নিস্তেজ ক্যারিয়ারের বিক্রম

জ্যাক ক্যালিসের খানিক ফুল লেন্থের এক বল, সোজা স্ট্যাম্প বরাবর ধাবিত হচ্ছে। হালকা পায়ের নাড়াচাড়া, ব্যাটে-বলের দারুণ সংযোগ। মিড অন দিয়ে ছুটে গেল বল। ছুঁয়ে মিল সীমানা দড়ি। আর নামের পাশে যুক্ত হয়ে গেল তিন অংকের সেই ম্যাজিক ফিগার। সেবারই প্রথমবারের মতো বিক্রম সোলাঙ্কি করেছিলেন সেঞ্চুরি। এরপর আরও একবার তিনি ছুঁয়ে দেখেছিলেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার।

বিক্রম সোলাঙ্কিকে চাইলে ভারতীয়ও বলা যায়। জন্ম ভারতের রাজস্থানে। ১৯৭৬ সালের পহেলা এপ্রিল উদয়পুরে জন্মেছিলেন তিনি। তবে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে রয়েছে। ইংল্যান্ড। সেখানেই তিনি নিজেকে শানিত করেছেন ক্রিকেটের নানান রকম শৈলী। সেখানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন ইংল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে খেলার।

সে অপেক্ষা ঘুচতে বেশ একটা লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন ১৯৯৩ সালে আর প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটটা শুরু করেছিলেন ১৯৯৫ সালে। প্রায় সাত কিংবা পাঁচ বছর তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ইংল্যান্ডের সেই বাউন্সি সব উইকেটে খেলে নিজেকে শাণ দিয়েছেন।

হয়ত খুব অপেক্ষায় ছিলেন ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাটটায় তিনি বনেদী দলের হয়ে ক্রিকেট খেলতে নামবেন। ঐতিহাসিক লর্ডসের বাইশ গজে তিনি নামবেন সাদা পোশাকে। যে পোশাকটায় রক্ত, ঘাম কিংবা ধুলা সব স্পষ্ট বোঝা যায়। যে জার্সিটা গায়ে জড়ালে নিজেকে সবার থেকে আলাদা মনে হয়। সাদা রঙের সে জার্সিটা যে আলাদা এক গর্ব, অহম বয়ে নিয়ে আসে। আফসোস ইংল্যান্ডে হয়ে সে সাদা জার্সিটা পড়া হয়নি বিক্রমের।

অথচ প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ১৮ হাজারের বেশি রান রয়েছে তাঁর। সেখানে ৩৪ খানা শতকও রয়েছে। লাল বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ না পেলেও তিনি ইংল্যান্ডের রঙিন পোশাক পরে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন ২০০০ সালের ২৩ জানুয়ারি। নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারেননি তিনি। সে বছর সাত ম্যাচ খেলে তাঁর সর্বোচ্চ রান ছিল ২৪। একজন উদ্বোধনী ব্যাটারের কাছ থেকে আর যাই হোক এমন পারফর্মেন্স নিশ্চয়ই আশা করে না ইংল্যান্ড।

যা হবার ছিল তাই হল। বাদ পড়ে গেলেন তিনি জাতীয় দল থেকে। ২০০৩ বিশ্বকাপটাও খেলা হয়নি তাঁর। প্রায় তিন বছর তিনি জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। এ সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন। নিজেকে আরও বেশি পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। সুফল মেলে এবং একটা লম্বা সময়ের জন্যে মেলে। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর ইংল্যান্ডের দলের বেশকিছু খেলোয়াড় অবসর চলে যাওয়ায় একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়।

সে শূন্যস্থান পূরণে বিক্রম সোলাঙ্কি ছিলেন প্রথম পছন্দের একজন। তিনি ফিরে এলেন জাতীয় দলে। এবার যেন বোর্ড তাঁকে একটা লম্বা সময় সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ছিল। ২০০৩-২০০৬ টানা তিন বছর তাঁর কাঁধে অর্পিত ছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংস শুরু করার দায়িত্ব। এটাই যেন ছিল তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে লম্বা এবং সর্বশেষ সুযোগ।

তিনি কাজে লাগানোর চেষ্টাটা করে গেছেন। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা এ সময়েই এসেছিল। তাও আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ১০৬ রানের সেই ইনিংসটা বিক্রম সোলাঙ্কির দক্ষতার একটা চিহ্ন মাত্র। সেদিন কি দূর্দান্ত সব শট খেলেছিলেন তিনি। তাছাড়া বাইশ গজে সেদিন যেন সবচেয়ে সাবলীল ছিলেন বিক্রম। মাঠের চারপাশে দারুণ সব শট খেলেছেন, ব্যাটে-বলে সংযোগও হয়েছে ঠিকঠাক।

এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন শত রানের একটি ইনিংস। তাছাড়া ৪৫ ম্যাচের টানা ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পাঁচ বার অর্ধশতকও হাঁকিয়েছিলেন বিক্রম। কিন্তু এই সামান্য অর্জনে তো আর যাই হোক ইংল্যান্ডের মত একটা দলের প্রতিনিধিত্ব করার সময় খুব বেশি লম্বা হয়না। বিক্রমের ক্ষেত্রেও হল তাই। ২০০৬ সালে বাদ পড়ে গেলেন জাতীয় দলের থেকে। অপরদিকে ঘটলো উল্টো ঘটনা।

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডে ঘরোয়া লিগের দল ওর্সেস্টারশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে যান তিনি। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতা অন্তত সে পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ২০১০ সাল অবধি তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বিঘ্নে। এরও বছর পাঁচেক অবধি ক্রিকেটটা চালিয়ে যান বিক্রম সোলাংকি। মাঝে ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলে ফেলেন।

নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি বিক্রম সোলাঙ্কি। তবে ধারণা করা হয় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সুযোগ তিনি পাননি। তবে সে যাই হোক তিনি শেষবারের মতো ক্রিকেটের অলংকারের সজ্জিত হয়ে মাঠে নেমেছিলেন আগস্টের ১৮ তারিখ। সালটা ২০১৫।

এরপর ক্রিকেট খেলা ছেড়েছেন ঠিক তবে ক্রিকেট ছাড়েননি। বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নবাগত দল গুজরাট টাইটান্সের  ক্রিকেট ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বলেছিলাম না, চাইলে তাঁকে আপনি ভারতীয়ও বলতে পারেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link