পাঁচ কিলো ভরের স্বর্ণে মোড়ানো ট্রফি। একটু ছুঁয়ে দেখার কত যে স্বাদ। তামাম দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের যেন নয়নের মণি। একবার যদি দেখা যায়, একবার যদি ছোঁয়া যায়! তবে হায় সবার কি আর সে রাজকপাল জোটে? অন্তত বাংলাদেশের ফুটবলারদের তো জোটে না।
বিশ্বকাপের সে সোনালী ট্রফিটি মাত্র ৩৬ ঘণ্টার জন্যে। পূর্ণ দু’টো দিনও থাকা হল না। এইতো সবার সামনেই ছিল ট্রফিটা। তবুও কত যোজন দূরত্ব। এই দূরত্বের যেন অন্ত নেই। সীমাহীন এক গন্তব্য। ঠিক কবে আমাদেরও সুযোগ হবে এই ট্রফিটা ধরে দেখবার? এর উত্তরটা কারওই হয়ত জানা নেই। এই যে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তবুও তিনিও ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। ফিফার তো কড়া নির্দেশ আবার ট্রফিটার গাম্ভীর্যভাব রক্ষা করা। যে কেউ চাইলে স্পর্শ করতে পারবে না। তাকে অন্ততপক্ষে হতে হবে দেশের রাষ্ট্রনায়ক কিংবা ক্যারিয়ারে জিততে হবে ট্রফি। সেটা তো আর বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে মানুষের সখ কিংবা দেখার ইচ্ছেটা তো আর কমে যায় না। একটু দূর থেকেই হোক, একটা কাচের আবরণে আবৃত করাই হোক।
তাইতো ঢাকার পাঁচ তারকা এক হোটেলে সাধারণ মানুষদের ভীর। পাঁচ কিলোর সেই স্বর্ণালী ট্রফিটা এক নজর দেখে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা তো আর ঠিক হবে না। তাই যারাই সময় পেয়েছেন এক নজর দেখে নিয়েছেন। আবার হয়ত বছর চারেক বাদে এই ট্রফি আসবে বাংলাদেশে। সে অবধি ঘটে যেতে পারে নানান কিছু।
ট্রফি ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে। এরপর পাকিস্তান থেকে একটি চাটার্ড প্লেনে করে বাংলাদেশে আসে বিশ্বকাপের ট্রফি। সুদর্শন এই ট্রফিটি রাষ্ট্রপতি ভবন হয়ে উন্মুক্ত প্রদর্শন করা হয়। সেখানে আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় আড়াই হাজার দর্শনার্থী ট্রফিটি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়।
তাছাড়া আর্মি স্টেডিয়ামে কোকাকোলা আয়োজিত কনসার্টে প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের সামনে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ায় তা আর হয়নি। অগ্যতা ট্রফিটি চলে যাবে তার পরবর্তী গন্তব্য। তবে এবারের ট্রফি যেন এক বিশাল আক্ষেপের বিরান ভূমিতে রেখে গেল বাংলাদেশের সকল দর্শকদের। প্রায় এক দশক আগে আমাদের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন বাংলাদেশ ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ খেলার সকল প্রস্তুতিই নাকি নেবে।
হায়! সেটা আর হল কই? আমরা এখনও সাফের একটি ম্যাচ জয়কে বেশ আনন্দের সাথে উদযাপন করি। শিরোপা জয় তো বেশ দূরের কথা। ফাইনালে উঠেও হারত হয়েছে আমদের। কিন্তু আমাদের তো কথা ছিল বিশ্বের বড় বড় দলের সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার। সে আমরাই নাকি দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হতেও খাবি খাচ্ছি।
আর র্যাংকিং, সে তো ক্রমাগত অতলে তলিয়ে যাওয়ার একটা প্রমাণ মাত্র। একেবারে নিচের দিকে অবস্থান। সেখান থেকে উঠে আসার কোন প্রচেষ্টাই যেন নেই। এশিয়ার দেশগুলোর সাথেই হালি হালি গোল খেতে হচ্ছে নিয়ম করে। গোল করার কোন চিত্রই যেন রঙিন নয়। এই বিশ্বকাপ শিরোপা আরও একবার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এলো, আমরা বিশ্বকাপ ঠিক খেলব কবে?