যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। তাঁর আগ্রাসী বোলিংয়েই বিশ্বকাপের ফাইনালে শুরু থেকেই ভারতকে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচে দুই উইকেট শিকার করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকে চোটের কারণে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলে এই পেসার।
চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেও নিজের ছাঁয়া হয়ে ছিলেন তিনি। অবশেষে তৃতীয় রাউন্ডের পঞ্চম ম্যাচে এসে তিন উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার। তানজিমের অনবদ্য বোলিংয়েই টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়ে আবারো পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে আবাহনী।
তানজিম হাসানের বোলিং তান্ডবের পর ব্যাট হাতে বাকি কাজটা করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, নাঈম শেখ ও মুনিম শাহরিয়ার। তিন জনের দারুণ ব্যাটিংয়ে বৃষ্টি বিঘ্নিত ১১ ওভারের ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আবাহনী।
আবাহনী লিমিটেডের ম্যাচে বৃষ্টির বাগড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আবাহনী আগের দুই ম্যাচে বৃষ্টি হানা দেওয়ার পর আজও বেরসিক বৃষ্টি শুরু হয় ম্যাচের আগে থেকেই। তবে কোন ম্যাচেই আবাহনীর জয়ের পথে বৃষ্টি বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিটা ম্যাচেই শেষ হাসি হেসেছে আবাহনী।
তবে বড় ব্যবধানে জিতলেও আবাহনীর জয়টা সহজে আসেনি। পুরো ইনিংস জুড়েই বলের সাথে পাল্ল দিয়ে রান করতে হয়েছে তাদের। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামা আবাহনীকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও মুনিম শাহরিয়ার। উদ্বোধনী জুটিতে ২১ বলে ৩৮ রান যোগ করেন দুজন।
আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা মুনিম হাবিবুর রহমানের বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙে এই জুটি। ১২ বলে ২৫ রান করে ফিরে যান এই ওপেনার। তবে মুনিম ফিরে গেলেও জয় পেতে সমস্য হয়নি আবাহনীর। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৪ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন মুশফিকুর রহিম ও নাঈম শেখ।
২৬ বলে ৩৬ রান করে নাঈম শেখ ও ২১ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষে একটি উইকেট শিকার করেছেন হাবিবুর রহমান।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা ব্রাদার্স ইউনিয়ন শুরুতে উইকেট না হারালেও রানের গতি বাড়াতে পারেনি। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ বলে মিজানুর রহমান ও জুনায়েদ সিদ্দিকী যোগ করেন মাত্র ৩৭ রান। মিজানুর যখন রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন তখনই তাকে ফিরিয়ে দেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
১৪ বলে ২০ রান করা মিজানুরকে মিড অনে আফিফ হোসেনের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। এরপর আরাফাত সানির জোড়া আঘাতে মাইশুকুর রহমান ও রাতুল ফেরদৌস রানের খাতার খোলার আগেই ফিরে গেলে রানের গতি আরো থেমে যায় ব্রাদার্সের। ৫.৩ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৪০ রান।
৩ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারিয়ে ব্রাদার্স যখন ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করছে তখনই আবার জোড়া আঘাত করে দৃশ্যপটে আসেন তানজিম হাসান। মন্থর গতিতে ব্যাট করা জুনায়েদকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর হাবিবুর রহমানকেও ফিরিয়ে দেন এই পেসার। ২৩ বলে ২০ রান করেন জুনায়েদ ও হাবিবুরের ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে রান।
৫১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ব্রাদার্স তখনই পাল্টা আক্রমণে ব্রাদার্সকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন আলাউদ্দিন বাবু ও জাহিদুজ্জামান। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাত্র ২০ বলে ৫০ রান যোগ করেন দুজন। এই দুজনের ঝড়ো ইনিংসেই নির্ধারিত ১১ ওভারে আবাহনীকে ১০১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় ব্রাদার্স।
আলাউদ্দিন বাবু ১০ বলে ২৪ রান করে এবং জাহিদুজ্জামান ১০ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। আবাহনীর পক্ষে তানজিম হাসান তিন ওভারে ৯ রান দিয়ে তিনটি ও আরাফাত সানি দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ১০১/৫ (ওভার: ১১; জুনায়েদ- ২০, মিজানুর- ২০, মাইশুকুর- ০, রাতুল- ০, হাবিবুর- ৪, আলাউদ্দিন- ২৪*, জাহিদুজ্জামান- ২৫*) (তানজিম- ২-০-৯-৩, সানি- ২-০-৫-২)
আবাহনী লিমিটেড: ১০২/১ (ওভার: ৯.৫; মুনিম- ২৫, নাঈম- ৩৬*, মুশফিক- ৩৭*) (হাবিবুর- ২-০-১৯-১)
ফলাফল: আবাহনী লিমিটেড ৯ উইকেটে জয়ী।