তাকে চাইলে আপনি মনে নাও রাখতে পারেন। তবে, এটা ঠিক যে, মনে রাখবার অনেকগুলো কারণ আছে। ইরানি ট্রফিতে চতুর্থ ইনিংসে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি, কোয়ার্টার ফাইনালের অনবদ্য ১৬০ কিংবা রঞ্জির ফাইনালে ম্যাচ জয়ী ৮৯ রানের ইনিংস সবগুলো স্মৃতিই আজও নস্টালজিক করে তোলে আশির দশকের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
তবে সব ছাপিয়ে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) অকশন রুমের সেই কয়েক ঘন্টার জন্য। তার নেয়া সিদ্ধান্তেই যে বদলে গিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংসের গতিপথ। ভারতীয় ক্রিকেটের বাঘা বাঘা সব সুপারস্টারের মাঝেও সর্বোচ্চ দাম দিয়ে বেছে নিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে, যার নেতৃত্বে পরবর্তী দশকের মাঝে চেন্নাই শিরোপা জিতেছিল চার বার।
সেই ধোনি কালক্রমে হয়ে উঠেছেন চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। তাসের দান উল্টে দেয়া এই ভদ্রলোকের নাম চন্দ্রশেখর, ভিবি চন্দ্রশেখর। পুরো নাম ভাক্কাদাই বিকেশ্বরণ চন্দ্রশেখর।
সতীর্থদের মাঝে চন্দ্রশেখরের খ্যাতি ছিল আমুদে, রসিক লোক হিসেবে যিনি কিনা ক্রিকেটটা খুব ভালো বুঝতে পারেন। খুব দ্রুতই ম্যাচের গতি প্রকৃতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে তার জুড়ি মেলা ভার। ক্রিকেটার, নির্বাচক এবং কোচ তিন ভূমিকাই পালন করেছেন ক্রিকেট জীবনে।
জহুরির চোখ দিয়ে চিনে ফেলতেন প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের। আজীবন থাকতে চেয়েছেন ক্রিকেটের সাথেই। সবকিছু থেকে অবসরের পর তাই কিনে ফেলেছিলেন একটা ক্রিকেট দলই।
মাদ্রাজে জন্ম নেয়া চন্দ্রশেখরের ক্যারিয়ার শুরু হয় তামিলনাড়ুর হয়ে। প্রথম দুই রঞ্জি মৌসুমেই দারুণ পারফরমেন্স করে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন এই ওপেনার। জাতীয় দলে ডাক পেতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি জাতীয় দলেও সতীর্থ কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্তের সাথে একসাথে ইনিংস শুরু করতেন। যদিও ঘরোয়ার পারফরম্যান্স জাতীয় দলে টেনে নিতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে মাত্র সাত ম্যাচেই শেষ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, যার মাঝে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৫৩।
জাতীয় দলে ব্রাত্য হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন দারুণ সব ইনিংস। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে কেরালার বিপক্ষে খেলেছিলেন ২৩৭ রানের চমৎকার এক ইনিংস। তামিলনাড়ুর অধিনায়ক হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন শেষে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন গোয়া’র হয়ে।
মাঠের খেলা ছাড়লেও ক্রিকেটকে একদম ছাড়তে পারেননি চন্দ্রশেখর। কোচ, নির্বাচক, ম্যানেজার, ধারাভাষ্যকার বিভিন্ন রূপে তিনি জড়িত ছিলেন ক্রিকেটের সাথেই। নির্বাচক প্যানেলে তিনি সেই সময় ছিলেন, যখন ভারতীয় ক্রিকেটে পালাবদল চলছে। জন রাইটের পর কোচ হিসেবে এসেছেন গ্রেগ চ্যাপেল।
২০১২ সালে তামিলনাড়ুর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান। যদিও খুব বেশিদিন সে দায়িত্বে ছিলেন না, বিজয় হাজারে ট্রফির ব্যর্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান এক বছরের মাথায়। ঘরোয়া এবং জাতীয়- দুই পর্যায়ের পালন করেছেন নির্বাচকের দায়িত্ব। শেষ জীবনে চেন্নাইতে নিজের একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।
তবে জীবনের শেষটা সুখকর হয়নি ভিবি চন্দ্রশেখরের। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের (টিএনপিএল) দল কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই দল চালাতে গিয়ে এক পর্যায়ে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি, কাঁধের উপর বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। ২০১৯ সালে চেন্নাইতে নিজ বাড়িতে আত্নহত্যা করেন তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি থেমেছিলেন পাঁচ হাজার থেকে এক রান আগেই, আর জীবন থামে ৫৮ তম জন্মদিনের ছয়দিন আগেই। চৌকস ক্রিকেটার, দক্ষ ম্যানেজার কিংবা ব্যর্থ দল মালিক সবকিছু ছাপিয়ে ভিবি চন্দ্রশেখর স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ২০০৮ আইপিএল নিলামের সেই কয়েক ঘন্টার জন্য।