টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হয় ২০০৭ সালে। এখন পর্যন্ত ৮ টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের এই মহাযজ্ঞের। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেক প্রতিটি আসরেই ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখেছে অসংখ্য চোখ জুড়ানো ইনিংস।
- মারলন স্যামুয়েলস (প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা)
২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিলো শ্রীলঙ্কা। দিলশান, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, মালিঙ্গা, অজান্তা মেন্ডিসদের নিয়ে গড়া সে সময়কার শ্রীলঙ্কা দল ছিল দুর্ধর্ষ। এর আগে ২০০৯ সালে ফাইনালে গিয়েও ট্রফির ছোঁয়া পায়নি দলটি। তাই স্বাভাবিকভাবেই নিজের দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই আসরে ট্রফি পেতে উদগ্রীব ছিল লঙ্কানরা। ফাইনালে গিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাভাবিকভাবেই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ছিল হট ফেভারিট।
সবাই ভেবেছিল প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা পেতে চলেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু মারলন স্যামুয়েলস নামক এক ক্যারিবিয়ান সেদিন একা হাতে লড়াই করে স্তব্ধ করে দিয়েছিল লঙ্কানদের। সেদিন উইন্ডিজের করা ১৩৭ রানের মধ্যে ৭৮ রানই করেছিলেন স্যামুয়েলস। চাপের মুহুর্তে স্যামুলসের এমন লড়াই সেদিন তাকে এনে দিয়েছিল ম্যাচ সেরার পুরষ্কার সেই সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি।
- বিরাট কোহলি (প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া)
মোহালিতে সেদিন ভারতের টার্গেট ছিলো ১৬১। ১৬১ রান তাড়া করতে নেমেই অজিদের বোলিং তোপে পড়ে স্বাগতিক ভারত। প্রেশার মোমেন্টে বিরাট কোহলির অনবদ্য অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসে সেদিন ক্রিকেটবিশ্ব প্রমান পেয়েছিল কেন বিরাট কোহলিকে চেজিং মাস্টার বলা হয়।
বিরাট কোহলির এই ইনিংসে ভর করেই বিশ্বকাপের সেমিতে পা রেখেছিলো স্বাগতিক ভারত। প্রেশার মোমেন্ট, কোয়ালিটিফুল বোলিং লাইনআপ, স্বাগতিক দর্শকদের চাপ সব জুজু একসাথে কিভাবে জয় করতে হয় এই একটা ইনিংসে বিরাট কোহলি সেটাই দেখিয়েছেন।
- কার্লোস ব্র্যাথওয়েট (প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড)
‘কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, রিমেম্বার দ্য নেইম’- ইয়ান বিশপের বিখ্যাত লাইন খানা নিশ্চয়ই মনে আছে। বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস গুলোর কথা বলতে গেলে অন্যান্য অনেক ইনিংসের তুলনায় ব্র্যাথওয়েটের এই ইনিংসটি হয়ত সংখ্যার বিচারে অনেক ছোট।
কিন্তু এই ইনিংসটিকে উপেক্ষা করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা ইনিংসের তালিকা অসম্ভব। বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন উইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান তখন ৪ বলে ৪ টি অনবদ্য ছক্কায় ব্র্যাথওয়েট উইন্ডিজকে এনে দিয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা।
- মাইক হাসি (প্রতিপক্ষ পাকিস্তান)
পাকিস্তান ছিল তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করে ১৯১ রান করে পাকিস্তান। ১৯২ রান তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে অজিদের দরকার ছিল ১৮ রান।
মাইক হাসি সেদিন ত্রানকর্তা হয়ে অজিদের নিয়ে গিয়েছিল ফাইনালে। সাঈদ আজমলের শেষ ওভারে ১৮ রান সহ ২৪ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম ‘ফাইনেস্ট’ ইনিংস হয়েই থাকবে।
- বিরাট কোহলি (প্রতিপক্ষ পাকিস্তান)
আবারও দৃশ্যপটে বিরাট কোহলি, আরো একটি মাস্টারক্লাস, আবারও চাপের মুখে অসাধারন রান তাড়া। এই ম্যাচের দৃশ্যপট একসময় ছিল যে ঘোর ভারত সমর্থকরাও হয়ত জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিল, অনেকেই ভেবেছিল এই ম্যাচ জয় প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু ‘চেজিং মাস্টার’ বিরাট কোহলি এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। জয়ের জন্য যখন ৮ বলে ২৮ রানের দরকার ছিল, তখন হারিস রউফকে মারা ২ টা ছক্কা এখনও ক্রিকেট প্রেমীদের চোখে লেগে আছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করে বিরাট যেভাবে এই ম্যাচের সমীকরন মিলিয়েছে তা যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবে।