গুঞ্জনে ভারী হয়ে উঠেছিল আকাশ, এই বুঝি বিদায় বলে বসেন। কেউ বলেছিল এটাই লাস্ট ড্যান্স, কারো মনে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, অবসর নিতে বুঝি বাধ্য করা হবে – তবে সেরকম কিছু হলো না, শঙ্কার মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরার আগেই উড়ে গেলো বহুদূরে। রোহিত শর্মার সহজ স্বীকারোক্তি, ওয়ানডে ক্রিকেট ছাড়ছেন না এখনি।
বিরাট কোহলিও থাকছেন আপাতত, দু’জনেই তাকিয়ে আছেন ভবিষ্যতের দিকে। কি হয় আগামী দিনে সেটার ওপর নির্ভর করছে বাকি সব। এখন তো কেবল উদযাপনের পালা; এগারো বছরের ট্রফি খরা কেটেছিল ২০২৪ সালে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল রোহিত-কোহলিরা। সেটার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটা বৈশ্বিক শিরোপা ঘরে তুললো দলটা।
কিন্তু ক্রিকেটের মত খেলায় আবেগের জায়গা আসলে কতটুকু? উদযাপন করার অবকাশও বা কতখানি। একটা টুর্নামেন্ট জিতে আসার আগেই পরের টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা শুরু করতে হয়, এই যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে এখন থেকে দল গুছাতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ঘিরে ভাবনা কি ম্যানেজম্যান্টের?
ফর্ম নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। পরিসংখ্যানের চেয়ে ইম্প্যাক্টে মনোযোগী হয়ে উঠা হিটম্যান তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেই ম্যাচসেরা হয়েছেন। আবার সেমিফাইনালের ভাগ্য নির্ধারক ছিলেন বিরাট – ভারতীয় একাদশে তাঁদের জায়গা পাওয়া নিয়ে সত্যিই কোন সন্দেহ নেই। বড় মঞ্চে তাঁরাই ড্রেসিংরুমের সবচেয়ে বড় ভরসা।
কিন্তু সমস্যা দু’জনের বয়স; আগামী বিশ্বকাপ আসতে আসতে রোহিতের বয়স চল্লিশের গন্ডিতে পা রাখবে, অন্যদিকে কোহলি প্রস্তুতি নিবেন উনচল্লিশতম জন্মদিনের। সেক্ষেত্রে কি ভারত বিশ্ব মঞ্চে ডেকে নিবে তাঁদের? যদি না নেয়, তাহলে এখনি বিদায় বলে দেয়া ভাল; নয়তো নির্বাচকরা দল গুছাবেন কি করে।
অজিত আগারকারকে তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুতই, কিন্তু উদযাপনের মৌসুমে এসব নিয়ে আলোচনা করাটাও তো বেমানান। তাই আবেগ আর বাস্তবতার মাঝামাঝি একটা জায়গা খুঁজে নিতে হবে; সিদ্ধান্ত যাই আসুক সেটা যেন বাস্তবসম্মত হয় এবং একইসাথে দুই কিংবদন্তির জন্য সম্মানজনক হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
এতটুকু আসলে প্রাপ্য তাঁদের, দেশের ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ব্যাটার তাঁরা। দু’জনের মোট সেঞ্চুরি আছে ৮৩টা, তবে তাঁদের মিলিত অবদান এই ৮৩ এর কয়েক গুণ। ডেডিকেশন, কমিটমেন্ট আর পরিশ্রমে তাঁরাই সেরা উদাহরণ।
ভারতীয় ক্রিকেটের দুই নক্ষত্রের শেষটা তাই সুন্দর হওয়া বড্ড জরুরি। হেডকোচ গৌতম গম্ভীর কিংবা নির্বাচক আগারকার যাই করবেন সেটা করতে হবে যত্নের সাথে, সম্মানের সাথে। অন্তত এই দুজনের বেলায় বিন্দুমাত্র অবহেলা মেনে নিবে না ক্রিকেটপ্রেমীরা।