একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল দল চেলসি। আব্রামোভিচ আমলে তারা শুধু ইংল্যান্ড নয় বরং গোটা ইউরোপের পরাশক্তিতে পরিণত হয়। এই সময় তারা পাঁচটি লিগ শিরোপা, দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এবং পাঁচটি এফএ কাপ সহ আর অনেক শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলে।
২০০৩ সালে আব্রামোভিচ চেলসিকে কেনার আগেও ক্লাব হিসেবে চেলসির ছিল সমৃদ্ধ ইতিহাস। ১৯৫৫ সালে চেলসি তাদের প্রথম লীগ শিরোপা জিততে সক্ষম হয়, ১৯৭১ এবং ১৯৯৮ সালে তারা উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ ঘরে তুলে।
১১৭ বছরের পুরনো এই ক্লাবটিতে খেলেছেন বাঘা বাঘা সব খেলোয়াড়। রন হ্যারিস, ববি ট্যাম্বলিং, কেরি ডিক্সন এবং পিটার বনেত্তির মত কিংবদন্তিরা অতীতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ মাতিয়েছেন। জিমি ফ্লয়েড হ্যাসেলবেঙ্ক, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, দিদিয়ে দ্রগবা, জন টেরি এবং ইডেন হ্যাজার্ডের মত তারকারা ২১ শতাব্দীতে তাদের ফুটবলীয় গুনাবলি দিয়ে মুগ্ধ করেছে চেলসি সমর্থকদের।
এত এত খেলোয়াড়দের মাঝ থেকে মাত্র ১১ জনকে বেছে নিয়ে একটা একাদশ গড়া মোটেই সহজ কোন কাজ নয়। এই একাদশ নিয়ে হতে পারে অনেক তর্ক, তা হোক না তবু আজ ৪-৩-৩ ফরমেসনে চেলসির সর্বকালের সেরা একাদশ গড়ার চেষ্টা করা হল।
- গোলরক্ষক: পিটার চেক
চেলসির হয়ে ৪৯৪ ম্যাচ খেলা পিটার চেককে এই দলের গোলপোস্ট সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হল। পিটার বনেত্তিকে দল থেকে বাদ দেওয়া মোটেও সহজ কোন সিধান্ত ছিল না। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৯ অবধি বনেত্তি আগলে ছিলেন চেলসির গোলপোস্ট কিন্তু সাফল্যের বিবেচনায় চেক এগিয়ে যাবেন তার থেকে।
সাবেক চেক প্রজাতন্ত্রের এই ফুটবলার চেলসির সাফল্যে রেখেছেন প্রত্যক্ষ ভুমিকা। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের লম্বা ক্যারিয়ারে জিতেছেন চারটি লিগ শিরোপা, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটি এফএ কাপ তিনটি লিগ কাপ সহ আরও নানান শিরোপা। তিনবার জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন গ্লাভ।
- রাইট ব্যাক: সিজার আজপেলিকুয়েটা
অনেকেই প্রশ্ন তুলবে ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ কেন বাদ পরল? সে ব্যাপারে কথা উঠতেই পারে কিন্তু চেলসির হয়ে প্রায় ৫০০ ম্যাচ খেলা আজপেলিকুয়েটা ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে চেলসির হয়ে যেভাবে পারফর্ম করেছেন তাতে তাকে অটোমেটিক চয়েস হিসেবে দলে নিতেই হবে।
প্রায় এক দশক ধরে চেলসিতে খেলে জেতবার মত যত রকমের দলীয় শিরোপা আছে তার সবই জিতেছেন রক্ষণভাগের স্প্যানিশ এই ফুটবলার।
- সেন্টার ব্যাক: জন টেরি
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের অন্যতম সেরা রক্ষন ভাগের খেলোয়াড় জন টেরি। চেলসির নিজস্ব একাডেমি থেকে উঠে আসা ইংলিশ এই ফুটবলার ক্লাবটির হয়ে ৭০০’র বেশি ম্যাচ খেলেছেন।
কড়া ট্যাকল করার জন্য পরিচিত এই ফুটবলার চেলসির জন্য নিজের পুরোটা ঢেলে দিতেন মাঠে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেস্তে দিতে গিয়ে হয়েছেন ইনজুরির শিকার কিন্তু তিনি তার পরোয়া করতেন না। অধিনায়ক হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে।
কিংবদন্তি এই ফুটবলার ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসেও রক্ষন কিভাবে সামলাতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন। এই সময় তার পায়ে আর আগের মত গতি ছিল না কিন্ত প্রখর ফুটবলীয় মস্তিষ্কের অধিকারি টেরি সঠিক পজিসনিং দ্বারাই আটকে দিতেন প্রতিপক্ষের আক্রমণকে।
- সেন্টার ব্যাক: রন হ্যারিস
চেলসির হয়ে সবোচ্চ ৭৯৫টি ম্যাচ খেলা রন হ্যারিসকে রক্ষণের মাঝে টেরির সাথে রাখা হয়েছে। ‘চপার’ নামে পরিচিত এই রক্ষন ভাগের খেলোয়াড় ৬০ এবং ৭০ এর দশকে দলকে শক্ত হাতে পরিচালনা করেছেন।
চেলসির ১৯৭১ সালে জেতা কাপ উইনার্স কাপ জয়ের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছেন কড়া ট্যাকল করার জন্য সুপরিচিত এই ফুটবলার। দলের প্রয়োজনে খেলেছেন একাধিক পজিশনে।
- লেফট ব্যাক: অ্যাশলি কোল
নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনাল থেকে ২০০৬ সালে চেলসিতে যোগদান করা অ্যাশলি কোল কে টেক্কা দেওার মত রক্ষণের খেলোয়াড় চেলসিতে আর নেই বললেই চলে।
প্রায় ৮ বছর লন্ডনের ক্লাবটিতে কাটিয়ে খেলেছেন ৩৩০টি ম্যাচ। দুইবার চেলসি খেলোয়াড়দের ভোটে বছরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া ইংলিশ এই ফুটবলার নিজের পজিশনে তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন।
- সেন্টার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: ক্লদ ম্যাকেলেলে
যার নামে ফুটবলে একটা পজিশনের নামকরণ করা হয়েছে তাকে কিভাবে আপনি এই দল থেকে বাদ দেবেন!
চেলসির রক্ষনের সামনে দেয়াল হয়ে দাড়িয়ে থাকা এই রক্ষণশীল মাঝ মাঠের খেলোয়াড় লন্ডনের ক্লাবটির সাফল্যের অন্যতম কারণ। ফ্রেঞ্চ এই ফুটবলারকে তার মাঝ মাঠের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মানা হয়।
চেলসি আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা উপরে উঠে নিশিন্তে প্রতিপক্ষের গোলমুখে হামলা চালাত কারণ তারা জানত রক্ষনের সামনে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দারিয়ে আছেন ম্যাকেলেলে।
- সেন্টার মিডফিল্ডার: মাইকেল এসিয়েন
এন গোলো কান্তে যখন ক্যারিয়ার শেষ করবেন তখন নি:সন্দেহে মাইকেল এসিয়েনের জায়গায় নিজের দাবি জানাতেই পারেন কিন্তু এখন তাকে চেলসির হয়ে ২৫০ ম্যাচ খেলা এসিয়েনকে পথ ছেড়ে দিতে হবে।
ক্যারিয়ারের শিখরে খেলতেন বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে, প্রতিপক্ষের রক্ষণকে গুরিয়ে দিয়ে করতেন দূরপাল্লার সব গোল। আর সাঝবেলায় এসে দলের রক্ষণকে সুরক্ষিত করতেই খেলতেন মাঝমাঠে।
- সেন্টার মিডফিল্ডার: ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড
ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, তার পরিসংখ্যান দেখলে প্রশ্ন উঠতেই পারে তিনি কি আক্রমনভাগের খেলোয়াড় ছিলেন নাকি মাঝমাঠের? চেলসির হয়ে ৬৪৮ ম্যাচে করেছেন ২১১ গোল, জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা।
তিনি এমনি এক ব্যক্তিত্ব যাকে বাদ দিলে চেলসির সর্বকালের সেরা একাদশ ফিকে হয়ে যায়, মিথ্যা হয়ে যায়। চেলসির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে টেরি এবং ল্যাম্পার্ড দুজনেই দুজনার প্রতিদ্বন্দ্বী।
- রাইট উইং: জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা। ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চেলসির হয়ে ৩০০ এর বেশী মাতছ খেলা জোলাকে এই দলের আক্রমণভাগের ডান দিকে রাখতে হয়েছে যদিও তিনি মূলত মাঝমাঠের আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় ছিলেন।
সমর্থকদের মাঝে বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয় এই ইতালিয়ান ফুটবলার তার দক্ষতা, সৃজনশীলতা দ্বারা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে সৃষ্টি করেছেন জাদুকরি সব মুহূর্ত।
- লেফট উইং: ইডেন হ্যাজার্ড
ইডেন হ্যাজার্ডের গতি, ড্রিবলিং,গোল সবকিছুই মুগ্ধ করতো চেলসি সমর্থকদের। চেলসির হয়ে ৩৫২ ম্যাচে ১১০ গোল করা বেলজিয়ান এই ফুটবলার নিজের নামের মতই প্রতিপক্ষের রক্ষণকে বিপদে ফেলতেন। হ্যাজার্ডের ড্রিবলিং বোকা বানাত প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দেরকে।
- সেন্টার ফরওয়ার্ড: দিদিয়ের দ্রগবা
প্রতিপক্ষের রক্ষণের খেলোয়াড়দের জন্য ত্রাশ ছিলেন দিদিয়ে দ্রগবা। দলের প্রয়োজনে সব সময় গোল করেছেন, দলকে কিভাবে অনুপ্রানিত করতে হয় তা জানতেন। চেলসির হয়ে ২৫৪ ম্যাচে ১০৪ গোল করা দ্রগবার প্রভাব শুধু তার গোল সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে।
তাকে আটকাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাঁকা জায়গা তৈরি হতো আর বাকিরা গোল করার সুযোগ পেতেন। চেলসির আক্রমণভাগকে নেতৃত্ব দিতে এই আইভরিয়ানের চেয়ে ভাল আর কাওকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।