাইনাল, তখন বাঘের আসর চেহারাটা দেখা গেল। রোহিতের ব্যাট বলে উঠল – বদলে গেলে নামটা আর রোহিত শর্মা কেন!
মাত্র ১০.১ ওভার গড়িয়েছে, ভারতের রান তখন ৬৫। রোহিত হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলক ছুয়ে ফেলেছেন। স্কোরবোর্ডের একপাশে লেখা ২৫২, এই রান তাড়া করে জিততে হবে ভারতকে। শুরুতেই ভারত যেমন সূচনা এনে দিয়েছেন রোহিত – এরপর আর কথা থাকতে পারে না। ৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন। এটাই তাঁর রোল। বৃদ্ধ জটায়ুর গল্প এখানেই ফুরিয়েছে, বাকিটা সময় সামলে নিয়েছে তাঁর সহযোদ্ধারা। আরেকটা বিশ্ব শিরোপা হাতে নিয়েছে ভারত।