ক্ষ্যাপা ছেড়ে গেলে মনের মানুষ আর তো পাবো না

 যখন বায়ার্ন মিউনিখে এসেছিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১০ বছর। বায়ার্ন মিউনিখ তখন তার কাছে শুধু একটা ফুটবল ক্লাব না —  ছিল ইচ্ছামত খেলার ঘর। ছিল মাঠে দৌড়ানোর একটা সুযোগ, ছিল স্বপ্ন হয়ে ওড়ার প্রথম রানওয়ে।

যখন বায়ার্ন মিউনিখে এসেছিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১০ বছর। বায়ার্ন মিউনিখ তখন তার কাছে শুধু একটা ফুটবল ক্লাব না —  ছিল ইচ্ছামত খেলার ঘর। ছিল মাঠে দৌড়ানোর একটা সুযোগ, ছিল স্বপ্ন হয়ে ওড়ার প্রথম রানওয়ে।

ওয়েইহেইম শহরের শান্ত গলি ছেড়ে যখন সে বায়ার্নের জুনিয়র ক্যাম্পে যোগ দেয়, তখন হয়তো কেউ ভাবেনি, এই ছেলেটাই একদিন হবে ক্লাবের মুখ। ২০০৮ সালে সিনিয়র দলে অভিষেক — কোচ ইউর্গেন ক্লিন্সম্যান ভরসা রেখেছিলেন, থমাস মুলার ফিরিয়ে দিয়েছিল মাঠ জোড়া হাসি আর পায়ের জাদু দিয়ে।

তারপর একের পর এক শিরোপা। ১২ টা বুন্দেসলিগা, দু’টো চ্যাম্পিয়নস লিগ, অসংখ্য স্মৃতি — আর সবচেয়ে বড় কথা, ২৫ টা বছরের অনবদ্য সার্ভিস। এই ক্লাবেই তিনি গড়েছে নিজের ক্যারিয়ার, ফুটবলের জীবন, জীবনের পরিচয়।

৭৪৩ ম্যাচ, ২৪৭ গোল, ২৭৩ অ্যাসিস্ট — সংখ্যাগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়, কিন্তু থমাস মুলারের নাম থেকে যায় দেয়ালে, ইতিহাসে, গ্যালারিতে। কিন্তু, সময় বদলায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে নিয়মিত দেখা যায়নি শুরুর একাদশে। মাঠের বাইরে থেকেও দলকে উজ্জীবিত করা মানুষটার চুক্তি শেষ হতে চলেছে এই মৌসুমে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই — ক্লাবের পক্ষ থেকে আসেনি কোনও প্রস্তাব, কোনও ফোন, এমনকি একটা কথাও না।

মুলার নিজেই ঘোষণা দিলেন — তিনি চলে যাচ্ছেন। তাঁর ভাষায়, ‘সিদ্ধান্তটা এসেছে ক্লাব থেকেই। সাম্প্রতিক সময়টা মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না।’

এই কথাগুলোর ভেতর কোনও অভিযোগ নেই, কিন্তু বিষণ্নতা আছে। যে ক্লাবটা ছিল ঘরবাড়ি, একদিন সেই ঘরটাই জানিয়ে দিল — এই ঘরে আর জায়গা নাই।

মুলার বিদায় নিচ্ছেন, তবুও পেশাদারিত্বে একটুও ঘাটতি রাখেননি। এই মৌসুমেই দলকে আরও একবার শিরোপা জেতাতে চান। ঘরের মাঠ অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় বসতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে খেলতে চান — শেষটা যেন স্মরণীয় হয়।

বায়ার্ন বলেছে, মুলারকে সম্মান জানাবে। জুলাইয়ে ক্লাব বিশ্বকাপেও খেলবেন তিনি। ক্লাব সভাপতি প্রশংসা করেছেন, সংবর্ধনার কথাও বলেছেন। তবে প্রশ্ন একটাই — ২৫ বছরের সম্পর্কটা কি সত্যিই এমন চুপচাপ ভাঙার কথা ছিল?

মুলার কোথায় যাবেন সেটা এখনও ঠিক হয়নি। গুজব রটেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। হয়তো সেখানেই শেষ কয়েকটা বছর, একটু নিজের মতো করে কাটাবেন।

আর আন্তর্জাতিক ফুটবল তো কবেই শেষ করে ফেলেছেন। ২০২৪ ইউরোর পরই বলেছিলেন, আর ফিরছেন না। ১৩১ ম্যাচ, ৪৫ গোল — একটা গল্পের শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।

থমাস মুলার চলে যাচ্ছেন। কিন্তু, বায়ার্নের ঘরের ভেতর, করিডোরের দেয়ালে, পুরনো পোস্টারে, আর হাজারো সমর্থকের হৃদয়ে—থমাস মুলার থেকে যাবেন। থমাস মুলার হয়তো বায়ার্ন ছাড়বেন, কিন্তু বায়ার্ন কখনোই মুলারকে ছাড়তে পারবে না।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link