কথায় আছে কারও পৌষ মাস, আর কারও সর্বনাশ। একদিকে কারও শিবিরে জয়োৎসব, আবার কারও শিবিরে পরাজয়ের গ্লানি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল এখন প্রাপ্তির আকাশে উড়ছে।
অন্যদিকে শিরোপার এত কাছে গিয়েও ছুঁতে না পারা পাকিস্থান, কিংবা আরেকটু দূর হতে শিরোপার স্বপ্ন লালন করা ভারতের জন্য কেবলই দীর্ঘশ্বাস বইছে। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ভারতকে এই সুযোগে যেন একহাত দেখে নিলেন। রীতিমত কড়া সমালোচনা যাকে বলে, তাই করলেন।
সাবেক ইংরেজ এই অধিনায়কের মতে, ভারত হল সাদা বলের ক্রিকেটে সবচেয়ে আন্ডারপারফর্মিং দল। এবারের আসরেও দলটির দৌঁড় ছিল কেবল সেমিফাইনাল অবধি। তাঁরা ফাইনালের মুখ দেখেনি এবারো। প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইসিসির কোন ইভেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।
ভারত ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। তারপর সেই যে ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছিল, এরপর আর কোনো বৈশ্বিক আসরের শিরোপা জেতা হয়নি ভারতীয়দের।
এরপর থেকেই যেন খরা চলছে ভারতীয় ক্রিকেটে। মাইকেল ভন ‘দ্য টেলিগ্রাফে’ লেখা নিজের কলামে ভারতকে তাঁদের অহংকার গ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসাথে ভারত দলটিকে নিজেদের উন্নতির জন্য ইংল্যান্ডকে অনুসরণ করার পরামর্শও দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তাছাড়া নিজ দলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের সাদা বলের এই দলটি অসাধারণ।’
একটু পেছনে তাকিয়ে দেখলে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসরের চ্যাম্পিয়ন দল ছিল ইংল্যান্ড। এইদিকে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলও তাঁরা। অর্থাৎ বর্তমানে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির সেরা দল হিসেবে সিংহাসন দখল করা দলটি, বুক ফুলিয়ে বলতেই পারে ক্রিকেটের সীমিত ফরম্যাটগুলোতে তাঁরাই বিশ্বসেরা দল।
সাদা বলের ক্রিকেটে গত পাঁচটি আইসিসি ইভেন্টে ইংল্যান্ড তিনবার ফাইনালে উঠেছে এবং তার মধ্যে দুটিতে শিরোপা জিতেছে। ধারাবাহিকভাবে দলটি ওয়ানডে এবং টি–টোয়েন্টি উভয় র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনের মধ্যে অবস্থান করছে এবং রীতিমত সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে মাইকেল ভন বলেছেন যে জস বাটলারের নেতৃত্বাধীন দলটি ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ফেভারিট দল হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দলটিকে নিয়ে মিডিয়া হাইপ এবং ফেবারিটিজমের সমালোচনা করেছেন। মাইকেল ভন বলেন, ‘আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ জয় করে জয়ের ধারা বজায় রাখা হল ইংল্যান্ডের পরবর্তী লক্ষ্য। তাঁদেরও আপনাকে ফেবারিট বলে মানতে হবে। যখন টুর্নামেন্ট শুরু হবে তখন লোকেরা দেশের মাটি বলে ভারতকে ‘ফেবারিট’ মানতে শুরু করবে। এটা ননসেন্স।’
তবে ভারত মাইকেল ভনের পরামর্শ ও সমালোচনায় কর্ণপাত করুক বা নাই করুক, অন্তত নিজেদের শিরোপা খরার একটা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে দলটিকে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে ছিটকে পড়ার যে সংস্কৃতি তৈরি করেছে দলটি, তার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে কেবল মিডিয়া হাইপেই তাঁরা যেকোনো ইভেন্টে তথাকথিত ‘ফেবারিট’ দল হবে, কিন্তু বাস্তবে পারফর্মেন্স সেই তকমার সাক্ষ্য বহন করবে না।