সাত নম্বরটাই বাংলাদেশের বিপদ সংকেত

বিশ্বকাপের বাকি আর মাস চারেক। স্কোয়াড গুছিয়ে আনার কাজও খুব একটা বাকি নেই বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথিদের মধ্যে ১০-১১ টা নাম প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। বাকি ৪ থেকে ৫ টা জায়গার মধ্যেও টিম ম্যানেজমেন্টকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে বোধয় সাত নম্বর পজিশনটাই। এখনো টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত নয় লোয়ার মিডল অর্ডারের এই জায়গায় তারা কাকে খেলাবে।

আলোচনায় আছে বেশ কয়টি নামই। সদ্য সমাপ্ত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচেই এই পজিশনে খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজ খুব একটা খারাপ করেছেন তা বলা যাবে না হয়তো। প্রতি ম্যাচেই দলে ব্যাট হাতে অবদান রেখেছেন। কিন্তু মিরাজকে সাতে খেলালে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের লেজ দ্রুত বের হয়ে যাবার ভয়টাও থেকেই যায়।

এই দ্রুত লেজ বেরিয়ে পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট ভাবেই চোখে পড়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। শেষ ওয়ানডেতে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দশ ওভারে ঢুকলেও সাত বল আগেই অল আউট হয়েছে দল।টেলএন্ডারে একমাত্র তাসকিন ছাড়া ভরসা যোগাতে পারছেন না কেউ। তাই মিরাজের ব্যাটিং সামর্থ্যে আস্থা রাখলেও ব্যাটিংয়ের গভীরতা কমে যাবার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে হাতুরুসিংহেকে।

আরেক সম্ভাব্য নাম আয়ারল্যান্ড সিরিজে স্কোয়াডে থেকেও ম্যাচ না পাওয়া ইয়াসির আলি রাব্বি। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেলেও খুব বেশি কিছু করা সুযোগও পাননি তিনি। আর সাত নম্বরের মত পজিশনে কাউকে পরখ করতে দুই ম্যাচ যথেষ্টও নয়। সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লোয়ার মিডল অর্ডারে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন রাব্বি। বেশ সফলও ছিলেন এই পজিশনে। তাই এশিয়া কাপের আগে রাব্বিকে হয়তো আরেকটু বাজিয়ে দেখতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।

এই জায়গায় সবচেয়ে আলোচিত নামটি সম্ভবত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইংল্যান্ড সিরিজের পর স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া রিয়াদ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও বলার মত কিছু করতে পারেননি। যদিও কিছুদিন আগে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকবেন রিয়াদ৷ কিন্তু বোর্ড সভাপতি যত যাই বলুন না কেন, ফাইনাল কলটা যে চান্দিকা হাতুরুসিংহেই নেবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করতে পারলে হয়তো কিছুটা মন গলতো হাতুরুর। তবে আপাত-পক্ষে রিয়াদের বিশ্বকাপ ভাগ্যটা ঝুলে আছে অনেক গুলো যদি কিন্তুর ওপর।

এই পজিশনে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকার আরেক দাবীদার আফিফ হোসেন ধ্রুব। তিনিও দুই সিরিজ ধরে দলের বাইরে। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বেশ ছন্দে ছিলেন আফিফ। দল থেকে বাদ পড়ার পরপরই দলে ফেরার দাবীটা বেশ জোরেশোরেই করছেন আফিফ।

আবাহনীর জার্সিতে ১৫ ম্যাচ ৫৫ গড়ে ৫৫০ রান সেই সাক্ষ্যই দেয়। করেছেন একটি সেঞ্চুরিও। স্ট্রাইকরেটটাও সাত নম্বর পজিশনের সাথে বেশ মানানসই, ১১০.৬৬। তাই বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বিবেচনায় আফিফকে উপেক্ষা করাটা কঠিন করে তুলেছেন আফিফ নিজেই।

ডিপিএল দিয়েই এই পজিশনের আলোচনায় নতুন ভাবে উঠে এসেছেন নুরুল হাসান সোহান। শেখ জামালের অধিনায়ক হিসেবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সোহান। ১৬ ম্যাচে ৪৬.৪৫ গড়ে ৫১১ রান করে দলকে করেছেন রানার আপ।

দলের বিপর্যয়ের সময় সোহানের দারুণ পারফরম্যান্সও বিবেচনায় আনার মতই। সেই সাথে উইকেট কিপিং তো সোহানের জন্য বোনাস। তাই জাতীয় দলে সোহানকে আবারো ফিরতে দেখতে অবাক হবার কিছুই থাকবে না হয়তো।

এই তালিকায় সর্বশেষ নামটি সম্ভবত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। আবাহনীকে শিরোপা জেতানো অধিনায়ক ব্যাট বল হাতে বেশ ভালোই সার্ভিস দিয়েছেন দলকে। তাছাড়া মোসাদ্দেকের অভিজ্ঞতাও তাকে এগিয়ে রাখছে কিছুটা।

সাকিব আল হাসানও সাত নম্বর পজিশনে বিকল্পদের নাম নিতে গিয়ে বলেছেন মোসাদ্দেকের কথা। তাই অল্প হলেও মোসাদ্দেকেরও হয়তো সুযোগ আছে বিশ্বকাপের আগে নিজেকে প্রমান করবার সুযোগ পাবার।

বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ব্যাটিং অর্ডারের দুটো জায়গা এখনো খালি। ব্যাকআপ ওপেনার আর সাত নম্বর পজিশনে কে খেলবেন সেটিই বেশ ভাবাচ্ছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। ফিনিশিং রোলের একজন যোগ্য ব্যাটারের অভাব বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের। সাত নম্বরের জন্য যথার্থ কাউকে সেই জায়গায় পাকা করতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ যাত্রায় বিশাল এক মাইলেজ পাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link