আমেরিকা, ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়!

কোরি আন্ডারসনকে মনে আছে? যিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন? তাঁকে যদি হুট্ করে একদিন আমেরিকার জার্সিতে ক্রিকেট মাঠে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হয়ত নামতে দেখেন, একদম ঘাবড়াবেন না।

কিংবা বছর খানেক আগেই বিশ্বকাপ জয়ীর মেডেল গলায় পড়া লিয়াম প্লাঙ্কেট ও একই কাজ করেন, তাতেও চোখ কপালে তোলার কিছু নেই। এমনকি বছর দেড়েক আগেও যাঁকে পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় টেস্ট ওপেনার মনে করা হচ্ছিলো সেই সামি আসলামও আমেরিকার জার্সি গায়ে চাপালেন বলে। অবাক হচ্ছেন?

অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই, আমেরিকার ক্রিকেট কর্তারা উঠে পড়ে লেগেছেন ক্রিকেট খেলিয়ে দল হিসাবে আমেরিকাকে বড়ো মঞ্চে নিয়মিত দেখানোর জন্য, আর সে লক্ষ্যেই আমেরিকার মেজর ক্রিকেট লিগের অন্তত তিন বছরের জন্য বিদেশের মোটামুটি ভালো মানের বেশ কিছু ক্রিকেটার, যাঁদের আমেরিকার পাসপোর্ট আছে তাঁদের চুক্তিবদ্ধ করার পালা চলছে।

আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থা এও লক্ষ্য স্থির করেছে ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিসির ফুল মেম্বার স্ট্যাটাস পাওয়া। এইসব লক্ষ্যকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্যই তাঁদের চিন্তাধারা বর্তমানে আমেরিকার মধ্যে থেকেই গ্রাসরুট লেভেলের খেলোয়াড় তুলে আনা এবং তার সাথে আমেরিকান পাসপোর্টযুক্ত বিদেশি খেলোয়াড়দের আমেরিকার জার্সিতে খেলিয়ে দেওয়া।

আইসিসির নতুন সভাপতি গ্রেগ বার্কলেকেও হয়তো আগামী দিনে পাশে পেতে পারে আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থা, আমেরিকায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছেন আইসিসির কর্তা ব্যাক্তিরা, বার্কলে সেটাকে আরো উস্কে দিয়েছেন, এবং ভবিষ্যতের বেশ কিছু টুর্নামেন্টের দায়িত্ব যে আমেরিকার ওপর বর্তাতে পারে তা তাঁর কথাতেই উঠে এসেছে।

আমেরিকার মেজর ক্রিকেট লিগে শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্স যে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করবে একথাও প্রকাশ্যে এসেছে, আর এইসব দেখেই নতুন নতুন দিশার খোঁজ পাচ্ছে আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থা।

আমেরিকার ক্রিকেট এমনিতে বেশ পুরোনো, ১৮৪৪ সালে কানাডার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু, যদিও তারপর থেকে খেলার সুযোগ হতো কদাচিৎ, কানাডা ও আমেরিকার ক্রিকেট লড়াই যদিও চলতে থাকতো, যার পোশাকি নাম অটি কাপ। আইসিসির সদস্যপদ পাওয়ার পরে আইসিসি ট্রফি বা ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের বিভিন্ন ডিভিশনেও নিয়মিত খেলা শুরু করে আমেরিকা, কিন্তু ভালো ক্রিকেটারের অভাবে কোনোদিন বিশ্বকাপ জাতীয় কোনো টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়া হয়নি, ২০০৪ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যদিও খেলেছিল আমেরিকা, কিন্তু জঘন্য পারফরমেন্স করে।

এরপর ওই ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের বিভিন্ন ডিভিশনে খেলতে খেলতে ধীরে ধীরে উত্থান আমেরিকান জাতীয় দলের,২০১৯ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্ট্যাটাস পাওয়া আমেরিকার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়। এই স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে লাগে আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থা। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এইসব দেশের আমেরিকান পাসপোর্ট যুক্ত ক্রিকেটাররাও আমেরিকার হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন গ্যানোন, ইয়ান হল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্টি থেরন, যিনি আইপিএলেও খেলে গেছেন তিনিও যোগ দেন আমেরিকা দলে। সঙ্গে বার্বাডোজ, জামাইকার বেশ কিছু খেলোয়াড়কে পাশে পায় আমেরিকা, যেমন জেভিয়ার মার্শাল, যিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েও একদিনের ম্যাচ খেলেছেন, কিংবা এরোন জোন্স। বোলিং বিভাগে যুক্ত হয় এককালে ভারতের অনূর্ধ্ব – ১৯ দলে খেলা সৌরভ নেত্রাভালকার, যিনি কিনা মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিও খেলেছেন।

এর সাথে পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত আলী খান, যিনি ইতিমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এক পরিচিত নাম। ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলা ড্যান পিয়েটও আমেরিকার জার্সি গায়ে চাপাবেন, তার পাশাপাশি কোরি আন্ডারসন, সামি আসলামরা যদি আমেরিকার করীমা গোরে বা স্টিভেন টেলরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যান কিংবা নতুন বল হাতে আলী খানের সঙ্গী হন বিশ্বকাপজয়ী লিয়াম প্লাঙ্কেট, মন্দ হবে কি? ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ না হোক কুড়ি বিশের বিশ্বকাপে তো নতুন চমক হতেই পারে আমেরিকা! ক্রিকেট জগৎও নতুন এক শক্তির অপেক্ষায় থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link