জার্সিতে লেখা ‘ডব্লিউইএএইচ’ – উইয়াহ। এই নামটা কে না চেনে। আশি ও নব্বই দশকের এক নস্টালজিয়ার নাম উইয়াহ। দ্য গ্রেট জর্জ উইয়াহ। লাইবেরিয়ারর মনরোভিয়া থেকে উঠে আসা এক কাল্ট ফিগার।
ছিলেন ধুরন্ধর এক স্ট্রাইকার। একের পর এক গোল করেছেন ইউরোপিয়ান মঞ্চে। বড় বড় দলে খেলেছেন। এসি মিলানের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা তিনি। লাইবেরিয়ার হয়ে খেলেন ৭৫ টি ম্যাচ। চেলসি, পিএসজি কিংবা ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলেছেন।
১৯৯৫ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর, প্রথম আফ্রিকান হিসেবে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। পরের বছরই জেতেন ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার। অথচ, উইয়াহকে কখনও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাননি।
লাইবেরিয়া কখনওই বাছাই পর্বের বাঁধা পেরিয়ে খেলতে পারেনি মূল পর্বে। জর্জ উইয়াহ পরবর্তীতে লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান বনে গেলেও তাতে বিশ্বকাপ খেলতে না পারার আক্ষেপ কমেনি এক বিন্দুও।
নাহ! উইয়াহ খেলেছেন বিশ্বকাপে। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেই আছেন উইয়াহ। তিনি টিমোথি উইয়াহ। জর্জ উইয়াহ’র ছেলে। বাবার মত বিশ্বসেরা তিনি হতে পারবেন কি না – সেটা সময় সাপেক্ষ বিষয় – তবে তিনি বাবাকে এই বিশ্বকাপ দিয়ে আসলে ছাড়িয়েই গেছেন। বিশ্বকাপ খেলেছেন, নিজের উদ্বোধনী ম্যাচে গোলও করেছেন।
আসলে বাবাকে ছাড়িয়ে যাওয়া নয়, বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন টিমোথি। আর এই স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে অবশ্য দেশটা পাল্টে গেছে। টিমোথির শরীরে লাইবেরিয়া নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি। যুক্তরাষ্ট্রের এই দলটার সবচেয়ে এক্সাইটিং খেলোয়াড়দের একজন তিনি।
জর্জ উইয়াহ ক্যারিয়ার শেষ করেন প্রায় ২০০ পেশাদার গোল নিয়ে। এর সিংহভাগ তিনি করেন শীর্ষস্থানীয় ইউরোপিয়ান ক্লাবে। আফ্রিকা মহাদেশের অবিসংবাদিত সেরা ফুটবলার তিনি। বুট জোড়া তুলে রাখেন ২০০৩ সালে।
জর্জের শেষের সাথেই যেন শুরু টিমোথির। তবে, তাঁর ফুটবলের বিকাশ হয় ফ্লোরিডায়। বাবার হাত ধরেই। টিম উইয়াহ’র জন্মও আমেরিকাতেই। লাইবেরিয়ার সাথে তাঁর খুব বড় যোগাযোগ নেই।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ফুটবলে। পরের বাবার মত খেলেন ফরাসি ফুটবলে। উইয়াহ সিনিয়রের মতই খেলেন পিএসজিতে। এখন আছেন আরেক ফরাসি ক্লাব লিলেতে।
আফ্রিকার ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হয়েও কখনও বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি জর্জ। সে জন্যই টিমোথির কাতার আসা, বিশ্বকাপ খেলতে নামাটা যেন বাড়তি একটা অর্জন। আর সেই অর্জনের মুকুটে পালক হয়ে যোগ হয়েছে বিশ্বকাপের অভিষেকেই গোল করার কৃতিত্ব।
জর্জ এখন সুদূর লাইবেরিয়ায় রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে স্বস্তির হাসি হাসতেই পারেন, কিংবা হয়তো সুখের অশ্রুধারা বইতে পারে। এই টুর্নামেন্টে টিমোথি আর যাই করুন, কিংবা নাই করুন – যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে যেখানেই শেষ করুক না কেন, তাঁর অর্জন কখনও মিথ্যা হবে না। তিনি যে তাঁর বাবাকে, তাঁর পরিবারকে গর্বিত করতে পেরেছেন – সেটা লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
আজীবন হয়তো ছেলের এই গর্বটা বুকে নিয়েই বাঁচবেন জর্জ। বিশ্বকাপের আগে ফক্স স্পোর্টসকে টিমোথি বলেছিলেন, ‘আমি জানি, এই বিশ্বকাপটা আমার বাবার জন্য গোটা বিশ্বের মতই বিরাট ব্যাপার। আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করেছি। তিনি অবশ্যই গর্বিত হবেন।’
এটাই জীবন, এটাই ফুটবল। ১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারেও যে অর্জন ছুঁতে পারেননি বাবা, ছেলে সেটা ছুঁয়ে ফেললেন মাত্র একটা ম্যাচেই, একটা মুহূর্তেই। এখানেই তো বিশ্বকাপের আভিজাত্য।