ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা বিশ্বকাপ, চার বছর পর পর আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই প্রমাণের সেরা মঞ্চ। তাই ক্লাবগুলোও তীক্ষ্ণ নজর রাখে এদিকে। বৈশ্বিক এই আসরে ভাল করলেই দলবদলের বাজারে শুরু হয় কাড়াকাড়ি; সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বাজার দরও।
অথচ ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ভাগ্যে। তাঁর বর্তমান ক্লাব অ্যাস্টন ভিলাই আগ্রহী নয় এই গোলরক্ষককে স্কোয়াডে রাখতে। উপযুক্ত মূল্য পেলে এই আর্জেন্টাইনকে বিক্রি করে দিবে ইংলিশ ক্লাবটি। বিশেষ করে দলটির নতুন কোচ উনাই এমেরির মোটেই পছন্দ হয়নি এমি মার্টিনেজকে। তাই এই ফুটবলারকে ক্লাব ছাড়া করতে এক রকমের মরিয়া হয়ে আছেন তিনি।
আর্সেনাল থেকে অ্যাস্টন ভিলাতে যোগ দেয়ার পর থেকে পারফরম্যান্সে কমতি ছিল না এমিলিয়ানো মার্টিনেজের। জাতীয় দলের হয়ে তিনি আরও বেশি উজ্জ্বল। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের পাশাপাশি জিতেছেন টুর্নামেন্টের গোল্ডেন গ্লাভসও। আর এবার তো দূরতম স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়েছেন এই তারকা; পেয়েছেন বিশ্ব জয়ের স্বাদ। সেই সাথে বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
পারফরম্যান্সের বিচারে এখন সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বিশ্বজুড়ে যখন প্রশংসিত হচ্ছে তাঁর সামর্থ্য, তখন অ্যাস্টন ভিলা হয়তো এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে ক্লাবে ধরে রাখার চেষ্টা করবে এমনটাই ভেবেছিলেন ফুটবলবোদ্ধারা। কিন্তু ঘটেছে ঠিক উল্টো; তাঁকে বিক্রি করার দিকেই নজর ভিলার ক্লাবটির। এর কারণ কি তাহলে, এমন ভিন্নধর্মী ঘটনার পেছনে রহস্যটাই বা কি?
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, দুর্দান্ত পারফরম্যান্স নয় বরং নতুন কোচ উনাই এমেরির চোখে পড়েছে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের অশোভন আচরণ এবং উশৃঙ্খল মনোভাব। ৩০ বছর বয়সী এই ফুটবলারের মেজাজ বড্ড অপ্রীতিকর মনে হয়েছে স্প্যানিশ মাস্টারমাইন্ডের কাছে। আর এজন্যই নিজের অধীনে ছয় ফুটি এই গোলরক্ষককে রাখতে চান না তিনি।
বিতর্কে জড়ানো অবশ্য এমিলিয়ানো মার্টিনেজের স্বভাবে মিশে আছে। মাঠে ইঙ্গিতপূর্ণ উদযাপন করে অনেকবারই খবরের শিরোনাম দখল করেছিলেন তিনি। এছাড়া প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বাজে অঙ্গভঙ্গি করার নজিরও আছে তাঁর। সর্বশেষ কিলিয়ান এমবাপ্পেকে উপহাস করে বিশেষভাবে লাইমলাইটে এসেছেন তিনি।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজের হাত ধরে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সূচনা ঘটে আর্জেন্টাইন ড্রেসিংরুমে। এমবাপ্পেকে নিয়ে মজা করার জন্য সতীর্থদের উচ্ছ্বাস থামিয়ে ফরাসি স্ট্রাইকারের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করার প্রস্তাব দেন তিনি; বাকিরাও তাঁর কথায় সম্মতি জানিয়ে যোগ দেয় অ্যাস্টন ভিলার এই ফুটবলারের সাথে।
আবার খোলা বাসে প্যারেড করার সময় পুতুল হাতে করে নিয়ে আসেন ত্রিশ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। ভাল করে লক্ষ্য করতেই দেখা যায় ওই পুতুলের মুখের জায়গাতে রয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পের ছবি। স্বাভাবিকভাবেই এমন কিছু মেনে নিতে পারেননি অনেকে।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজের এমন আচরণে অসন্তুষ্ট হওয়া মানুষের মাঝেই একজন অ্যাস্টন ভিলার কোচ উনাই এমেরি। তাই তো তাঁকে শিষ্য হিসেবে চান না এমেরি। ইতোমধ্যে বিকল্প গোলরক্ষক খুঁজতে শুরু করেছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর সাথে যোগাযোগও করেছে তারা। বোনোকে বিক্রি করতে আপত্তি নেই সেভিয়ারও, আপাতত এই তারকার ৩০ মিলিয়ন ইউরো দাবি করেছে ক্লাবটি।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজের মতই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছিলেন ইয়াসিন বোনো। তাঁর গ্লাভস জোড়া হয়ে উঠেছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। কাতারে চমক দেখানো মরক্কোর সেমিফাইনালে খেলার পেছনে বড় অবদান রেখেছিলেন তিনি। সেমিফাইনাল রাউন্ডের আগে মাত্র একটি গোল হজম করেছিলেন এই গোলরক্ষক, সেটিও ছিল সতীর্থের আত্মঘাতী গোল।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী বলাই যায়, অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সম্পর্কের সমাপ্তি এখন সময়ের ব্যাপার। আলবিসেলেস্তাদের নয়নের মনি হয়ে ওঠা এমি মার্টিনেজের ভবিষ্যৎ সঙ্গী হবে কোন ক্লাব তা নিয়ে এখন নতুন আলোচনা শুরু করাই যায়।