সর্বকালের সেরা বার্সেলোনা একাদশ

ইয়োহান ক্রুইফ, লিওনেল মেসি, ম্যারাডোনা, স্যামুয়েল ইতো, জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, থিয়েরি হেনরি এবং রোনালদিনহোর মতো সুপারস্টাররা বিভিন্ন সময়ে বিখ্যাত ব্লাউগ্রানা শার্ট গায়ে জড়িয়েছেন। আর তাদের নিয়ে এবার গঠন করা হয়েছে এফসি বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা একাদশ।

বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে সফলতম ক্লাবগুলোর তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে স্প্যানিশ জায়ান্ট এফসি বার্সেলোনা। বিশ্বের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ট্রফি ক্যাবিনেট সম্পন্ন ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যেও একটি তারা। ক্লাবের শুরু থেকে সময়ের সেরা অনেক খেলোয়াড় কাতালান ক্লাবটির হয়ে মাঠে নেমেছেন।

ইয়োহান ক্রুইফ, লিওনেল মেসি, ম্যারাডোনা, স্যামুয়েল ইতো, জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, থিয়েরি হেনরি এবং রোনালদিনহোর মত সুপারস্টাররা বিভিন্ন সময়ে বিখ্যাত ব্লাউগ্রানা শার্ট গায়ে জড়িয়েছেন। আর তাদের নিয়ে এবার গঠন করা হয়েছে এফসি বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা একাদশ।

  • গোলরক্ষক: ভিক্টর ভালদেস

ভিক্টর ভালদেস মূলত বার্সেলোনা একাডেমি লা মেসিয়া-তে বেড়ে উঠেছেন। ২০০২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দীর্ঘ এক যুগ ধরে বার্সা’র মূল দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। এই সময়ে ছয়টি লিগা শিরোপা এবং তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ মোট ২১টি ট্রফি জিতেছেন এই স্প্যানিশ। ২০০৯ সালে ‘হেক্সা’ জেতা দলের গোলবার সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন।

দুর্ভাগ্যবশত, তারই সময়ে আরেক কিংবদন্তি গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস থাকায় কখনোই স্পেন জাতীয় দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক ছিলেন না। তবে তাতে কিছু আসে যায় না। ক্লাব ক্যারিয়ারে ভালদেস নি:সন্দেহে একজন সর্বকালের সেরা বার্সা গ্রেট।

  • রাইট ব্যাক: দানি আলভেস

দানি আলভেস শুধু বার্সেলোনার সেরা নন, তিনি ফুটবল ইতিহাসেই সেরা রাইট ব্যাকদের একজন। এই ব্রাজিলিয়ান ২০০৮ সালে সেভিয়া থেকে বার্সেলোনায় যোগদান করেন। এরপর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কাতালোনিয়াতেই থাকেন। এছাড়া ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দানি আলভেস পুনরায় তার প্রিয় ক্লাবে ফেরেন ৷ এবং তার বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন রয়েছে।

এখন পর্যন্ত ক্যাম্প ন্যুতে কাটানো সাড়ে আট বছরে, দানি আলভেস ২৫টি ট্রফি জিতেছেন। এই সময়টাতে বার্সার ডিফেন্স লাইনের ডানদিকটা বেশ ভালোভাবেই সামলেছিলেন তিনি, এছাড়া লিওনেল মেসির সাথে জুটি বেঁধে আক্রমনেও দলকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন।

  • সেন্টার ব্যাক: কার্লোস পুয়োল

ক্লাব কিংবদন্তি এবং সাবেক অধিনায়ক কার্লেস পুয়োল তার ক্যারিয়ার জুড়ে ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন। এর মাঝে একবারও অন্য কোথাও খেলার জন্য প্রলুব্ধ হননি। বড় অংকের টাকাও তাকে বার্সা-প্রেমের পথে বাধা হয়নি। কাতালান ক্লাবের সাথে ছয়টি লা লিগা শিরোপা এবং তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ প্রতিটি মেজর ট্রফি জিতেছেন পুয়োল। এছাড়া শতাব্দীর শুরুর দিকের প্রতাপশালী বার্সা দলের হৃদয় ছিলেন।

পুয়োল ৫৯৩ ম্যাচ খেলেছিলেন ক্লাবটির হয়ে। এছাড়া তিনি ক্লাবের সর্বকালের পঞ্চম সর্বাধিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। পুয়োল সত্যিই একজন বিশেষ খেলোয়াড় ছিলেন, যিনি বার্সেলোনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের পথে নিয়ে এসেছিলেন।

  • সেন্টার ব্যাক: জেরার্ড পিকে

বার্সেলোনার এই সেরা একাদশের ডিফেন্স লাইনে পুয়োলের সঙ্গী বাছাই করা সহজ নয় মোটেও। এক্ষেত্রে বেছে নেয়া হয়েছে পুয়োলের দীর্ঘ সময়ের সঙ্গী জেরার্ড পিকেকে। অভিজ্ঞ এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ২০০৮ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন, এর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেয়ার জন্য অবশ্য একবার ক্লাব ছেড়েছিলেন। যা হোক, এখনও পর্যন্ত কাতালান জায়ান্টদের হয়ে খেলছেন পিকে।

বার্সেলোনায় থাকাকালীন পিকে ৩০টি বড় ক্লাব ট্রফি জিতেছেন। আর এমনিতে বার্সা এবং স্পেনের রক্ষনভাগ সামলানোর দায়িত্বও পালন করেছেন ভালভাবেই। পিকে’র পাশাপাশি এক্ষেত্রে রোনাল্ড কোম্যানকেও বিবেচনা করা যেত। কিন্তু সেরা একাদশে জেরার্ড পিকে’কে বাদ দেয়াটা বড্ড বেমানান।

  • লেফট ব্যাক: সের্গি বারজুয়ান

সের্গি বারজুয়ান বার্সেলোনার যুব দলের খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তার মূল দলে অভিষেক হয়। এবং দ্রুতই কাতালানদের রক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন বারজুয়ান। নয় বছর বার্সেলোনাকে সেবা দেয়ার পর ২০০৫ সালের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে তিনি তার ক্যারিয়ার শেষ করেন।

স্প্যানিশ রাজধানীতে স্থানান্তরিত হলেও বার্সেলোনাতে তার অবদান অস্বীকার করা যায় না। লেফট-ব্যাক পজিশনে তার দুর্দান্ত ধারাবাহিক পারফরম্যান্স চিরকালের জন্য তাঁকে ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছে। আর এই অসাধারণ রক্ষণাত্মক ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জর্দি আলবাকে হটিয়ে বার্সেলোনার সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন বারজুয়ান।

  • ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: সার্জিও বুসকেটস

সার্জিও বুসকেটসকে ২০০৮ সালে যুব দল থেকে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে উন্নীত করা হয়েছিল। এবং তখন থেকেই তিনি ক্লাবের হয়ে খেলছেন। ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা ছাড়া আর কোন ক্লাবেই খেললেনি বুসকেটস। ২০২১-২২ মৌসুমের আগে, সাবেক অধিনায়ক লিওনেল মেসি চলে যাওয়ার পর বুসকেটসকে ক্লাবের অধিনায়ক করা হয়।

 

হঠাৎ কোন চমৎকার ড্রিবলিং কিংবা শট দেখিয়ে দর্শকদের মন জয় করার মত খেলোয়াড় হয়তো বুসকেটস হতে পারেননি কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং খেলা রীড করতে পারার ক্ষমতা নি:সন্দেহে ঈর্ষনীয়। এখন পর্যন্ত তিনি বার্সেলোনার হয়ে আটটি লা লিগা শিরোপা এবং তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ প্রতিটি মেজর ট্রফি জিতেছেন।

  • রাইট মিডফিল্ডার: জাভি হার্নান্দেজ

ক্লাবের একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েট হওয়ার পর, জাভি ১৯৯৮ সালে প্রথম পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন। এরপর থেকে একটানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত কাতালান ক্লাবের মধ্যমাঠ সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন জাভি। তিনি আটটি লিগা শিরোপা এবং চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ স্পেন এবং ইউরোপে একাধিকবার প্রতিটি বড় ট্রফি জিতেছেন।

বার্সার হয়ে ৭৬৭টি ম্যাচ খেলা জাভি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ক্লাবের বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় ছিলেন। পরে অবশ্য তার সাবেক সতীর্থ লিওনেল মেসি রেকর্ডটি ভেঙে দিয়েছিলেন। নিঁখুত পাসিং, গোলের সুযোগ সৃষ্টির দিক থেকে জাভি নিঃসন্দেহে সেরাদের একজন। এই কিংবদন্তি মিডফিল্ডার শুধু বার্সেলোনাই নয়, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেমেকারদের মধ্যে একজন।

  • লেফট মিডফিল্ডার: আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা

মেসি এবং জাভির পরেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা বার্সার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বাধিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার। সার্বজনীনভাবেই তাকে সর্বকালের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শারীরিকভাবে ছোট হওয়া সত্ত্বেও বল দখলের লড়াইয়ে তাকে পরাস্ত করা প্রায় অসম্ভব বটে।

মিডফিল্ডার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ২০১০ বিশ্বকাপের উইনিং গোলসহ বেশকিছু স্মরনীয় গোল করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ইনিয়েস্তা সর্বদা বড় ম্যাচগুলোর জন্য তার সেরাটা জমিয়ে রাখতেন। আর তাই মাইকেল লাউড্রুপ, দিয়েগো ম্যারাডোনা, ডেকো’র মত তারকাদের পেছনে ফেলে সর্বকালের সেরা এই একাদশে জায়গা পেয়েছেন। বর্তমানে বার্সা কিংবদন্তি জাপানের জে-ওয়ান লিগের ক্লাব ভিসেল কোবে খেলছেন।

  • রাইট উইঙ্গার: ইয়োহান ক্রুইফ

ইয়োহান ক্রুইফ ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় তার খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি শুধুমাত্র কাতালান ক্লাবের গর্ব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেননি, কিন্তু তাদের এই উপলব্ধিও করেছিলেন যে তারা তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের থেকে ভালো করতে পারে। সেই সময়কালে বার্সেলোনার হয়ে মাত্র একটি লা লিগা এবং একটি কোপা দেল রে জিতেছিলেন কিন্তু ক্রুইফের প্রভাব ট্রফির চেয়েও বেশি ছিল। তিনি ক্লাবটিকে জিততে শিখিয়েছিলেন।

ক্রুইফ ছিলেন এমন একজন ফুটবলার যিনি যে কোনো পজিশনে খেলেই মাঠের সেরা খেলোয়াড় হতে পারতেন। তাছাড়া ক্রুইফ কেবল একজন প্রতিভা ফুটবলার ছিলেন না, তিনি একজন কৌশলী পরিকল্পনাকারীও ছিলেন। যার প্রমান পরে তিনি বার্সার কোচ হিসেবে দিয়েছিলেন।

  • লেফট উইঙ্গার: রোনালদিনহো গাউচো

ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সুখী খেলোয়াড়? এমন প্রশ্নে সবার আগে যেই নামটি আসবে তিনি রোনালদিনহো গাউচো। এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কাতালুনিয়াতে খেলেছিলেন। বার্সেলোনায় থাকাকালীন তিনি দুটি লা লিগা এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছিলেন।

এবং সব কিছুর উপরে, রোনালদিনহো ব্লাউগ্রানার জার্সি গায়ে ২০০৫ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। নিজের সংক্ষিপ্ততম এক বার্সা অধ্যায়ে যা করেছেন গাউচো তাতে বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা একাদশে তাকে রাখতে বাধ্য হবে যে কেউ।

  • সেন্টার ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি

বার্সেলোনার জার্সি পরা ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নি:সন্দেহে আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। ক্লাবের একাডেমি লা মাসিয়া থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরে মেসি ২০০৪ সালে ক্লাবের হয়ে তার পেশাদার ফুটবলে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর থেকে একটানা ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্যাম্প ন্যুতে খেলেছিলেন তিনি। বর্তমানে মেসি ফ্রান্সের প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের হয়ে খেলছেন৷

তবে বার্সেলোনার হয়ে মেসি যা করেছেন তা অবিশ্বাস্য আর অতি মানবীয়। ক্যাম্প ন্যুতে প্রায় সতেরো বছরের বেশি সময় ধরে মেসি এমন একটি স্থায়ী শ্রেষ্ঠত্বের স্তরে পৌঁছেছেন যা আগে কেউ দেখেনি। এছাড়া বার্সেলোনার হয়ে লিওনেল মেসি ৩৪টি ট্রফি জিতেছেন, আর কোন খেলোয়াড় ক্লাবটির ইতিহাসে এত শিরোপা জিততে পারেনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...