রোনালদো ডি লিমার দুই পায়ের শট, রোমারিওর ভারসাম্য আর বক্সের মধ্যে ক্ষিপ্র চিতার রূপ, রিভালদোর ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং, জিদানের বল নিয়ে কারিকুরি, রক্ষণভাগে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের উপর ত্রাস ছড়ানো পাওলো মালদিনির ভয়ঙ্কর রূপ — নব্বই দশকের ফুটবল মানেই যেন শৈল্পিকতার পরিণত রূপায়ণ। খেলা ৭১ সেই দশকেরই সেরা ১০ ফুটবলারদের বেছে নিয়েছে এবার। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
- রোনালদো ডি লিমা (ব্রাজিল)
১৯৯৮ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। তবে সেবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার স্বরূপ গোল্ডেন বল জিতেছিলেন রোনালদো ডি লিমা। নব্বই দশকের ফুটবলারদের মধ্যে সেরার আসনে তাঁকে ঠাই দিতে এতটুকুই নিশ্চয় যথেষ্ট নয়?
কিন্তু বিশ্বকাপ ছাড়াও ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে তাঁর সে সময়ের রাজত্ব, লাতিন আমেরিকা থেকে উঠে এসে ইউরোপের ফুটবল দুনিয়ায় নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা এ ফুটবলার ঠিকই নব্বই দশকের অন্যতম ফুটবলারের স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি রাখেন। তর্কসাপেক্ষে যাকে সেরাদের সেরা বলেও রায় দিয়ে দেওয়া যায়।
- জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)
ফ্রান্সকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর নায়ক। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে বলতে একাই ব্রাজিলকে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সুবাদে সে বছরের সেরা ফুটবলারও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। একই সাথে জিতেছিলেন ব্যালন ডি অরও। খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে তাই নব্বই দশকের দ্বিতীয় সেরা ফুটবলার ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান।
- রবার্তো কার্লোস (ব্রাজিল)
শুধু নব্বই দশক নয়, সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকাতেও ব্রাজিলের এ ডিফেন্ডার অনায়াসেই চলে আসবেন। তবে রবার্তো কার্লোসের মূলত পরিচিতি অসাধারণ ফ্রি কিক টেকার হিসেবে। ফ্রি কিকে যার পায়ের ছোঁয়া লাগতেই বুলেটের গতিতে খুঁজে নিত গোলপোস্টের জাল।
ডিফেন্ডার হওয়া সত্ত্বেও এ ফুটবলার ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হয়ে নব্বই দশকে নিজের ফুটবল দ্যুতি ছড়িয়েছেন বছরের পর বছর।
- রোমারিও (ব্রাজিল)
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে সাম্বা জাদুর আরেক ধারকের নাম রোমারিও। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। সে সুবাদে সেবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও উঠেছিল তাঁর হাতে। ব্রাজিল ছাড়াও নব্বই দশকে ক্লাব ফুটবলে পিএসভি থেকে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার হয়ে তিনি মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তাই ফুটবলের এই সোনালি দশকে সেরা ফুটবলারদের কাতারে নিশ্চিতভাবেই তাঁর নাম লেখা হয়ে গিয়েছে।
- কাফু (ব্রাজিল)
নব্বই দশকের ফুটবল রাজত্বে রাজ করা এ তালিকায় পরের নামটিও একজন ব্রাজিলিয়ানের। তিনি কাফু। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল যে বার বিশ্বকাপ জিতল সেই দলের গর্বিত সদস্য ছিলেন তিনি। আর বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়েই ঐ বছরে তিনি লাতিন আমেরিকার সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া, এসি মিলানের হয়ে ক্লাব ফুটবলে সে সময়ে দাপট দেখিয়েছেন এ ফুটবলার।
- লুই ফিগো (পর্তুগাল)
বলা হয়ে থাকে, পর্তুগালের ফুটবল উত্থান যদি ইউসেবিওর হাত ধরে হয়, তবে সেই যাত্রায় শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছিলেন লুই ফিগো। দেশের হয়ে নব্বই দশকে কিছুই জেতেননি। কিন্তু এ সময়েই স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে দারুণ এক সময় পার করেন পর্তুগিজ এ ফুটবলার।
এ ছাড়া ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৯- টানা ৫ বার তিনি পর্তুগালের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। ২০০০ এর পরে একবার ব্যালন ডি অর জিতেছিলেন তিনি। তবে ফুটবল সাম্রাজ্যে তাঁর আধিপত্য শুরু হয় ঐ নব্বই দশকেই।
- রিভালদো (ব্রাজিল)
নব্বই দশকে ফুটবল প্রাঙ্গণে জাদু দেখানো আরেক ব্রাজিলিয়ান, রিভালদো। এই এক দশকেই তিনি সম্ভাব্য প্রায় সব অর্জনের সমৃদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বকাপ জিতেছেন। কোপা আমেরিকার সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় একবার ব্যালন ডি অরও জেতা হয়েছে এ ফুটবলারের। ব্যক্তি, দলগত অর্জনে পূর্ণ এমন ফুটবলারকে তাই নব্বই দশকের সেরা ফুটবলারদের তালিকায় না রাখার সাধ্যি কার!
- পাওলো মালদিনি (ইতালি)
খেলোয়াড়ি জীবনে একজন ডিফেন্ডার ছিলেন ইতালিয়ান এ ফুটবলার। তারপরও ১৯৯৪ সালে ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া এসি মিলানের এই কিংবদন্তী ফুটবলার ঐ এক দশকেই মিলানের হয়ে মোট ১২ টা শিরোপা জয়ের স্বাদ নিয়েছিলেন। তাই এই দশকের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকবেন পাওলো মালদিনি।
- থিয়েরি অঁরি (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম পঞ্চাশ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করা ফুটবলার হচ্ছেন তিনি। তবে সেই তুলনায় তাঁর কীর্তি অজানা কারণে আড়ালেই থেকে যায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই মোনাকোর হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এ ফুটবলার পরবর্তীতে আর্সেনাল আর বার্সেলোনার হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ের পথে ৩ টি গোলও করেছিলেন তিনি।
নব্বই দশকের অন্যতম সেরা এ স্ট্রাইকার ২০০০ সালের পরেও নজর কাড়েন যথারীতি। ২০০৬ বিশ্বকাপে তাঁর গোলেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল ব্রাজিলের। এরপর ক্লাব ফুটবলে ইউরোপ ছেড়ে তিনি পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেজর লিগ সকারও সাক্ষী হয় অঁরির শ্রেষ্ঠত্বের। সেখানে তিনি খেলেছিলেন নিউ ইয়র্ক রেড বুলসের হয়ে।
- অলিভার কান (জার্মানি)
নব্বই দশকের সেরা ফুটবলারদের এই তালিকায় একজন গোলরক্ষক রাখতেই হচ্ছে। তিনি জার্মানির অলিভার কান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে যিনি গোল্ডেন বল জেতার কীর্তি গড়েছিলেন। যদিও সেটি ২০০২ বিশ্বকাপের কথা। তবে জার্মান ও বায়ার্ন মিউনিখের এ গোলরক্ষকের উত্থান মূলত হয়েছিল এই নব্বই দশকেই।