চিকেন ড্যান্স, আয়ারল্যান্ড ও ট্রেন্ট জনস্টন

তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া এক ফাস্ট বোলার। নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে শুরু করেন ক্যারিয়ার। সতীর্থ ছিলেন মার্ক টেলর, মাইকেল স্ল্যাটার কিংবা ব্রেট লির মত কিংবদন্তি। নিউ সাউথ ওয়েলস যুব দলে তিনি খেলেছেন নাথান ব্র্যাকেন, মাইকেল ক্লার্কদের সাথে।

সমস্যা হল, তিনি সেরা ছিলেন না। নিউ সাউথ ওয়েলস দলে যেখানে গ্লেন ম্যাকগ্রা, নাথান ব্র্যাকেন, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, ব্রেট লি, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল কিংবা গেভিন রবার্টসনরা আছেন বোলিংয়ে সেখানে তাঁর সুযোগ কোথায়। তাঁর সামান্য ব্যাটিং জানাও সেখানে ধোপে টিকতো না। কারণ, সেখানে আছে মার্ক টেলর, মাইকেল স্ল্যাটার, মাইকেল বেভান, মার্ক ওয়াহ, স্টিভ ওয়াহ, শেন লি ও ফিল এমেরি। মানে গোটা অস্ট্রেলিয়া দলই যেন নিউ সাউথ ওয়েলসে এসে ভিড় জমিয়েছিল।

এর মধ্যেই ২৫ বছর বয়সী সেই তরুণের প্রথম শ্রেণির অভিষেক হয় নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়েই। অধিনায়ক ছিলেন স্বয়ং মার্ক টেলর। বোলিংয়ে তাঁর পার্টনার ছিলেন ব্রেট লি। যদিও, সেই মৌসুম শেষেই তাঁর সাথে চুক্তি বাতিল করে এনএসডব্লিউ।

তিনি বুঝে ফেলেন, অস্ট্রেলিয়া তাঁর জায়গা নয়। পাড়ি জমান আয়ারল্যান্ডে। সেটা ২০০৪ সাল থেকে তিনি পুরোদস্তর আইরিশ। তিন বছর বাদে যখন বিশ্বকাপ খেলতে নামে, তখন এই ভদ্রলোকই ছিলেন অধিনায়ক। তিনি ডেভিড ট্রেন্ট জনস্টন।

আর একটুও বাড়িয়ে না বলে লিখে দেওয়া যায় যে – আইরিশ ক্রিকেটের অগ্রদূত তিনি। তিনি আয়ারল্যান্ডের সেই ব্যক্তিত্ব যিনি দলের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকে বার্তা দিয়েছিলেন – ‘আমরা আসছি, আয়ারল্যান্ড আসছে।’

১০০ টির মত আন্তর্জাতিক ম্যাচে শ’খানেক উইকেট আর লোয়ার মিডল অর্ডারে হাজার খানেক রান – এই দিয়ে আসলে জনস্টনকে বোঝা যাবে না। যেমনটা পরিসংখ্যান দিয়ে আমাদের ক্রিকেটে আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বা আমিনুল ইসলাম বুলবুলদের বোঝা যায় না।

ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের বয়স নেহায়েৎ কম নয়। তবে, তাঁদের ‍উত্থান পর্বটা শুরু হয় ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপ দিয়ে। প্রথমটায় অধিনায়ক ছিলেন এই জনস্টন। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়সূচক রানটা আসে তাঁরই ব্যাট থেকে। লং অনের ওপর দিয়ে আজহার মেহমুদকে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি নিশ্চিত করেন আইরিশদের বিজয়। সেই বিশ্বকাপে আইরিশদের মুরগির অনুকরণে করা বিশেষ এক উদযাপন বেশ জনপ্রিয় হয়। সেটার জনকও ছিলেন এই ট্রেন্ট জনস্টন।

২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড শিকার করে ইংল্যান্ডকে। এবার জয়সূচক রানটা নিতে না পারলেও নন স্ট্রাইকিং এন্ডে ছিলেন জনস্টন। না বলে দিলেও চলে যে – আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের শুরুর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। এখন যে আয়ারল্যান্ড দিব্যি টেস্ট খেলছে তাতে এই জনস্টনের অবদানও কম না।

২০১৩ সালে তিনি অবসর নেন। এরপর তিনি যোগ দেন কোচিংয়ে। আয়ারল্যান্ড নারী দলের কোচের দায়িত্ব করেছেন। ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ফাস্ট বোলিং কোচও ছিলেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনি সিক্সার্সের সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন। ২০১৯ সালে তিনি হংকং জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান।

সাদামাটা মনে হলেও তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পরিসংখ্যানগত অর্জনও কম নয়। ৩৫ বছর বয়সে এসে প্রথম ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট পান। হয়তো আয়ারল্যান্ড না হয়ে অন্য কোথাও ক্যারিয়ার গড়তে পারলে আরো বড় কিছু হতে পারতেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর বিদায়টা ছিল জমকমালো। দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ফাইনালে তিনি ৩২ বলে ৬২ রান করে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরি পান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড বোর্ডে সাত উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান জমা করে। জবাবে আফগানিস্তান ১৫৭ রানে অলআউট হয়। ট্রেন্ড জনস্টন তিন উইকেট নেন ৩৪ রান দিয়ে। ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে উঠে তাঁর। মাথা উঁচু করে বিদায় বলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চকে।

শেষটায় একটা তথ্য না দিলেই নয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর পাঁচটা মেইডেন। তাঁর চেয়ে বেশি মেইডেন নিতে পেরেছেন কেবল দু’জন। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ (সাতটি) ও শ্রীলঙ্কার নুয়ান কুলাসেকারা (ছয়টি)।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link