হতভাগ্য ভারত একাদশ

ক্রিকেটের সাথে উপমহাদেশের সম্পর্কটাই অন্যরকম। বিশেষ করে, ভারতীয় দর্শকের ধ্যান-জ্ঞান হল ক্রিকেট। ১৯৩২ সালে প্রথম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের পর থেকে আজ অবধি ভারতের হয়ে ২৯৬ জন টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। এদের মধ্যে যেমন টেন্ডুলকার, গাভাস্কারের মতো মহীরুহ রয়েছেন, সেরকম বাকা জিলানির মতো অধিনায়কের কোটার খেলোয়াড়ও রয়েছেন।

অনেকে রয়েছেন যাঁরা খুব কম টেস্ট খেলেছেন, কিন্তু পরিস্থিতি অন্য রকম হলে ভারতের হয়ে আরো বড় ভূমিকা পালন করতে পারতেন। হয়তো, যথার্থ সুযোগ পেলে তারাও হয়ে উঠতে পারতেন মহাতারকা। আজ সেরকম কিছু খেলোয়াড়দের নিয়ে একাদশ তৈরি করছি। এই একাদশে যেমন গুটিয়েক টেস্ট খেলা খেলোয়াড় রয়েছেন, সেরকম একটাও টেস্ট না খেলাও অনেকে রয়েছেন। টিমে রয়েছেন ৫ জন ব্যাটসম্যান, একজন অলরাউন্ডার এবং চার বোলার।

  • মাধব আপ্তে (ওপেনার)

১৯৫২ ও ১৯৫৩ সালে ভারতের হয়ে সাত টেস্ট খেলেছেন আপ্তে, যার মধ্যে রয়েছে ক্যারিবিয়ান সফরে খেলা পাঁচ টেস্ট। ১৯৫২-৫৩ এর ক্যারিবিয়ান সফরে ৫১.১১ এর গড়ে রামাধীন, ভ্যালেনটাইন, কিং এবং গোমেজ সম্বলিত বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে একটা ১৬৩ এবং তিনটি পঞ্চাশ আছে তাঁর।

অথচ সেই সফরের পরেই তাঁর ক্রিকেট জীবনে তালা পরে যায়। শোনা যায় ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে তৎকালীন নির্বাচক প্রধান লালা অমরনাথের সঙ্গে আপ্টের পরিব্র্যারের সাথে ঝামেলার কারণেই তাঁর ক্রিকেট জীবন আর এগোয় নি।

  • এম ভি শ্রীধর (ওপেনার)

হায়দ্রাবাদের এই ডানহাতি ওপেনার ক্রিকেটার ছাড়াও ডাক্তার, জ্যাজ-ড্রামার এবং দক্ষ ক্রিকেট প্রশাসক ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ অব্দি ৯৭ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৪৮ গড়ে ৭০০০ রান করেন। তাঁর করা ৩৬৬ এখনো হায়দ্রাবাদের হয়ে সর্বোচ্চ রঞ্জি স্কোর। ১৯৯০ এর দশক জুড়েই ভারত একজন ভালো ওপেনারের খোঁজ চালিয়ে গেছে, অথচ ব্রাত্য রয়ে গেছেন শ্রীধর।

  • বিবি নিম্বলকার (তিন নম্বর)

কাথিয়াবারের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের হয়ে তাঁর করা ৪৪৩ আজও রঞ্জিতে সর্বোচ্চ। কাথিয়াবারের অধিনায়কের ‘দাখ্যিন্যে’ তাঁর সেদিন ব্র্যাডম্যানের ৪৫২ আর ভাঙা হয়নি। কিন্তু সেই গল্প অন্য কোনোদিনের জন্যে তোলা থাক।

কিন্তু এহেন নিম্বলকারও টেস্ট খেলতে পারেননি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪৭.৯৩ এর গড় সত্ত্বেও। কমনওয়েলথ দলের বিরুদ্ধে ১৯৪৯-৫০ এ একটি বেসরকারি টেস্টে ৪৮ করেন। তাও জাতীয় নির্বাচকরা ডাকেননি নিম্বলকারকে।

  • অমল মজুমদার ও এস বদ্রীনাথ ( চার ও পাঁচ নম্বর)

এই দুজনেরই দুর্ভাগ্য যে তাঁরা এমন সময় জন্মেছিলেন যখন ভারতীয় মিডল অর্ডারে ‘বিগ ফোর’ যুগ চলছে। বছর পাঁচেক আগে বা পরে জন্মালে হয়তো এঁদের ভাগ্যলিপি অন্য ভাবে লেখা হতো। ভারতীয় ক্রিকেটে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেই এরা বড় আক্ষেপ।

সুব্রানিয়াম বদ্রিনাথ
  • এজি রাম সিং (বোলিং অলরাউন্ডার)

মাদ্রাজের হয়ে ১৪ বছরে ২৭ টি রঞ্জি ম্যাচ খেলা এজি রাম সিং মাদ্রাজের হয়ে প্রথম রঞ্জি সেঞ্চুরি করেন। অমর সিংয়ের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেটের রেকর্ড পূর্ণ করেন। ব্যাটে ৩৫ ৩এবং বাঁ হাতি স্পিনে ১৮ গড় ছিল তাঁর।

১৯৩৫ সালে জ্যাক রাইডারের বেসরকারি অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯৩৭ এ লর্ড টেনিসনের দলের বিরুদ্ধে দুটি বেসরকারি টেস্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এজি। অনেকেই বলেন মাদ্রাজের হয়ে খেলার কারণে ভারতীয় দলে আস্তে পারেননি তিনি। অথচ মাঝে মাঝেই মানকারের সাথে তুলনা হয়েছে, জ্যাক রাইডার ওনার স্কোয়ার কাট দেখে উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।

  • পঙ্কজ ধর্মনি (উইকেটরক্ষক)

পাঞ্জাবের এই উইকেট রক্ষক টাইটান কাপে মাত্র একটি একদিনের ম্যাচ খেলেন। কিপিং এর সাথে ব্যাটিং ও ভালই করতেন, ৫০ এর ওপর গড় যার প্রমাণ দেয়। মোঙ্গিয়াকে সরিয়ে দলে আসতে পারেননি তিনি, কিন্তু মোঙ্গিয়ার অবসরের পর এবং ধোনির আবির্ভাবের আগে, দীঘে, প্রসাদ, দীপ সহ বহু মাঝারি মানের কিপার কে সুযোগ দেয়া হলেও, সুযোগ পাননি ধর্মনি।

  • শুটে ব্যানার্জি (পেসার)

শুটের মতো বোলারের অন্তত ৩০ টেস্ট না খেলাটা ভারতীয় ক্রিকেটের চরম দুর্ভাগ্য। ১৯৩৬ এর বিলেত সফরে বাকা জিলানি শুধুমাত্র অধিনায়ক ভিজিকে তৈল মর্দন করে শুটের আগে দলে এসে যান। আমরা বাঙালিরা ঋদ্ধি, উৎপল চ্যাটার্জি বা সম্বরণের দুর্ভাগ্য নিয়ে যতটা কথা বলি, শুটে কে নিয়ে তার অর্ধেক ও বলিনা।

  • পাণ্ডুরং সালগাওঁকার (পেসার)

স্পিন চতুর্বর্গ এবং কপিল ও কারসন ঘাবড়ি তাঁকে দলে আসতে দেননি। যথেষ্ট জোরে বল করতেন সালগাওঁকার। কিন্তু ঘাবড়ি তুলনামূলক ভাবে ভালো ব্যাটসম্যান হওয়াতে তিনিই সুযোগ পেতেন বেশি। এখন জন্মালে অন্তত বিদেশের টেস্ট গুলি খেলার সুযোগ হয়তো পেতেন সালগাওঁকার।

  • পি শিভালকার ও রাজিন্দর গোয়েল (স্পেশালিস্ট স্পিনার)

এই দুই বাঁ হাতি স্পিনার ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম হৃদয় বিদারক কাহিনী হয়ে রয়ে গেছেন। বেদি, প্রসন্ন, চন্দ্রশেখর ও বেঙ্কট না থাকলে, হয়তো কুম্বলে বা হরভজনের সাথে আমরা এক নিঃশ্বাসে এই দুজনের নাম করতাম। ওনাদের নিয়েও পরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইলো।

  • এম জে গোপালন (দ্বাদশ ব্যক্তি)

১৯৩৪ সালে রঞ্জি ট্রফিতে প্রথম বল করা গোপালনকে আজ হয়তো কেউ মনে রাখেননি। তিনি ছিলেন ক্রিকেট এবং হকির ডাবল ইন্টারন্যাশনাল। ১৯৩৬ সালে হকির ট্রায়ালে না গিয়ে তিনি ভিজির নেতৃত্বে ইংল্যান্ড সফরে যান।

সেখানে নানা কারণে একটিও টেস্টে সুযোগ পাননি, আর সেবছরই বার্লিনে ভারত হকিতে সোনা জিতে। উইকেট-কন্ডিশন যদি একজন বাড়তি পেসার দাবি করে তবে গোয়েল বা শিভালকার বাদ গিয়ে তিনি একাদশে আসবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link